বাশারকে রক্ষায় পুতিন আর আগ্রহী ছিলেন না: ট্রাম্প

বাশার আল–আসাদের দেশত্যাগের খবরে আনন্দ-উল্লাস। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ফাতিহ মসজিদ এলাকায়, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪ছবি : এএফপি

বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ আজ রোববার সকালে রাজধানী দামেস্ক থেকে উড়োজাহাজে করে দেশত্যাগ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তাঁর ২৪ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। তাঁর দুই যুগের শাসনের প্রায় ১৪ বছরই চলছিল নির্মম এক গৃহযুদ্ধ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাশারের পতনের মধ্য দিয়ে মূলত আসাদ পরিবারের টানা অর্ধশতাব্দীর শাসনের অবসান ঘটেছে।

বাশারের পতনের পর দেশটির রাজধানী দামেস্কসহ সিরিয়ার শহরগুলোতে আনন্দ-উল্লাস চলছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বিশেষ এ মুহূর্ত ঘিরে নিজেদের মনোভাব জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বনেতারা।

জো বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দপ্তর হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও তাঁর দল সিরিয়ার বিশেষ এই ঘটনাপ্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছেন।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে লিখেছেন, ‘আসাদের বিদায় হয়েছে। তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাঁর রক্ষাকারী ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া তাঁকে আর রক্ষা করতে আগ্রহী ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া ও ইরান এখন দুর্বল রাষ্ট্র। প্রথমত, ইউক্রেন ও বাজে অর্থনীতির কারণে। অন্যটি ইসরায়েল ও দেশটির (ইসরায়েল) সফল যুদ্ধের কারণে।’

তুরস্ক

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান কাতারের রাজধানী দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সিরিয়া এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সিরিয়ার জনগণ নিজ দেশের ভবিষ্যৎ গঠন করবে। আজ সেখানে আশা দেখা যাচ্ছে।

সিরিয়ার ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার বিষয়ে তুরস্ক গুরুত্ব দিচ্ছে জানিয়ে হাকান ফিদান বলেন, ‘সিরিয়ার নতুন প্রশাসন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হতে হবে। প্রতিহিংসার আকাঙ্ক্ষা রাখা যাবে না। সব পক্ষকে বিচক্ষণতা ও সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে পরিস্থিতির সুযোগ নিতে দেওয়া যাবে না। বিরোধীদের এক হতে হবে। আমরা সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করব।’

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, নতুন সিরিয়া থেকে প্রতিবেশীদের প্রতি যাতে কোনো হুমকি তৈরি না হয়। বরং তাদের উচিত হবে সব হুমকি দূর করা। নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পিকেকেকে (কুর্দিদের রাজনৈতিক দল) সিরিয়ায় বৈধ পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।

রাশিয়া

বাশারের পদত্যাগ ও দেশত্যাগের কথা নিশ্চিত করেছে তাঁর দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া। তবে তিনি কোন দেশে গেছেন, তা মস্কো জানায়নি।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘বাশার আল-আসাদ ও সিরিয়ার সংঘাতে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে তিনি (বাশার) প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য তিনি নানা নির্দেশনা দিয়েছেন।...রাশিয়া এসব আলাপে অংশ নেয়নি।’

ইসরায়েল

ইসরায়েলের প্রবাসীবিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি বলেছেন, সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা তাঁর দেশের জন্য উদ্‌যাপনের কোনো কারণ নয়। তিনি অধিকৃত গোলান মালভূমির মাউন্ট হেরমনে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ নতুন করে শক্তিশালী করতে এবং সিরিয়ার সঙ্গে ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতির আলোকে নতুন একটি প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

আমিচাই চিকলি ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম হাইয়োমকে বলেন, ‘সিরিয়ার বেশির এলাকা বর্তমানে আল-কায়েদা ও আইএসআইএলের (আইএসআইএস) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে।’

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে সিরিয়ার গোলান মালভূমি অঞ্চলের বেশির ভাগ দখল করে নেয়। ১৯৮১ সালে তা নিজেদের ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করে।

বিদ্রোহীদের হাতে বাশার আল-আসাদের পতনের পর মুখে সিরিয়ার বিরোধী দলের পতাকা এঁকে উল্লাস প্রকাশ এক সিরীয় নারীর। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের ফাতিহ মসজিদ এলাকায়, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪
ছবি : এএফপি

কাতার

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের উৎখাত ও রাজধানী দামেস্ক নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে বিদ্রোহীরা। এখন দেশটিকে কোনোভাবেই বিশৃঙ্খলায় পড়তে দেওয়া যাবে না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, কাতার সিরিয়ার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশৃঙ্খলার হাত থেকে বাঁচাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা এবং রাষ্ট্রের ঐক্য বজায় রাখার বিষয়কে গুরুত্ব দেয় কাতার।

সংযুক্ত আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা আনোয়ার গার্গাশ বাহরাইনে নিরাপত্তাবিষয়ক ফোরাম মানামা ডায়ালগে বলেছেন, (সিরিয়ায়) রাষ্ট্রবহির্ভূত পক্ষগুলোকে রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিতে দেওয়া যাবে না। সিরিয়ায় এখন যেসব ঘটনা ঘটছে, তা রাজনৈতিক ব্যর্থতা, সংঘাত ও বিশৃঙ্খলার ধ্বংসাত্মক চিত্রের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

চীন

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সিরিয়ার ঘটনাপ্রবাহ বেইজিং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বেইজিং আশা করে, সিরিয়ায় যত দ্রুত সম্ভব স্থিতিশীলতা ফিরবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সিরিয়ায় অবস্থানকারী চীনের নাগরিকদের নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল উপায়ে দেশটি ত্যাগের জন্য চীন সরকার সক্রিয়ভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ায় অবস্থানকারী চীনা নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা সিরিয়ার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে চীনা ইনস্টিটিউশন ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানাচ্ছি। এখন পর্যন্ত সিরিয়ায় অবস্থিত চীনের দূতাবাস নিরাপদ রয়েছে।’