পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা আর প্রাসঙ্গিক নয়: ইরান
জাতিসংঘের পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা তাঁর দেশের জন্য আর ‘প্রাসঙ্গিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।
গতকাল রোববার ইরানের পররাষ্টমন্ত্রী বলেন, ‘কায়রোতে আইএইএর সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তা আর প্রাসঙ্গিক নয়।’
গত মাসে কায়রোতে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। চুক্তিতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পে আইএইএর পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ বিষয়ে একটি নতুন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছিল। জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছিল তেহরান।
পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে ইরানের ওপর অস্ত্র ও অন্যান্য যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে, গত সপ্তাহে সেগুলো পুনর্বহালের ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের এ উদ্যোগ নেয়। ২০১৫ সালে যেসব দেশ ইরানের সঙ্গে ‘ইরান পারমাণবিক চুক্তিতে’ স্বাক্ষর করে তাদের মধ্যে এই তিন দেশও রয়েছে।
এসব দেশ এখন তেহরানের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ তেহরান প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই তিন ইউরোপীয় দেশ মনে করেছিল, তাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে, তাই তারা (নিষেধাজ্ঞা) পুনর্বহালের হুমকি দিচ্ছিল। এখন তারা ওই ক্ষমতা ব্যবহার করে ফেলেছে এবং ফলাফল দেখেছে
গতকাল রোববার তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে আরাগচি আরও বলেন, এই তিন ইউরোপীয় দেশ মনে করেছিল, তাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে। তাই তারা (নিষেধাজ্ঞা) পুনর্বহালের হুমকি দিচ্ছিল। এখন তারা ওই ক্ষমতা ব্যবহার করে ফেলেছে এবং ফলাফল দেখেছে। এই তিন ইউরোপীয় দেশ স্পষ্টভাবে তাদের গুরুত্ব কমিয়ে এনেছে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা করার যুক্তি প্রায় শূন্যে নামিয়ে দিয়েছে।
আরাগচি আরও বলেন, ভবিষ্যতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো আলোচনায় ইউরোপীয় এই তিন দেশের ভূমিকা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ হবে।
দ্বিচারিতা
তেহরান আইএইএর বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ করেছে। তারা বলেছে, সংস্থাটি পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ চুক্তির (এনপিটি) আওতায় দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশগুলো বহুদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তাদের এই দাবির ইন্ধনদাতা ইসরায়েল। তেহরান সব সময় তাদের ওই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, তাদের পারমাণবিক প্রকল্পের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে বেসামরিক। এনপিটির অধীনে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের রয়েছে।
ইরানের পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য এনপিটি চুক্তি থেকে সম্পূর্ণ সরে আসার প্রস্তাব তুলেছিলেন। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ চুক্তির শর্ত অনুসরণ করে যাবে।