ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করুন: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রানচেসকা আলবানিজছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ফ্রানচেসকা আলবানিজ ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, ইসরায়েলকে দেওয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ করা ও দেশটির ওপর পুরোপুরি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ও।

গতকাল বৃহস্পতিবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে বক্তব্য দেওয়ার সময় আলবানিজ এমন আহ্বান জানান। তিনি ইসরায়েলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ‘গণহত্যার অর্থনীতি’ বলে আখ্যা দেন।

মানবাধিকার পরিষদে এদিন আলবানিজ নতুন একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সেখানে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি দমন–পীড়ন ও সহিংসতায় সহায়তাকারী বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা হয়।

আলবানিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি ও উপনিবেশ গঠনের পরিকল্পনাকে টিকিয়ে রাখতে বড় কোম্পানিগুলো একধরনের করপোরেট যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। এই যন্ত্রই ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।

ফ্রানচেসকা আলবানিজ বলেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের অবস্থা ভয়াবহ। ইসরায়েল আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যার জন্য দায়ী।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ উপত্যকায় প্রায় ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, কয়েক লাখ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, বিভিন্ন শহর ও গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। হাসপাতাল ও স্কুলগুলোও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। অবরুদ্ধ ও বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা উপত্যকার ৮৫ শতাংশ এলাকাই এখন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

আলবানিজের উপস্থাপন করা প্রতিবেদনটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, ‘ফ্রম ইকোনমি অব অকুপেশন টু ইকোনমি অব জেনোসাইড (দখলদারির অর্থনীতি থেকে গণহত্যার অর্থনীতি)’। কীভাবে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলের দখলদারি ও উপনিবেশ গঠনের পরিকল্পনাকে টিকিয়ে রাখছে, তা এ প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের জানাজায় অংশ নিতে মানুষের ভিড়। গত মঙ্গলবার রাতে হামলায় তাঁরা নিহত হন। ২ জুলাই ২০২৫, খান ইউনিস, গাজা
ছবি: রয়টার্স

প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি ও উপনিবেশ গঠনের পরিকল্পনাকে টিকিয়ে রাখতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এক ধরনের করপোরেট যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। এসব যন্ত্রই ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে সেখানে (ইহুদি) বসতি স্থাপনের পরিকল্পনায় ইন্ধন জোগাচ্ছে।

প্রতিবেদনটিতে ইসরায়েলকে দমন-পীড়নে সহায়তাকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে আছে অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, বড় প্রযুক্তি কোম্পানি, ভারী যন্ত্রপাতি নির্মাতা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অবৈধ বসতি সম্প্রসারণে সহায়তা করছে, কেউ নজরদারির প্রযুক্তি দিচ্ছে, আবার কেউ ফিলিস্তিনিদের হত্যায় সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক নেতারা যখন গাজায় রক্তপাত থামাতে ইসরায়েলকে চাপ দেওয়ার দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারি, বর্ণবাদ ও এখনকার গণহত্যা থেকে মুনাফা করে যাচ্ছে।

এক জাতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, আরেক জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। স্পষ্টতই, কারও কারও জন্য গণহত্যাও লাভজনক
ফ্রানচেসকা আলবানিজ, জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার  
আরও পড়ুন

প্রতিবেদনে ইসরায়েলের নিপীড়নে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

জেনেভায় বক্তৃতা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আলবানিজ বলেন, এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্য অধিকৃত অঞ্চলে সহিংসতা, হত্যা, পঙ্গু করে দেওয়া এবং ধ্বংসযজ্ঞ থেকে লাভবান হয়েছে।

আলবানিজ জানান, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় ২১ মাসে তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে অন্তত ২০০ শতাংশ দর বেড়েছে, বাজারে যোগ হয়েছে ২২ হাজার কোটি ডলারের বেশি। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা শোচনীয় অবস্থার মধ্যে আছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ উপত্যকায় প্রায় ৫৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, কয়েক লাখ মানুষ একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, বিভিন্ন শহর ও গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
আরও পড়ুন

আলবানিজ বলেন, ‘এক জাতি সমৃদ্ধ হচ্ছে, আরেক জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। স্পষ্টতই, কারও কারও জন্য গণহত্যাও লাভজনক।’

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক-শিল্প খাতই দেশটির ‘অর্থনীতির মেরুদণ্ড’। ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি দখলদারি ও একের পর এক সামরিক অভিযান তাদের কাছে রীতিমতো সামরিক প্রযুক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

আলবানিজ বলেন, অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলকে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে প্রায় রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করেছে। এসব যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে গাজা উপত্যকায় ৮৫ হাজার টন বিস্ফোরক ফেলেছে ইসরায়েল, যা হিরোশিমার বোমার চেয়ে ছয় গুণ শক্তিশালী।

আরও পড়ুন