সৌদি আরবকে কি ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ দেবেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে ইসরায়েলের ‘গুণগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ (কিউএমই) বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন এবং আরব কর্মকর্তারা ‘মিডল ইস্ট আই’কে জানিয়েছেন, সৌদি আরব ও কাতারের কাছে বড় ধরনের অস্ত্র বিক্রির যে পরিকল্পনা ওয়াশিংটন করছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এই উদ্যোগ।
ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের আশঙ্কা, এই বিশাল অস্ত্র বিক্রির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই অঞ্চলে তাদের আধিপত্য খর্ব হতে পারে।
কংগ্রেস ও কূটনৈতিক তৎপরতা
সূত্রের খবর অনুযায়ী, কয়েক সপ্তাহ ধরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে আলোচনা চলছে। মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্যাপিটল হিলে কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।
পাশাপাশি ইসরায়েল সরকারের উদ্বেগ শোনার জন্য এবং তা সমাধান করার জন্য গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ইসরায়েল সফর করেছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বছরের শেষ নাগাদ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে ফ্লোরিডা যাবেন, তার আগেই মার্কিন প্রশাসন তাদের মূল পরিকল্পনাগুলো গুছিয়ে নিতে চাইছে।
অবশ্য আরব কর্মকর্তাদের ধারণা, এই বছরের মধ্যেই নতুন কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব না–ও হতে পারে।
অস্ত্র চুক্তি ও ট্রাম্পের অবস্থান
গত নভেম্বরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, তাঁর প্রশাসন সৌদি আরবের কাছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করবে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছিলেন, ইসরায়েল তাঁকে সৌদি আরবের কাছে কিছুটা কম শক্তিশালী বা ‘লো-ক্যালিবার’ যুদ্ধবিমান বিক্রি করার জন্য চাপ দিচ্ছে।
তবে ট্রাম্প সরাসরি সৌদি যুবরাজকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমার মনে হয় আপনারা দুজনই (সৌদি ও ইসরায়েল) এমন পর্যায়ে আছেন যে আপনাদের দুই দেশেরই একদম সেরা মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।’
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কাতারের কাছেও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির আলোচনা করছে। এ খবর জানার পর ইসরায়েল উদ্বিগ্ন। কারণ, আরব দেশগুলোতে উন্নত অস্ত্রের এই জোয়ার তাদের দীর্ঘদিনের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বকে ম্লান করে দেবে।
কংগ্রেসের সমর্থন ও নতুন চুক্তি
ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যা স্বাক্ষরিত হলে সৌদি আরব অনেক দ্রুত অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে পারবে। অবশ্য মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এখনো এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি, তবে ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে কংগ্রেস সদস্যদের এই চুক্তির পক্ষে আনার চেষ্টা করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সাধারণত এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পছন্দ করলেও অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে তাঁকে কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিগুলোর সমর্থন পেতে হবে। নিয়মানুযায়ী, কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা কোনো অস্ত্র বিক্রিতে সাময়িকভাবে স্থগিতাদেশ দিতে পারেন, যা আগে ইসরায়েলের অস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রেও ঘটেছে।
ইসরায়েলের ‘সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব’ রক্ষা
১৯৭৯ সালে মিসর ও ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকার করেছিল, তারা এই অঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখবে। ২০০৮ সালে এই এই অঙ্গীকার মার্কিন আইনে পরিণত হয়। যার ফলে আরব দেশগুলোতে অস্ত্র বিক্রির সময় নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি যাচাই করা বাধ্যতামূলক।
এফ-৩৫-এর মতো যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের কাছে বিভিন্ন ‘সংস্করণ’ বা ফিচার অনুযায়ী বিক্রি করা হয়। ইসরায়েলকে তাদের বিমানে বিশেষ কিছু পরিবর্তন করার একচেটিয়া অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেমন ইসরায়েলের এফ-৩৫আই ‘আদির’ বিমানে তারা অতিরিক্ত জ্বালানি রাখার ব্যবস্থা করেছে, যাতে রাডারে ধরা না পড়ে তারা সরাসরি ইরানে গিয়ে হামলা চালিয়ে ফিরে আসতে পারে।
গত জুনে ইরানে আকস্মিক হামলার সময় ইসরায়েল এই সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাঁকে কথা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ইসরায়েলের এই বিশেষ সামরিক সুবিধা রক্ষা করবে। তবে ট্রাম্পের বর্তমান ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ইসরায়েলি নেতৃত্বের জন্য নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।