যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে আলোচনা চালাচ্ছে কাতার, উদ্বিগ্ন ইসরায়েল
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান এফ-৩৫ কিনতে আলোচনা করছে কাতার। ইসরায়েলের সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২ নিউজ এমন খবর দিয়েছে।
এফ–৩৫ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছে এফ–৩৫ বিক্রির ঘোষণা দেন। ইসরায়েলের কাছে এই সিরিজের যে যুদ্ধবিমান রয়েছে, সৌদি আরবকেও সেই একই ধরনের বিমান দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
এই প্রেক্ষাপটে কাতারেরও একই যুদ্ধবিমান কেনার চেষ্টার খবর সংবাদমাধ্যমে এল। তবে পাঁচ বছর আগেও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ যুদ্ধবিমান কেনার চেষ্টা করেছিল।
চ্যানেল ১২ নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের এই আলোচনাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইসরায়েল। তবে আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আলোচনা প্রত্যাশা অনুযায়ী এগোলে সৌদি আরব ও তুরস্কের পর কাতার মার্কিন এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার অপেক্ষায় থাকা দেশের তালিকায় যুক্ত হবে। মধ্যপ্রাচ্যে এখন পর্যন্ত শুধু ইসরায়েল এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, তুরস্ক ও সৌদি আরবের কাছে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি না করতে ইসরায়েলের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে লবিং করেছে। ট্রাম্প এই লবিংয়ের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।
গত নভেম্বরে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস বৈঠকে করেন ট্রাম্প। বৈঠকে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, এফ-৩৫ বিষয়ে সৌদি আরব ও ইসরায়েলকে সমান অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি জানি, তারা (ইসরায়েল) চাইবে, সৌদি আরবের যুদ্ধবিমানগুলো কম ক্ষমতাসম্পন্ন হোক। এটাকে আমি আপনাদের জন্য খুশির খবর বলে মনে করি না।...আমার মতে, তারা (ইসরায়েল ও সৌদি আরব) এমন পর্যায়ে আছে, যেখানে তাদের উভয়ের শীর্ষ মানের বিমান পাওয়া উচিত।’
তুরস্কের এফ-৩৫ পাওয়ার সম্ভাবনা কম
এখন পর্যন্ত সৌদি আরবের তুলনায় তুরস্কের এফ-৩৫ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে জানান, সৌদি আরব একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা চুক্তির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি হলে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুতগতিতে অস্ত্র কিনতে পারবে।
তুরস্কের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে এফ-৩৫ তৈরির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনায় ২০১৯ সালে তুরস্ককে এই পরিকল্পনা থেকে বাদ দেয় ওয়াশিংটন।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিল সংশোধন করা হয়। এতে তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট যদি নিশ্চিত করেন, তাঁরা রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আর রাখছেন না; তখন তুরস্কের কাছে যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ বিক্রির কথা ভাববে বলে উল্লেখ করা হয় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিলের সংশোধনীতে।
গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানায়, তুরস্ক এফ-৩৫ কেনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রাশিয়ার কাছে এস-৪০০ ফিরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, নেতানিয়াহু চলতি বছরের শুরুতে তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি না করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে লবিং করেছেন।
নেতানিয়াহু কেন এমন করেছেন, এ বিষয়ে বলা হয়—সিরিয়া নিয়ে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিন নিয়ে তুরস্কের বিভিন্ন বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ ইসরায়েল।
গত সেপ্টেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েল। এটা নিয়ে ইসরায়েল ও কাতারের সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল।
চ্যানেল ১২ নিউজ জানিয়েছে, এফ-৩৫ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-কাতারের আলোচনা নিয়ে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সর্বশেষ প্রযুক্তির দুটি স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান কেনার একটি প্রস্তাব তৈরি করছে ইসরায়েল। এ প্যাকেজে তারা একটি ‘এফ-৩৫এস’ ও আরেকটি ‘এফ-১৫আই’ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির গোলাবারুদ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা কেনার কথা ভাবছে।