পশ্চিম তীরেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে

স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে খাবার সংগ্রহে লাইনে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুরা। গতকাল দক্ষিণ গাজার রাফায়ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। পাশাপাশি গত কয়েক দিন দখল করা পশ্চিম তীরেও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সর্বশেষ গতকাল বুধবার বালাতা ও তুলকারেম শরণার্থীশিবিরে পৃথক ড্রোন হামলায় সাত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে পশ্চিম তীরেও ‘বিস্ফোরক পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে বলে দুদিন আগে মন্তব্য করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এ অবস্থায় গাজা থেকে সরিয়ে এলিট বাহিনীর একটি শাখা সেখানে মোতায়েন করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, দখলদার বাহিনীর বোমা হামলায় নিহত চারজনকে তুলকারেম শরণার্থীশিবিরের ভেতর থেকে তাদের উদ্ধারকারী দল গাড়িতে করে নিয়ে আসে। এ ছাড়া বালাতা শরণার্থীশিবিরে ড্রোন হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর পশ্চিম তীরেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ৩৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৯৫ জনই শিশু। আহত হয়েছেন প্রায় চার হাজার।

এ ছাড়া পশ্চিম তীর থেকে আরও ৮৫ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে পশ্চিম তীরে কাজ করা গাজার ৪০ বাসিন্দাও রয়েছেন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবরের পর পশ্চিম তীরে কমপক্ষে ছয় হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করল ইসরায়েল।

এদিকে গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গত ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর দক্ষিণ গাজায় মঙ্গলবার রাতে সবচেয়ে মারাত্মক হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার বেশ কিছু বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হন।

গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ১৬৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩৫০ জন। এ নিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ২৪ হাজার ৪৪৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৬১ হাজারের বেশি।

জিম্মিদের ওষুধ সরবরাহে চুক্তি

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে কাতার ও ফ্রান্স। চুক্তির আওতায় হামাসের হাতে জিম্মি থাকা প্রায় ৪৫ জন ইসরায়েলির জন্য জরুরি ওষুধ পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে গাজা উপত্যকায় চরম ঝুঁকিতে থাকা বেসামরিক মানুষদের জন্য পাঠানো হবে ত্রাণ ও চিকিৎসাসহায়তা।

দেশ দুটি জানিয়েছে, এসব সহায়তাসামগ্রী গতকাল কাতার থেকে মিসরে পাঠানো হয়। এরপর রাফা সীমান্ত ক্রসিং পেরিয়ে সেগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই চুক্তির অর্থ হলো, গাজার সবচেয়ে আক্রান্ত ও ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোয় বেসামরিক মানুষদের মধ্যে ওষুধ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তাসামগ্রী বিতরণ করা হবে। বিপরীতে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হবে।

চুক্তির বিস্তারিত তুলে ধরে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক বলেন, ইসরায়েলি বন্দীদের এক বাক্স ওষুধ সরবরাহের বিনিময়ে গাজার বাসিন্দাদের এক হাজার বাক্স ওষুধ দেওয়া হবে।

বন্দিবিনিময় নিয়ে আলোচনা

বন্দিবিনিময় নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন করে ‘জোরালো ও নিবিড় আলোচনা’ চলছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ব্রেট ম্যাকগার্ক বন্দিবিনিময় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে কাতারের রাজধানী দোহায় রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কারবি এসব কথা বলেছেন।

কারবি বলেন, ‘আমি আপনাদের যা বলতে পারি সেটা হলো, আমরা এ বিষয়ে খুব পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করছি। আমি বলব, আমরা আরেকটি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে কাতারে খুব জোরালো ও নিবিড় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশাবাদী, এটি ফল দিতে পারে এবং শিগগিরই সেটা হতে পারে।’

এদিকে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি ‘খুবই হতাশাজনক’। নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষায় ফিলিস্তিনিদের একটি রাষ্ট্র প্রয়োজন।

যেকোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করতে হবে জানিয়ে ব্লিঙ্কেন বলেন, কেবল ইসরায়েলের সাহায্য নিয়েই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কার্যকরভাবে এ ধরনের একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে, তাদের বিরুদ্ধাচরণ করে নয়।