জোহরান কোয়ামে মামদানি নামের অর্থ কী, কেন এত তাৎপর্য

নিউইয়র্কের নতুন মেয়র জোহরান মামদানিছবি: এএফপি

জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হিসেবে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসে। ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত যে নির্বাচনে তিনি জিতেছেন, তা বিশ্বব্যাপী নজর কেড়েছে।

৩৪ বছর বয়সী মামদানি ১৮৯২ সালের পর থেকে নিউইয়র্ক শহরের সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র হচ্ছেন। স্বল্পপরিচিত একজন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামার পর তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পান। নিউইয়র্কবাসীর সাশ্রয়ী জীবনযাপনের প্রতিশ্রুতিকে সামনে রেখে প্রচার চালান তিনি। এর মধ্যে রয়েছে বাড়িভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত রাখা, ফ্রি বাস ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা। এ কারণে বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।

অভিবাসী পটভূমি থেকে নিউইয়র্কে আসা অনেক মানুষের জন্যও এক প্রতীক হয়ে উঠেছেন জোহরান মামদানি।

২০১৮ সালের মধ্যে জোহরান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু উগান্ডার নাগরিকত্বও রাখেন। তিনি এখনো নিয়মিতভাবে তাঁর পরিবারসহ উগান্ডা সফর করেন। অতি সম্প্রতি, জুলাইয়ে রমা দুওয়াজির সঙ্গে তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করতে উগান্ডায় গিয়েছিলেন।

গত জুনে ডেমোক্রেটিক পার্টির বিতর্কে জোহরান মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো একাধিকবার তাঁর নামের ভুল উচ্চারণ করেছিলেন।

‘নাম হলো মামদানি, এম–এ–এম–ডি–এ–এন–আই, আপনাকে এটি ঠিকভাবে উচ্চারণ করা শিখতে হবে। কারণ, আমাদের শুদ্ধ করে বলতে হবে,’ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বিতর্কে কুমোকে বলেন মামদানি।

কিন্তু মামদানি নামের অর্থ এবং জোহরান কোয়ামে মামদানির পুরো নামের তাৎপর্য কী?

কোথা থেকে এসেছেন জোহরান মামদানি

জোহরান মামদানি উগান্ডায় ভারতীয় মা–বাবার সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন। উগান্ডা ও যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক তাঁরা।

জোহরানের জন্ম উগান্ডায়। শিশু মামদানি বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। সাত বছর বয়সে মা–বাবার হাত ধরে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন। বাবার নাম মাহমুদ মামদানি। তিনি ভারতে জন্ম নেওয়া উগান্ডার শিক্ষাবিদ ও নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। জোহরানের মা মিরা নায়ার বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা। জোহরানের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন তাঁর পরিবার উগান্ডা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় চলে যায়। সেখান থেকে নিউইয়র্ক।

২০১৮ সালের মধ্যে জোহরান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু উগান্ডার নাগরিকত্বও রাখেন। তিনি এখনো নিয়মিতভাবে তাঁর পরিবারসহ উগান্ডা সফর করেন। অতিসম্প্রতি, জুলাইয়ে রমা দুওয়াজির সঙ্গে তাঁর বিয়ের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করতে উগান্ডায় গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

মামদানির নামের অর্থ

জোহরান কোয়ামে মামদানি—নামটি নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরানের বহুসাংস্কৃতিক পরিচয়কে প্রতিফলিত করে।

জোহরানের বংশনাম ‘মামদানি’। এটি একটি সাধারণ গুজরাটি নাম, যা মুসলিমদের একটি সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ইসলামি নাম।

ব্যুৎপত্তিগতভাবে মামদানি প্রায় ‘মোহাম্মাদান’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অনুসারীদের বহুল ব্যবহৃত একটি নাম। মামদানির প্রথম নাম ‘জোহরান’ আরবি ও ফারসি উভয় উৎস থেকে আসা। এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে, যেমন ‘আলো’, ‘জ্যোতি’, ‘ফুল ফোটা’।

ব্যুৎপত্তিগতভাবে মামদানি প্রায় ‘মোহাম্মাদান’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অনুসারীদের বহুল ব্যবহৃত একটি নাম। মামদানির প্রথম নাম ‘জোহরান’ আরবি ও ফারসি উভয় উৎস থেকে আসা। এর বিভিন্ন অর্থ রয়েছে, যেমন ‘আলো’, ‘জ্যোতি’, ‘ফুল ফোটা’।

জোহরানের মধ্যনাম কোয়ামে। এটি আকা জনগোষ্ঠীর একটি ঐতিহ্যবাহী নাম। আকা জনগোষ্ঠী মূলত ঘানায় বাস করে এবং পশ্চিম আফ্রিকার আইভরিকোস্ট ও টোগোর কিছু অংশেও দেখা যায়।

মামদানির বাবা ঘানার মুক্তিযোদ্ধা কোয়ামে নক্রুমাহকে খুব পছন্দ করেন। নক্রুমাহ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই পরিচালনা করেছিলেন এবং ১৯৫৭ সালে ঘানার প্রথম প্রেসিডেন্ট হন।

আরও পড়ুন

মধ্যনাম কোয়ামের তাৎপর্য

আকা জনগোষ্ঠীর ভাষায় কোয়ামে নামের অর্থ ‘শনিবারে জন্ম নেওয়া’। এটি ‘জ্ঞান’ ও ‘নেতৃত্ব’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

সাধারণ অর্থের বাইরে কোয়ামে নামটি ঘানার বিপ্লবী কোয়ামে নক্রুমাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ১৯৫৭ সালের মার্চে ব্রিটিশ শাসনের অধীন থাকা সাব-সাহারা আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে ঘানা স্বাধীনতা লাভ করে। এই স্বাধীনতাসংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কোয়ামে নক্রুমাহ। তিনি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও পরে প্রথম প্রেসিডেন্ট হন। তবে ১৯৬৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁকে উৎখাত করা হয়।

কোয়ামে নক্রুমাহ আফ্রিকা মহাদেশে প্যান-আফ্রিকানিজমের একজন প্রভাবশালী প্রচারক ছিলেন। এ মতবাদ আফ্রিকার দেশগুলোর ঐক্য ও আফ্রিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে সংহতি বজায় রাখতে উৎসাহিত করে, যা ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনকালে আফ্রিকাকে ভাগ করার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।

১৯৬৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর নক্রুমাহ নির্বাসনে জীবন কাটিয়েছিলেন এবং গিনিতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭২ সালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আরও পড়ুন