সিরিয়ায় অভিযানে আলাউইত সম্প্রদায়ের ১৬২ জন নিহত, অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান শারার
সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের নিজ সম্প্রদায় আলাউইতের বিদ্রোহীদের অস্ত্র জমা ও আত্মসমর্পণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির নতুন শাসকদের ওপর বড় ধরনের হামলার ঘটনা ঘটার পর এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, গতকাল শুক্রবার সিরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আলাউইত সম্প্রদায়ের ১৬২ জন নিহত হয়েছেন। এর আগের দিন আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এলাকাগুলোতে আসাদের প্রতি অনুগত বন্দুকধারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে শারা বলেন, ‘আপনারা সব সিরীয় নাগরিককে আক্রমণ এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। প্রতিশোধ নিতে গেলে আপনারা তা সহ্য করতে পারেননি। আপনাদের অস্ত্রগুলো জমা দিন এবং দেরি হওয়ার আগেই আত্মসমর্পণ করুন।’
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে শারার বক্তব্যটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে প্রচার করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার পশ্চিম উপকূলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর এ পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
গত ডিসেম্বরে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের জোট বাশার আল–আসাদ সরকারকে উৎখাত করে। এ জোটকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শারা। তাঁর নেতৃত্বাধীন সিরিয়ার নতুন কর্তৃপক্ষের সামনে এখন যে জটিল কাজগুলো আছে, তার একটি দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা।
শুক্রবারের ভাষণে শারা ‘একচেটিয়াভাবে রাষ্ট্রের হাতে অস্ত্র রাখার’ লক্ষ্যে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আর কোনো অস্ত্র থাকবে না।’
সিরিয়ান অবজারভেটরি জানিয়েছে, শুক্রবার সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে পাঁচটি পৃথক ঘটনায় ১৬২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ও অধিকার কর্মীদের প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, একটি বাড়ির বাইরে বেসামরিক পোশাক পরা বেশ কয়েকটি মৃতদেহকে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কাছাকাছি রক্তের দাগ এবং নারীদের কাঁদতে দেখা গেছে।
অন্য ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, সামরিক পোশাক পরা মানুষেরা কাছ থেকে মানুষকে গুলি করছেন।
এএফপি স্বতন্ত্রভাবে ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের পর কর্তৃপক্ষ ব্যাপক নিরাপত্তা অভিযান শুরু করেছে।
সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া ও তারতুসে আজ শনিবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ এলাকাগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের নিজ গোষ্ঠী আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়। শুক্রবার কর্তৃপক্ষ এই দুই প্রদেশের মধ্যবর্তী জাবলেহ এলাকায় নিরাপত্তা অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, লাতাকিয়া প্রদেশের বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের ঘটনাটি নাশকতা।
সিরিয়ার হোমস শহরেও কারফিউ জারি করা হয়েছে।
এক কর্মকর্তার বরাতে সানা জানিয়েছে, আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকদের লক্ষ্য করে নিরাপত্তা অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বেসামরিক নাগরিকদের তাঁদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।