ক্ষতিগ্রস্ত ৭০ লাখ শিশু নিয়ে উদ্বেগ

ইউনিসেফ বলছে, এমন অনেক শিশুই হয়তো বেঁচে থাকবে, যারা আর মা–বাবাকে ফিরে পাবে না।

ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া শিশুদের ইউনিসেফের উদ্যোগে খেলনার ছলে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসাসেবা। গত সোমবার সিরিয়ার আলেপ্পোর একটি অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে
ছবি: রয়টার্স

সিরিয়া ও তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২ কোটির বেশি। এর মধ্যে ৭০ লাখই শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। তাদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থটি বলছে, সেখানে হাজার হাজার শিশু মারা যেতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার এই উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটি।

সিরিয়া ও তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানে ৬ ফেব্রুয়ারি। এই ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি ও সিরিয়ার ৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনাও দিন দিন একেবারে ক্ষীণ হয়ে আসছে। সেখানকার শিশুদের পরিস্থিতি উল্লেখ করে গতকাল ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, তুরস্কে ১০টি প্রদেশে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ৪৬ লাখ। আর সিরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা ২৫ লাখ।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দুই দেশে ঠিক মৃতের সংখ্যা কত, তা এখনো জানা যায়নি। এ ছাড়া ঠিক কত হাজার শিশু মারা গেছে, সেটাও জানা যায়নি। জেমস এল্ডার বলেন, ইউনিসেফ আশঙ্কা করছে, সেখানে হাজার হাজার শিশু মারা গেছে। সেখানকার বিয়োগান্ত চিত্রতে এটা পরিষ্কার যে মৃতের সংখ্যা বাড়বেই। তিনি এটাও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই উদ্ধার অভিযান শেষে মৃতের এমন একটি সংখ্যা জানা যাবে, যা হবে ‘বেদনায় বিহ্বল’ করার মতো।

জেমস এল্ডার বলেন, এটা অবশ্যম্ভাবী ঘটনা যে অনেক অনেক শিশু তাদের মা–বাবাকে আর জীবিত দেখতে পাবে না। এমন মা–বাবা হারানো শিশুর সংখ্যাও হবে অবিশ্বাস্য।

সিরিয়া ও তুরস্কে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে তীব্র শীত পড়ছে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকছে। অনেকেই এখনো আশ্রয় খুঁজে পায়নি। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে, সেখানে এখনো লাখো মানুষের খাবার, সুপেয় পানি ও আশ্রয় প্রয়োজন। এই গৃহহীনদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

স্বজনদের খোঁজে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া এক নারীর কান্না। গত সোমবার তুরস্কের হাতায়েতে
ছবি: এএফপি

এই পরিস্থিতি তুলে ধরে জেমস এল্ডার বলেন, অনেক পরিবারই তাদের শিশুদের নিয়ে রাস্তায়, বিপণিবিতানে, স্কুলে, মসজিদে, বাসস্ট্যান্ডে এমনকি সেতুর নিচে ঘুমাচ্ছে।

সেখানে যেসব শিশু বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে জেমস এল্ডার বলেন, শিশুদের নিয়ে অনেক পরিবারই তীব্র শীত, তুষার ও বৃষ্টির মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এর কারণে অনেক শিশু হাইপোথারমিয়া ও শ্বাসযন্ত্রের নানা জটিলতায় ভুগছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে হঠাৎ তাপমাত্রা অনেক কমে গেলে শিশুদের যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো হাইপোথারমিয়া বা শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা হ্রাস। এতে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

দ্রুত সেড়ে উঠছে আরাস

সিরিয়া ও তুরস্কের ধ্বংসস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ আলোচিত শিশু আরাস। তুরস্কের ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া ‘অলৌকিক শিশুদের’ একজন সে।

আরাসকে ‘অলৌকিক শিশু’ বলার কারণ হলো, ভূমিকম্পের ১০৫ ঘণ্টা পর কাহরামানমারাস শহরের ধ্বংসস্তূপ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। যখন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আনা হয়, তখন তার শরীরে তাপমাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে (হাইপোথারমিয়া) নেমে এসেছিল। তার শরীরের তাপমাত্রা সে সময় ছিল ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরাসকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে তার ৭ বছরের বোন হিরানুরকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ৯ বছরের ভাই আলপ, এমনকি তার বাবাকেও উদ্ধার করা যায়নি।

ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া আরাসের স্বজন তাঁর দাদা মেহমেত জানিয়েছেন, ‘সে খুব ভালো ছেলে। শান্ত। দায়িত্বশীল। সে দুষ্টু নয়।’

আরাসের চিকিৎসক জানিয়েছেন, সে দ্রুত সেরে উঠছে। আরাসের মাকেও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে আরেকটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, তিনি দ্রুত সেরে উঠবেন।