ট্রাম্পের নানা চেষ্টার পরও সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কোন্নয়ন না হওয়ার কারণ কী
২০২৫ সাল বিদায় নিতে যাচ্ছে। বছরজুড়েই বিশ্বে নানা ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিও আলোচনায় ছিল। চলতি বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বছরজুড়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে নানা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি স্থবির থেকেছে। বছরজুড়ে সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কোন্নয়নের প্রচেষ্টা কেমন ছিল, তা ফিরে দেখা যাক।
‘ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় সৌদি আরব’—এমন একটি কথাই হয়তো সম্প্রতি সৌদি যুবরাজের মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তা হয়নি। গত নভেম্বর মাসে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইট হাউস সফরে গেলে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য চুক্তিও হয়।
তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রসঙ্গ এলে মোহাম্মদ বিন সালমান বলে দেন, তিনি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সুস্পষ্ট পথ নিশ্চিত হওয়াটা দেখতে চান। চলতি বছর ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সৌদি আরবকে বারবারই এমন অনড় অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করাটা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে আব্রাহাম চুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করার পর সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে আশা তৈরি হয়।
গত জুলাই মাসে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। ওই সময় ফ্রান্সের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘের একটি উদ্যোগে অংশ নিয়েছিল সৌদি আরব। ওই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল, ইসরায়েল–ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক আলোচনা আবার শুরু করা। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সৌদি আরবের অবস্থান শুধু কথার কথা নয়; বরং কৌশলগত। ইসরায়েল অনবরত গাজায় যুদ্ধ এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ চালিয়ে যেতে থাকলে সৌদি আরবের অবস্থান আরও কঠোর হয়।
সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের জটিল কোনো সমস্যার সমাধানের প্রশ্ন এলে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসে। চলতি বছরও এ দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দেখা গেছে। বিশেষ করে ট্রাম্পকে চেষ্টা চালাতে দেখা গেছে। আর সৌদি আরব বারবারই অনড় অবস্থান দেখিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত এক নিবন্ধে সাংবাদিক ও মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক জাসিম আল–আজ্জাবি লিখেছেন, ‘বছরের পর বছর ধরে শান্তভাবে চালানো প্রচেষ্টা, প্রতীকী পদক্ষেপ ও উচ্চপর্যায়ের কূটনীতির পরও সৌদি আরব ও ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক এখনো এগোয়নি। সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি স্থবির ও স্পষ্ট সত্য, তা হলো রিয়াদ চায় শান্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি। কিন্তু ইসরায়েল তা দিতে রাজি নয়, আর ওয়াশিংটন নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য বারবার লক্ষ্য বদলাচ্ছে।’
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেন। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাঁর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ফিলিস্তিনিরা অন্য জায়গায় পুনর্বাসিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং সেখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবে। ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের পরদিনই সৌদি আরব জানিয়ে দেয়, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে না।
এরপর ট্রাম্প গত মে মাসে সৌদি আরব সফরে যান। ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে উপসাগরীয় অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে যে গুরুত্বপূর্ণ, তা তাঁর এ সফরের মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়। বলা চলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর ছিল। যদিও এর আগে এপ্রিলের শেষ দিকে তিনি প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দিতে রোম সফরে গিয়েছিলেন। তবে সেটি পূর্বনির্ধারিত সফর ছিল না।
আরেকটি উল্লেখজনক বিষয় হলো, ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদেও প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে সৌদি আরবকে বেছে নিয়েছিলেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক সময়ের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টদের প্রচলিত রীতির ব্যতিক্রম। দেশটির আধুনিককালের প্রেসিডেন্টরা প্রথম বিদেশ সফরের জন্য সাধারণত যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মেক্সিকোকে বেছে নেন।
গত জুলাই মাসে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন হওয়া না হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। ওই সময় ফ্রান্সের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘের একটি উদ্যোগে অংশ নিয়েছিল সৌদি আরব। ওই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল, ইসরায়েল–ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক আলোচনা আবার শুরু করা।
‘বছরের পর বছর ধরে শান্তভাবে চালানো প্রচেষ্টা, প্রতীকী পদক্ষেপ এবং উচ্চপর্যায়ের কূটনীতির পরও সৌদি আরব ও ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক এখনো এগোয়নি। সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি স্থবির ও স্পষ্ট সত্য, তা হলো রিয়াদ চায় শান্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি, জেরুজালেম তা দিতে রাজি নয়, আর ওয়াশিংটন নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য বারবার লক্ষ্য বদলাচ্ছে।’
ওই আলোচনায় ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সৌদি আরবের অবস্থান শুধু কথার কথা নয়; বরং কৌশলগত। ইসরায়েল অনবরত গাজায় যুদ্ধ এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ চালিয়ে যেতে থাকলে সৌদি আরবের অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে।
এর মধ্যেই গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে সামরিক অস্ত্র চুক্তি, পারমাণবিক সহযোগিতা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
ওই বৈঠকে যুবরাজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি বিনিয়োগ ৬০ হাজার কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ কোটি ডলার করা হচ্ছে। সৌদি আরবের কাছে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রি করা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
ওই সময় সৌদি আরবকে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে ঘোষণা করেন ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৯টি দেশকে এ ধরনের মর্যাদা দিয়েছে।
সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা বারবারই ব্যর্থ
সৌদি আরব প্রথমবার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনার কথা বলেছিল ২০০২ সালে। তৎকালীন সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ প্রস্তাব দেন, ইসরায়েল যদি ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে দখল করা অঞ্চলগুলো থেকে সরে আসে, তাহলে পুরো আরব বিশ্ব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে পারে।
বাদশা আবদুল্লাহর এ পরিকল্পনাকে বলা হয় আরব শান্তি উদ্যোগ। আরব লিগ এ প্রস্তাবকে সমর্থন করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আরব দেশগুলোর শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করে।
অনেকে আশা করেছিলেন, এ প্রস্তাব ইসরায়েলকে অসলো চুক্তির আওতায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে। তবে তাদের সে আশা পূরণ হয়নি। ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
এ উদ্যোগকে পরবর্তী সময়ে আরব লিগের ২০০৭ ও ২০১৭ সালের সম্মেলনেও সমর্থন জানানো হয় এবং ইয়াসির আরাফাত ও তাঁর উত্তরাধিকারী মাহমুদ আব্বাসের মতো ফিলিস্তিনি নেতারাও এর সমর্থনে ছিলেন। তবে ইসরায়েল তখনো তা প্রত্যাখ্যান করে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে আব্রাহাম চুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেন। বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।
পরবর্তী সময়ে মরক্কো ও সুদানও এতে যোগ দেয়। আব্রাহাম চুক্তি ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে দূতাবাস খোলার সুযোগ দেয় এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত করে।
ফিলিস্তিনিরা এসব চুক্তিকে বিশ্বাসঘাতকতা বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে আরব বিশ্ব থেকে এ নিয়ে বড় পরিসরে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর কোনোটি আরব লিগ থেকে বহিষ্কৃতও হয়নি।
ইরানও তখন আব্রাহাম চুক্তির তীব্র সমালোচনা করেছিল। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছিলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসলামি ও আরব বিশ্ব, এ অঞ্চলের দেশগুলো এবং ফিলিস্তিনি আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা যা করেছে, তা অসম্মানের। অবশ্যই তাদের নীতি কাজ করবে না।’
সবাই ধারণা করছিল, আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তি সৌদি আরবই হবে আব্রাহাম চুক্তির পরবর্তী সদস্য। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্তও মনে হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এ চুক্তিতে সৌদি আরব শিগগিরই যোগদান করবে।
ওই সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, ‘আমরা প্রতিদিন চুক্তির আরও কাছাকাছি আসছি।’ এটি শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ‘সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক চুক্তি’ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তবে ওই বছরের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে সব আলোচনা থেমে যায়।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে আব্রাহাম চুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেন। বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে মরক্কো ও সুদানও এতে যোগ দেয়। আব্রাহাম চুক্তি ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে দূতাবাস খোলার সুযোগ দেয় এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত করে।
ট্রাম্পের নীতি বদল
ট্রাম্প চলতি বছরের শুরুতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সৌদি–ইসরায়েল সম্পর্কোন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিতে থাকেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা মত দেন, ট্রাম্পের আচরণে মনে হচ্ছে তিনি ইসরায়েলকে উপেক্ষা করে হলেও সৌদি আরবকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
গত অক্টোবর মাসে ট্রাম্প বলেন, তিনি আশা করেন সৌদি আরব ‘খুব শিগগির’ আব্রাহাম চুক্তিতে শামিল হবে। পরের মাসে তিনি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে হোয়াইট হাউসে সাড়ম্বরে অভ্যর্থনাও জানান। এখন পর্যন্ত তাঁর প্রশাসনে কোনো বিদেশি নেতাকে এটাই সবচেয়ে জমকালো অভ্যর্থনা জানানো।
ওই সময় ট্রাম্প সৌদি যুবরাজকে হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে বড় মঞ্চ দক্ষিণ লনে অভ্যর্থনা জানান। অভ্যর্থনার সময়ে সেখানে ঘোড়ায় বসা ইউনিফর্মধারী সেনাদের পতাকা বহন করতে দেখা গেছে। একই সময়ে হোয়াইট হাউসের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে একঝাঁক যুদ্ধবিমান।
ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া এফ-৩৫ সিরিজের জঙ্গিবিমানগুলো সৌদি আরবের কাছে বিক্রি করা হবে। এসব যুদ্ধবিমান বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো শর্ত থাকবে না। সৌদির কাছে বিক্রির জন্য এফ-৩৫-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য ইসরায়েলের কাছে এই সিরিজের যেসব বিমান রয়েছে, সেগুলোর মতো হবে।
ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, উভয় দেশ সেরা সামরিক সরঞ্জাম পাবে। কারণ, দুটি দেশই ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমানভাবে ঘনিষ্ঠ। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার স্পষ্টভাবে বোঝা গেছে। এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনায় বিশ্লেষকেরা ইঙ্গিত দেন, সাময়িকভাবে হলেও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে অগ্রাধিকার দেওয়া থেকে সরে যেতে পারে।
এ ছাড়া গত মে মাসে মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে ট্রাম্প সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলেও ইসরায়েলে যাননি।
সামনে কী
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ১৭ নভেম্বর ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। ওই পরিকল্পনায় গাজায় আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষা বাহিনী পাঠানোর কথা রয়েছে; যার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, কাতার, আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের সেনা থাকতে পারেন। কিন্তু ইসরায়েল এখনো নিয়মিতভাবে গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে এবং পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযান বাড়িয়ে চলেছে।
সাংবাদিক জসিম আল–আজ্জাবি মনে করেন, ভবিষ্যতে বেশ কিছু বিষয় দেখার আছে। মিডল ইস্ট মনিটরে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, সৌদি–ইসরায়েল সম্পর্কোন্নয়নে কোনো সম্ভাব্য অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো পশ্চিম তীরের বসতি, বিশেষ করে ই১ করিডর নিয়ে ইসরায়েলের অবস্থান পরিবর্তন হবে কি না, তা।
আজ্জাবি লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি পারমাণবিক চুক্তির শর্তের বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হচ্ছে এটি কি পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণকে সীমিত করবে, নাকি সৌদি আরবের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক কেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করবে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ মুহূর্তে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথ স্থবির। দুপক্ষের আগ্রহের অভাবে যে এমন স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, তা নয়; বরং শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দর-কষাকষি বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কারণ, রিয়াদ চায় বাস্তব পদক্ষেপ, প্রতীকী কিছু নয়।
অন্যদিকে ইসরায়েল নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। আর ওয়াশিংটন কৌশলগত আকাঙ্ক্ষা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার দোলাচলে পড়ে বারবার লক্ষ্য বদলাচ্ছে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এই ফাঁকগুলো বন্ধ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তা কেবল একটি ভ্রমের মতোই থেকে যাবে।
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর, দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি,