এক সপ্তাহে শতাধিক ত্রাণকর্মী নিহত

  • ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও ১০৪ জন নিহত।

  • আবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

গাজায় অবিলম্বে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ ও যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতেছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক সপ্তাহে শতাধিক ত্রাণসহায়তাকর্মী নিহত হয়েছেন। গাজার তথ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে ত্রাণবাহী ট্রাকে হামলায় আশপাশে থাকা ২৪ জন ত্রাণপ্রত্যাশী ও ত্রাণকর্মী নিহত হন।

ত্রাণকর্মী হত্যার ঘটনায় এক বিবৃতিতে গাজার তথ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, বিস্তৃত পর্যায়ে অভুক্ত রাখার নীতিকে স্থায়িত্ব দিতে এবং দুর্ভিক্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশলের অংশ হিসেবে ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে।

বিবৃতিতে ইসরায়েলের এই ‘সন্ত্রাস’ এবং ‘গণহত্যামূলক যুদ্ধের’ তীব্র নিন্দা জানায় গাজার সরকার। একই সঙ্গে ইসরায়েলের এই দখলদারত্ব এবং এই যুদ্ধে সম্পৃক্ততার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু পশ্চিমা দেশেরও নিন্দা জানানো হয়। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলা হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়।

মঙ্গলবার রাতে গাজার কুয়েত মোড়ে ত্রাণবাহী ট্রাকের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ট্রাকের চারপাশে জড়ো হওয়া কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কাজ করা ‘পপুলার কমিটি’র উপজাতীয় ত্রাণকর্মীরাও আছেন।

এই হামলা কেবল ত্রাণবাহী ট্রাকই ধ্বংস হয়নি, আশপাশের ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার অনেকক্ষণ পরও রাস্তায় হতাহত ব্যক্তিদের পড়ে থাকতে দেখা যায়। জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরেও ত্রাণবিতরণ কেন্দ্রে হামলার খবর পাওয়া গেছে।

আল-শিফা হাসপাতালে ৯০ জনকে হত্যা

গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, এ অভিযানে ৯০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৬০ জনকে। গত সোমবার চতুর্থবারের মতো এ হাসপাতালে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

নিহত ব্যক্তিদের হামাসের ‘সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে হাসপাতালে হামলার নিন্দা জানিয়ে হামাস বলেছে, আল-শিফায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে হামাস সদস্য নেই।

এদিকে ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও ১০৪ জন নিহত হয়েছেন বলে গতকাল বুধবার জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় ৩১ হাজার ৯২৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬২ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে আহত ব্যক্তির সংখ্যা ৭৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনা অব্যাহত

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল এবং কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো আলোচনা অব্যাহত ছিল। আগের দিন মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছিলেন, এখনই আগবাড়িয়ে সমঝোতার বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে দোহা ‘সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী’।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বার্নিয়া দেশটির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মঙ্গলবার ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় অংশ নিতে তেল আবিবে ফিরে যান তিনি। সেখানে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রস্তাব ও পাল্টা-প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।

এদিকে যুদ্ধবিরতির এ প্রচেষ্টার মধ্যে গতকাল আবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে যান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গতকাল সৌদি আরব এবং আজ বৃহস্পতিবার তাঁর মিসরে যাওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, গাজা উপত্যকার ২০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার নানা মাত্রায় দিন যাপন করছেন। গাজার পরিস্থিতি এখন কেমন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বিবিসিকে আরও বলেন, এই প্রথম কোনো পুরো জনগোষ্ঠীকে এভাবে নিশ্চহ্ন করা হচ্ছে।

ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত কানাডার

গাজায় চলমান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে কানাডা সরকার ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত রেখেছে। কানাডা সরকারের একটি সূত্র মঙ্গলবার এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র বলছে, গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর দেশটিতে মারণাস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রেখেছে কানাডা। যোগাযোগ সরঞ্জামের মতো যেসব উপকরণ প্রাণঘাতী নয়, শুধু সেগুলোই রপ্তানি করা হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ইসরায়েলে কোনো অস্ত্রই রপ্তানি করেনি কানাডা।

মার্চে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক ও আইনজীবীদের একটি দল কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন, কানাডা সরকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক আইন—দুই-ই লঙ্ঘন করছে।