ইরান–ইসরায়েলের পরবর্তী লড়াই হবে সাইবার জগতে

ইরানের জাতীয় সেনাবাহিনী দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছেন সেনাসদস্যরা। গতকাল তেহরানেছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের নিজেদের ভূখণ্ডে গত শনিবার ইরান যে ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সমন্বয়ে হামলা চালাল, তা নানা দিক থেকে ছিল নজিরবিহীন। তবে এর সঙ্গে সাইবার হামলার যে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তা নজিরবিহীন ছিল না। ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি হ্যাকারদের গ্রুপ দাবি করেছিল যে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আগে ইসরায়েলি রাডার সিস্টেম হ্যাক করে ফেলা হয়েছিল। তবে ইসরায়েলের শীর্ষ সাইবার সংস্থা বলেছে, তারা অনলাইনে অস্বাভাবিক কোনো কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেনি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলে হামলা করার পর থেকে আঞ্চলিক সংঘাত ব্যাপক বেড়ে গেছে। এ সময় থেকেই ইসরায়েলে ব্যাপকভাবে সাইবার আক্রমণ বেড়ে যেতে দেখা গেছে। ইসরায়েল ন্যাশনাল সাইবার ডাইরেক্টটরেটের (আইএনসিডি) প্রধান গ্যাবি প্রটনয় বলেন, ইসরায়েল আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি সাইবার আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছে।

২০১০ সালে প্রথম এ অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি সামনে এলে ইরান তাদের সাইবার কর্মসূচি শুরু করে। এখন রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইরানের এ ধরনের কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে মনে করছে ওয়াশিংটন।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাইবার জগতের এ ধরনের লড়াই অবশ্য এক দশকের বেশি সময় ধরেই চলছে। ২০০৬ সাল বা তার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সাইবার অস্ত্র তৈরি ও প্রয়োগ শুরু করে। তাদের এ ধরনের একটি অস্ত্র হচ্ছে স্টাক্সনেট। এ অস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় কম্পিউটার সিস্টেম ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য, এ অস্ত্র তৈরির কথা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কখনো স্বীকার করেনি। ২০১০ সালে প্রথম এ অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি সামনে এলে ইরান তাদের সাইবার কর্মসূচি শুরু করে। এখন রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইরানের এ ধরনের কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে মনে করছে ওয়াশিংটন।

আমি ইসরায়েলকে সাইবার জগতের সুপারপাওয়ার আর ইরানকে উদীয়মান সাইবার শক্তি বলব। এত দিন ধরে ইরান ইসরায়েলের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে নিতে সক্ষম হয়েছে।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের কৌশলগত প্রযুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক মোহাম্মদ সোলাইমান

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের কৌশলগত প্রযুক্তি ও সাইবার নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের সাইবার জগতের প্রতিযোগিতা সবচেয়ে পুরোনো প্রতিযোগিতাগুলোর একটি। ইরানের পক্ষ থেকে স্টাক্সনেট সাইবার প্রোগ্রাম বা ক্ষতিকর সফটওয়্যারটিকে নিজস্ব কৌশলে সমৃদ্ধ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের সহযোগিতায় সাইবার দুনিয়ায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ইসরায়েল। দেশটির জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) কাছে ইউনিট ২৮০০ নামের গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় করার পৃথক বিভাগ আছে। এখান থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নিয়ে আক্রমণাত্মক সাইবার অভিযান চালানো হয়।

সোলাইমান বলেন, ‘আমি ইসরায়েলকে সাইবার জগতের সুপারপাওয়ার আর ইরানকে উদীয়মান সাইবার শক্তি বলব। এত দিন ধরে ইরান ইসরায়েলের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখে নিতে সক্ষম হয়েছে।’