‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ কী, এ নিয়ে এখন পর্যন্ত যা জানা গেল
ত্রাণ নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজামুখী নৌবহরের একটি বাদে বাকি সব নৌযানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামের এ নৌবহর থেকে প্রায় ৫০০ অধিকারকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও আছেন।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এটি অন্যতম বৃহৎ নৌ-সহায়তা অভিযান। এ কারণে তা বৈশ্বিক নজর কেড়েছে।
এর আগেও বিভিন্ন নামে গাজায় ইসলায়েলি অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে ফ্লোটিলা যাত্রা করেছিল। এবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুমুদ’। এটি আরবি শব্দ যার অর্থ হচ্ছে অবিচল বা দৃঢ়তা।
সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরে ৪০ টির বেশি বেসামরিক নৌযান আছে। এ বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০-এর বেশি মানুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিক আছেন।
গাজা থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে ভূমধ্যসাগরে থাকা অবস্থায় প্রথমে গতকাল বুধবার রাতে অন্তত আটটি নৌকা থামিয়ে দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। নৌযানগুলো থেকে বেশ কয়েকজন অধিকারকর্মীকে আটক করে নিয়ে যান ইসরায়েলি সেনারা। তাঁদের মধ্যে সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন।
ইসরায়েল আগেই জানিয়েছিল, গাজার উদ্দেশে যাওয়া কোনো নৌযানকে থামাতে যা করা দরকার, তারা তাই করবে। তাদের দাবি, ‘আইনসম্মত নৌ অবরোধ ভাঙার চেষ্টা’আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
২০০৭ সালে হামাস গাজা দখল করার পর থেকে সেখানে ইসরায়েলের অবরোধ চলছে। তখন থেকেই গাজার মানুষ কার্যত আটকে আছেন। আর ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
বিগত প্রায় দুই বছরে ইসরায়েলের নৃংশস হামলায় সেখানে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি গাজা অবরোধ করে উপত্যকাটিতে তীব্র খাদ্যসংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে অনাহার-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে গাজার বাসিন্দাদের।
ফ্লোটিলায় বুধবার কী ঘটেছিল
ফ্লোটিলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এক বিবৃতি বলেছেন, ইসরায়েল ত্রাণসহায়তা বহনকারী নৌবহরকে আটকে দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজা উপকূল থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল (১৩০ কিলোমিটার) দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার নৌযান থামিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও জ্যামার ব্যবস্থা চালু করেছে। অন্তত ১৩টি নৌযান ইসরায়েলি বাহিনী আটকে দিয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মুখপাত্র সাইফ আবুকেশেক বলেন, ৩৭টি দেশের ২০১ জনের বেশি মানুষ আটক জাহাজগুলোতে ছিলেন। এর মধ্যে স্পেনের ৩০ জন, ইতালির ২২ জন, তুরস্কের ২১ জন ও মালয়েশিয়া থেকে ১২ জন ছিলেন।
সাইফ আবুকেশেক বলেন, ইসরায়েলের হস্তক্ষেপ ও ধরপাকড়ের পরও ফিলিস্তিনের গাজার দিকে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ত্রাণবাহী ৩০টি নৌযান এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা সেখানে পৌঁছানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
ফ্লোটিলার আয়োজকেরা বলেছেন, সেগুলো উপত্যকাটি থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে আছে। যাত্রাপথে কোনো বাধা না পেলে নৌবহরটির স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজায় পৌঁছানোর কথা ছিল।
ভূমধ্যসাগরে ফ্লোটিলার অগ্রযাত্রা ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মনোযোগ কেড়েছে। আর অধিকারকর্মীদের আটকের খবরে গতকাল রাতেই রোম, বুয়েনস এইরেস, ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ হয়েছে।
ফ্লোটিলার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বুধবার…স্থানীয় সময় রাত প্রায় সাড়ে আটটার দিকে ইসরায়েলি বাহিনী গ্লোবাল আন্তর্জাতিক জলসীমায় সুমুদ ফ্লোটিলার একাধিক নৌযান-বিশেষ করে আলমা, সুরিয়াস ও আদারা আটক করে অবৈধভাবে উঠে পড়ে। এর আগে বিপদসংকেত পাঠানো লাইভস্ট্রিম বন্ধ করতে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজ ইচ্ছাকৃতভাবে নৌযানগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।’
পরে আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে বাকি সব জাহাজই আটক করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
বুধবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, সামরিক পোশাক পরা একজন নারী ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেকে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
