ইয়েমেনে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি হুতির, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা অব্যাহত
ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন হুতি। তাদের দাবি, ড্রোনটি হাজ্জাহ প্রদেশে হামলা চালানোর সময় সেটিকে ভূপাতিত করা হয়।
এদিকে হুতি মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম আল মাসিরাহ জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে ইয়েমেনজুড়ে অন্তত তিন স্থানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, সংগঠনটির ‘আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের একটি শত্রুভাবাপন্ন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে, যা হাজ্জাহর আকাশসীমায় হামলা চালাচ্ছিল।’
ইয়াহিয়া সারি বলেন, চলতি মাসে এটি হুতিদের ভূপাতিত করা সপ্তম মার্কিন ড্রোন। গাজায় ইসরায়েল জাতিনিধনমূলক যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে ভূপাতিত করা ড্রোনগুলোর মধ্যে এটি ২২তম।
আল মাসিরাহর প্রতিবেদন বলছে, গতকাল রাতে লোহিত সাগরে কামরান দ্বীপে একাধিক বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া পশ্চিম ইয়েমেনের আল সালিফ এলাকায় দুটি এবং উত্তরাঞ্চলীয় সা’দা প্রদেশের আল সালিম এলাকায় চারটি বিমান হামলা চালানো হয়।
মার্কিন বাহিনী মার্চ থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইয়েমেনে ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। তাদের দাবি, হুতিদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে এসব হামলা করা হচ্ছে। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, হুতি সদস্যরা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জলপথ লোহিত সাগরে চলাচল করা জাহাজে হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান চলবে।
হুতি যুক্তরাষ্ট্রের এসব হামলাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেছে, তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েল সেখানে যুদ্ধ বন্ধ করলেই তারা এসব হামলা থামাবে।
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এক মার্কিন বিমান হামলায় ১২ জন নিহত হওয়ার কয়েক দিন পর দেশটিতে সবশেষ এই হামলাটি হলো।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের হোদেইদার বন্দর ও বিমানবন্দরে ১৩টি বিমান হামলা চালায়। এর তিন দিন আগে রাস ইসা বন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত এবং ১৫০ জনেরও বেশি আহত হয়।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুতিরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবি করে ১০০টিরও বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, এটা তারা করেছে গাজা যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায়।
চলতি বছরের শুরুতে গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সময় হুতিরা এই হামলা বন্ধ রাখে। কিন্তু ইসরায়েল আবারও গাজায় আক্রমণ শুরু করলে সংগঠনটি জানায়, তারা আবার হামলা শুরু করবে।
হুতিদের এসব হামলার ফলে সুয়েজ খাল হয়ে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এই খাল দিয়ে সাধারণত বিশ্বের প্রায় ১২ শতাংশ বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল হয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে হুতিদের হামলার পর থেকে অনেক কোম্পানিকেই ব্যয়বহুল বিকল্প পথ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে।