গাজায় আল-শিফা হাসপাতাল ঢুকতে বা বেরোতে গেলে গুলি করছে

অভ্যন্তরীন বাস্তুচ্যুত অনেকেই ঠাঁই নিয়েছেন আল–শিফা হাসপাতালে। গাজা সিটি, ৮ নভেম্বর,২০২৩ছবি: রয়টার্স

উত্তর গাজার আল-শিফা হাসপাতালের চারপাশ ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি ট্যাংক। ফলে হাসপাতালটিতে কেউ ঢুকতে বা সেখান থেকে বের হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চারজন বের হতে গেলে তাঁদের পায়ে গুলি করা হয়। তাঁরা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে প্রায় দুই ঘণ্টা পড়ে ছিলেন।  

হাসপাতালের ভেতর থেকে এক ব্যক্তি ফোনে গাজায় থাকা বিবিসির সাংবাদিক রুশদি আবু আলউফকে বলেন, হাসপাতালকে ঘিরে আতঙ্ক ও উত্তেজনা আগের মতোই। রাতভর বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পেয়েছেন।  

উল্লিখিত ব্যক্তি বলেন, হাসপাতালের এক কম্পাউন্ড থেকে অন্য কম্পাউন্ডে যাওয়াও এখন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ।  এখানে বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই এমনকি পর্যাপ্ত ওষুধও নেই। এ অবস্থায় রোগীরা মারা যাচ্ছেন।

তবে হাসপাতালের ভেতরে থাকা এক সাংবাদিক বিবিসির এই প্রতিবেদককে বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় কোনো লোকজন, কোনো ধরনের সাহায্য হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই সাংবাদিক আরও বলেন, গতকাল সোমবার চারজন হাসপাতাল থেকে বের হতে চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় তাঁদের পায়ে গুলি করা হয়। তাঁরা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে প্রায় দুই ঘণ্টা পড়ে ছিলেন। পরে চিকিৎসকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে আসেন।

গতকাল ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্ক রেজেভ বলেন, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী গত রোববার শিফাতে ৩০০ লিটার জ্বালানি পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু হামাস তা নিতে রাজি হয়নি।

হাসপাতালের ভেতরে থাকা ওই ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে বলেন, ওই জ্বালানিতে মাত্র আধা ঘণ্টা চলবে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য এক দিনে অন্তত ১০ হাজার লিটার জ্বালানি প্রয়োজন হয়।’

ইসরায়েলের দাবি ওই হাসপাতালের নিচে হামাসের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র আছে। সেখান থেকে তারা তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। তবে হামাস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলের এমন দাবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসপাতালের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালে শতবার এসেছি। আমি এখানে জন্মেছি, আমার ছেলেও এখানে জন্মেছে। আমার মা তাঁর জীবনের শেষ দুই মাস এখানে ছিলেন। তাঁর কিডনির ডায়ালাইসিস হতো। আমি প্রতিদিন এখানে মাকে দেখতে আসতাম। হাসপাতালের ভবনের মাটির নিচের কিছু আছে, এটি যাচাই করা কঠিন। আমি কোনো দিন এখানে সামরিক কোনো কর্মকাণ্ড দেখেনি।’

ইসরায়েলের এই দাবি মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গাজী হামাদ বলেন, ‘ইসরায়েলের এই দাবি ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার’। দখলকারী এই বাহিনীর নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবে না। আমরা কখনো সাধারণ মানুষকে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করিনি। কারণ, এটি আমাদের ধর্মের বিরোধী।’

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদ্রা বলেন, হাসপাতালের নিরপেক্ষতা যাচাই করতে বারবার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে; কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি।

অর্ধেকের বেশি হাসপাতাল অচল

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘জ্বালানির অভাবের পাশাপাশি, হামলা, অনিরাপত্তা ও ক্ষয়ক্ষতির ভয়ে’ গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ২২টি এখন অচল হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘চালু থাকা ১৪টি হাসপাতালে গুরুতর এবং জীবন রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক অস্ত্রোপচারগুলো অব্যাহত রাখা এবং নিবিড় পরিচর্যাসহ ভর্তি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য নামমাত্র সরবরাহ আছে।’