ইরানের স্বার্থে ইসরায়েল আঘাত করলে কঠোর পদক্ষেপ: তেহরান

ইরানের পতাকা।ছবি: রয়টার্স

ইরানের কোনো স্বার্থে ইসরায়েল আঘাত হানলে ছাড় নয়। তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ও সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইসরায়েল যদি তেহরানের বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত কোনো পদক্ষেপ’ নেয়, তাহলে তাৎক্ষণিক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের জবাব দেওয়া হবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এনবিসি নিউজকে গত শুক্রবার দোভাষীর মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

ইরান ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর শুক্রবার ভোরে ইরানের ইস্পাহানে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান। ইরানে এসব হামলা করেছে ইসরায়েল। যদিও ইরানের দাবি, বিদেশ থেকে এসব হামলা হয়নি। ‘অনুপ্রবেশকারীরা’ এই হামলা চালিয়েছে।

ওই ঘটনার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধ ঠেকাতে ইরান ও ইসরায়েলকে বিভিন্ন দেশ সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিল ইরান।

ইরানে ইসরায়েলের হামলা চালানোর খবরের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইসরায়েল যদি আরেকবার দুঃসাহস দেখায় ও ইরানের স্বার্থবিরোধী কাজ করে, তবে আমাদের পরবর্তী জবাব হবে তাৎক্ষণিক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ের।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির বলেন, ‘গত রাতে (শুক্রবার ভোর চারটার দিকে) যা হয়েছে, সেটা কোনো হামলা ছিল না। এ ঘটনায় কয়েকটি কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করা হয়, যা খেলনার পর্যায়ের। ইরানে আমাদের অনেক শিশু এসব কপ্টার নিয়ে খেলা করে। ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যদি কোনো দুঃসাহস না দেখায়, তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে না। কিন্তু ইরানের কোনো স্বার্থে আঘাত হানলে কঠোর জবাব দেবে তেহরান।’

১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এ হামলার বদলা হিসেবে ১৩ এপ্রিল রাতে একযোগে ১৭০টি ড্রোন, ১২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ৩০টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় ইরান। এর পর থেকে ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর হুমকি দিচ্ছিল ইসরায়েল। কিন্তু ইরানে বিস্ফোরণের পর ইসরায়েল নিশ্চুপ।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর কর্মকর্তাদের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। কারণ, এসব ক্ষেপণাস্ত্রে ইরানের রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার মতো প্রযুক্তি ছিল।

চুপ মার্কিন কর্মকর্তারা

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট–এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবর নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য না করতে মার্কিন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা দপ্তর, পররাষ্ট্র দপ্তর এবং অন্য সংস্থার কর্মকর্তারা এই হামলা নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন, এ প্রসঙ্গে কথা না বলতে সরকারিভাবে তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তাদের ধারণা, পাল্টাপাল্টি হামলার চক্রটি শুক্রবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। শুক্রবার ইতালিতে সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও ইরানে হামলা নিয়ে কিছু বলতে চাননি।

ইরাকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীর ওপর হামলা

ইরাকে ইরান–সমর্থিত একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোররাতে পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেসের (পিএমএফ) একটি সামরিক ঘাঁটিতে এই হামলায় একজন নিহত ও অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।

পিএমএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে কালসু নামে তাদের সামরিক ঘাঁটিতে এ হামলা হয়। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালিয়েছে। যদিও পিএমএফের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালায়নি। অভিযোগ সত্য নয়।

ইরাকের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলার সময় ও এর আগে ওই ঘাঁটির আশপাশে কোনো যুদ্ধবিমান বা ড্রোন উড়তে দেখা যায়নি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত করছে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী ইরাকের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট দ্য ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স জানিয়েছে, ইরাকে হামলার জবাবে গতকাল ইসরায়েলের বন্দরনগরী এলিয়াতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে তারা। গত অক্টোবরে ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার হামলা শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্থাপনা ও ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে এই জোট। গত ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়া সীমান্তবর্তী জর্ডানে একটি ঘাঁটিতে তাদের হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হন।