ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি শান্তির মূল বাধা

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)ফাইল ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এই দখলদারিকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নীতিতে এগোতে হবে। আর গাজায় ইসরায়েল যে আগ্রাসন চালাচ্ছে, তা আরেকটি মহাবিপর্যয় সৃষ্টির লজ্জাজনক অপচেষ্টা।

ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) শুনানিতে অংশ নিয়ে তুরস্ক ও কয়েকটি সংগঠন এসব কথা বলেছে। গতকাল সোমবার ছিল এই শুনানির ষষ্ঠ ও শেষ দিন। এরপর এ বিষয়ে আইসিজে তার মতামত ও নির্দেশনা দেওয়ার কথা। এ জন্য ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে।

গতকাল তুরস্ক ছাড়াও শুনানিতে অংশ নেন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), আরব লিগ, আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ), জাম্বিয়া, মালদ্বীপ, স্পেন ও ফিজির প্রতিনিধিরা।

তিন সংস্থার প্রতিনিধিরা আদালতকে বলেন, ইসরায়েলের এ দখলদারিকে অবৈধ ঘোষণা এবং ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আইসিজের রুল জারি করা উচিত।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আইসিজেতে গতকাল তুরস্কের প্রতিনিধি হিসেবে শুনানিতে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেত ইলদিজ। তিনি বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের মূল কারণ ইসরায়েলের এই দখলদারি। তিনি বলেন, ইসরায়েলি দখলদারির অবসান না হওয়া পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে না। এই দখলদারি অবৈধ ঘোষণা করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রেখে ইসরায়েল কীভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে, তার আইনি দিকগুলো তুলে ধরেন ওআইসি, আরব লিগ ও আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে ইসরায়েলি দখলদারি কেন অবৈধ ও এতে ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কীভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, সে বিষয়ে যুক্তি দেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

তিন সংস্থার প্রতিনিধিরা আদালতকে বলেন, ইসরায়েলের এ দখলদারিকে অবৈধ ঘোষণা এবং ইসরায়েলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে আইসিজের রুল জারি করা উচিত।

অতীতের মতো আবারও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারির অবসান চায় আফ্রিকান ইউনিয়ন।
আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধি মোহামেদ হেলাল

যথাযথ মতামত দেওয়ার আহ্বান

শুনানিতে আরব দেশগুলোর জোট আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবৌল ঘেইতির বিবৃতি আদালতকে পড়ে শোনান সংস্থাটির একজন প্রতিনিধি। বিবৃতিতে আরব লিগের মহাসচিব ইসরায়েলের দখলদারি আন্তর্জাতিক বিচারের প্রতি অবমাননা বলে বর্ণনা করেন। ইসরায়েলি দখলদারিকে অবৈধ ঘোষণা ও এর আইনি পরিণতি সম্পর্কে দ্ব্যর্থহীনভাবে রুল জারি করতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

ওআইসির মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা দখলদার ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধে সব দেশের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এসব অস্ত্রই ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। গাজায় চলমান ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞেরও নিন্দা জানান ওআইসির মহাসচিব।

আইসিজের ছয় দিনের শুনানিতে বেশির ভাগ দেশ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্বের অবসানের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই যে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা লাঘবের অন্যতম উপায়, সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছেন দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।

শুনানিতে আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রতিনিধি মোহামেদ হেলাল বলেন, অতীতের মতো আবারও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারির অবসান চায় আফ্রিকান ইউনিয়ন। একই সঙ্গে আইসিজের প্রতি ইসরায়েলি দখলদারিকে অবৈধ ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, এই শুনানির পর শেষ পর্যন্ত আদালত কী নির্দেশনা দেন, তা ইতিহাসে থেকে যাবে। এর ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে যথাযথ একটি নির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানান আইনের এই অধ্যাপক।

আফ্রিকান ইউনিয়নের আরেক প্রতিনিধি হাজের গুলেদিচ বলেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা আরেকটি ‘নাকবা’ (মহাবিপর্যয়) সৃষ্টির লজ্জাজনক অপচেষ্টা। ফিলিস্তিনিদের ওপর যেভাবে জুলুম ও অত্যাচার চলছে, কোনো কিছু দিয়েই তার বৈধতা দেওয়া যায় না।

এবারও ইসরায়েলের পাশে যুক্তরাষ্ট্র

গতকালের শুনানির মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল নিয়ে আইসিজের ছয় দিনের শুনানি শেষ হলো। এতে অর্ধশতাধিক দেশ ও তিনটি সংস্থা এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে। ধারণা করা হচ্ছে, ছয় মাসের মধ্যে আদালতের পক্ষ থেকে এ নিয়ে নির্দেশনামূলক মতামত দেওয়া হতে পারে।

আইসিজের ছয় দিনের শুনানিতে বেশির ভাগ দেশ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারত্বের অবসানের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই যে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা লাঘবের অন্যতম উপায়, সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছেন দেশগুলোর প্রতিনিধিরা।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা আরেকটি ‘নাকবা’ (মহাবিপর্যয়) সৃষ্টির লজ্জাজনক অপচেষ্টা। ফিলিস্তিনিদের ওপর যেভাবে জুলুম ও অত্যাচার চলছে, কোনো কিছু দিয়েই তার বৈধতা দেওয়া যায় না।
আফ্রিকান ইউনিয়নের আরেক প্রতিনিধি হাজের গুলেদিচ

তবে গত সপ্তাহে শুনানিতে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইসরায়েল নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছেড়ে যেতে দেশটিকে বাধ্য করা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ছাড়তে হলে এর আগে ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

ইসরায়েলের দখলদারি, অবৈধ বসতি স্থাপন ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করার অপতৎপরতা পর্যালোচনা করতে ১৯ ফেব্রুয়ারি এ শুনানি শুরু হয়। ছয় দিনের শুনানিতে অর্ধশতাধিক দেশ ও তিনটি সংস্থা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে।

আরও পড়ুন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ইসরায়েলি দখলদারি বিষয়ে শুনানি করতে ২০২২ সালে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানায়। তাতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে আইসিজের নির্দেশনা ও মতামত চাওয়া হয়।

গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে একই আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার সঙ্গে এই শুনানির যোগসূত্র নেই।