ওই ফোনকলে নারী সেনা ফ্লোটিলাকে সতর্ক করে বলেন, তারা একটি সীমিত ও অবরুদ্ধ এলাকায় ঢুকছে। গাজায় যেকোনো সহায়তা অবশ্যই ‘প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলগুলোর’মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
আটক অধিকারকর্মীদের এখন ইসরায়েলের আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে ‘ইয়ম কিপুর’উপলক্ষে ছুটি থাকায় ইসরায়েলের প্রায় সব ধরনের সরকারি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ফ্লোটিলার জাহাজ থেকে আটক কর্মীদের ইয়ম কিপুর উৎসব শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বহিষ্কার করা হবে।
দোহা থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক নিদা ইব্রাহিম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, আরও আটকের ঘটনা ঘটতে পারে। ইসরায়েলি সেনারা জাহাজে উঠে অনেক কর্মীকে আটক করেছেন। সাধারণত আটক ব্যক্তিদের একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবে বর্তমানে ইয়ম কিপুরের কারণে ইসরায়েলের আদালত ও কারাগারগুলো প্রায় বন্ধ আছে। এ কারণে আটক কর্মীরা আপাতত অনিশ্চয়তায় আছেন।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ জাহাজের ডেকে বসে আছেন। সেনারা তাঁকে ঘিরে আছেন।
পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, হামাস-সুমুদ ফ্লোটিলার কয়েকটি নৌযান নিরাপদভাবে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর আরোহীদের ইসরায়েলের একটি বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। গ্রেটা ও তাঁর বন্ধুরা নিরাপদ ও সুস্থ আছেন।
ইসরায়েলের দাবি, তারা অস্ত্র পাচার ঠেকাতে ২০০৯ সাল থেকে নৌ অবরোধ চালু রেখেছে। এ ছাড়া ফ্লোটিলা নৌবহরের ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে শুরু থেকেই দাবি করে আসছে ইসরায়েল। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।
এবারের ফ্লোটিলা
এবার গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান এ বহরে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরবর্তী সময়ে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়। বর্তমানে বহরটিতে ৪০টি বেশি নৌযান রয়েছে।
শুরুতে এই নৌবহরে ৫০ টির বেশি জাহাজ ও অন্তত ৪৪টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী শত শত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক, কর্মী ও আইনপ্রণেতা ছিলেন। আয়োজকদের মতে, তাঁদের মধ্যে ২৪ জন মার্কিন নাগরিকসহ কয়েকজন সামরিক অভিজ্ঞ ব্যক্তিও আছেন।
নৌযানগুলোতে প্রতীকী হলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মানবিক কার্গোয় খাদ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও গাজার জনগণের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছিল।
ফ্লোটিলায় থাকা অধিকারকর্মীরা সমুদ্রে কয়েকটি বৈরী ঘটনার বর্ণনাও দিয়েছেন। এর মধ্যে মাল্টা ও ক্রিটের কাছে সন্দেহভাজন ড্রোন হামলার ঘটনাও ছিল। এতে কিছু নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পিছু হটতে বাধ্য হয়। যখন ফ্লোটিলা পূর্ব ভূমধ্যসাগরের কাছে পৌঁছায়, তখন বহরে ৪৪টি জাহাজ ছিল।
এরপরও ফ্লোটিলা অগ্রসর হতে থাকলে আন্তর্জাতিক মনোযোগ বেড়ে যায় যখন। এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে সহায়তা দেওয়ার জন্য স্পেন ও ইতালি নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করে। অন্যদিকে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়।
কোন কোন সংগঠন অংশ নিচ্ছে
এবারের এ অভিযানে চারটি প্রধান জোট অংশ নিয়েছে। তারা আগে গাজায় স্থল ও সমুদ্রপথে একই প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছিল। এই জোটগুলো হলো—
গ্লোবাল মুভমেন্ট টু গাজা (জিএমটিজি): এটি আগে গ্লোবাল মার্চ টু গাজা নামে পরিচিত ছিল। এটি একটি তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন। এরা গাজার প্রতি বিশ্ব সংহতির কর্মসূচি আয়োজন করে এবং অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করে।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি): ১৫ বছরের সমুদ্র অভিযানের অভিজ্ঞতা আছে এফএফসির। এর আগে এফএফসি মাদলিন ও হান্দালা ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছিল। এফএফসি এবার অবরোধ ভাঙতে ব্যবহারিক পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও কার্যক্রমগত সহায়তা দিয়েছে।
মাগরেব সুমুদ ফ্লোটিলা: এটি আগে ‘সুমুদ কনভয়’ নামে পরিচিত ছিল। এটি উত্তর আফ্রিকাভিত্তিক একটি উদ্যোগ, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দিতে সংহতির মিশন পরিচালনা করে।
সুমুদ নুসান্তারা: এটি মালয়েশিয়াসহ আরও আটটি দেশের জনগণের নেতৃত্বাধীন বহর, যা গাজার অবরোধ ভাঙতে এবং গ্লোবাল সাউথ দেশগুলোর মধ্যে সংহতি জোরদার করতে চায়।
সঙ্গে যাঁরা আছেন
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার তথ্যানুযায়ী, এই জোটে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ-সংগঠক, মানবধিকারকর্মী, চিকিৎসক, শিল্পী, ধর্মীয় নেতা, আইনজীবী ও নাবিকেরা আছেন। তাঁরা সবাই অবরোধ ও গণহত্যা বন্ধের পক্ষে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার স্টিয়ারিং কমিটিতে আছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, ইতিহাসবিদ ক্লিওনিকি অ্যালেক্সোপুলো, মানবাধিকারকর্মী ইয়াসেমিন আকার, সামাজিক-পরিবেশবাদী থিয়াগো আভিলা, রাজনৈতিক বিজ্ঞানী ও আইনজীবী মেলানি শভেইৎসার, সমাজবিজ্ঞানী ক্যারেন ময়নিহান, পদার্থবিদ মারিয়া এলেনা ডেলিয়া, ফিলিস্তিনিকর্মী সাইফ আবুকেশেক, মানবতাবাদী মুহাম্মদ নাদির আল-নুরি, অধিকারকর্মী মারওয়ান বেন গুয়েতাইয়া, অধিকারকর্মী ওয়ায়েল নাওয়ার, অধিকারকর্মী ও সমাজ গবেষক হায়ফা মানসুরি এবং মানবাধিকারকর্মী তোরকিয়া চাইবি।
পাঁচ শতাধিক মানুষ এই সংগঠিত নৌবহরে যাত্রা করেছেন। তবে কয়েক হাজার মানুষ এ উদ্যোগে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন।
ফ্লোটিলা কী, কেন সমুদ্রপথে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে
ফ্লোটিলা হলো অসংখ্য নৌযানের বহর। এসব নৌযান সম্মিলিতভাবে সংগঠিত হয়ে সংকটাপন্ন অঞ্চলে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী পৌঁছে দেয়। সাধারণত যখন কোনো অঞ্চলে বা দেশে আকাশপথ বা স্থলপথে সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন এভাবে ফ্লোটিলার আয়োজন করা হয়।
২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েল গাজার আকাশসীমা ও সমুদ্রসীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, পণ্য ও মানুষের চলাচল সীমিত করছে। এমনকি যুদ্ধের আগেও গাজায় কার্যকর কোনো বিমানবন্দর ছিল না। কারণ, ২০০১ সালে চালু হওয়ার মাত্র তিন বছর পরই ইসরায়েল গাজা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বোমার আঘাতে ধ্বংস করে দিয়েছে।
মানবিক ও তৃণমূল পর্যায়ের ফ্লোটিলা সাধারণত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অধীন পরিচালিত হয়। ফ্লোটিলা নৌ আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত থাকে।
সমুদ্রপথে ত্রাণ পৌঁছে দিয়ে সুমুদ ফ্লোটিলা সরাসরি ইসরায়েলের অবরোধকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় এবং একটি বার্তা দিতে চায়, এই অবরোধ শেষ হতে হবে।
আগে যা ঘটেছে
২০১০ সাল থেকে গাজার অবরোধ ভাঙতে একাধিক জাহাজ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা হচ্ছে—
২০১০, মাভি মারমারা ঘটনা: এটি সবচেয়ে কুখ্যাত একটি ঘটনা। ওই সময় ইসরায়েলি কমান্ডোরা গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলার তুরস্কের একটি জাহাজ মাভি মারমারায় ওঠে পড়েন। এতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধলে ১০ জন অধিকারকর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দা জানানো হয় এবং ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
পরে ২০১৩ সালে ওই অভিযানে ‘কার্যকর ভুল’ করার জন্য ক্ষমা চায় ইসরায়েল। ক্ষতিপূরণ চুক্তি এখনো দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
২০১১ থেকে ২০১৮, ছোট ফ্লোটিলা আটক: ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ফ্লোটিলা আটক করে ইসরায়েল আশদোদ বন্দরে নিয়ে যায়। সেখানে কর্মীদের আটক করে এবং কার্গো বাজেয়াপ্ত করে। ২০১৮ সালে কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় গ্রেপ্তার অনেক কর্মী নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছিলেন।
২০২৪, ফ্লোটিলা আটক: ২০২৪ সালে ইসরায়েল বিদেশি বন্দর থেকে যাত্রা শুরুর আগেই বেশ কিছু ফ্লোটিলার যাত্রা থামিয়ে দেয়। এ ছাড়া কিছু ফ্লোটিলা গাজা পৌঁছানোর আগেই আটক করে।
২০২৫, একাধিক ফ্লোটিলা অভিযান: গাজার নৌ অবরোধকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কয়েকটি ফ্লোটিলা সমুদ্রযাত্রা শুরু করে।
২০২৫: গত জুন মাসে সিসিলির কাতানিয়া থেকে গাজার দিকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া একটি নৌযান আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। গাজা থেকে প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ‘ম্যাডলিন’ নামের নৌযানটি আটক করা হয়। সে সময় রাসায়নিক স্প্রে ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।
ওই নৌযানে গ্রেটা থুনবার্গসহ ১২ অধিকারকর্মী ছিলেন। পরে প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের সেই দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে জুলাই মাসে নৌযান ‘হান্দালা’কে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলের এসব পদক্ষেপ সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।