আমিরাতের রাজকুমারীও পেগাসাসের নজরদারিতে?

রাজকুমারী লতিফা আল মাকতুম।
ফাইল ছবি: রয়টার্স।

ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের তৈরি করা সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ ব্যবহার করে যাঁদের ওপর নজরদারি হয়েছে বা চেষ্টা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সম্ভবত রাজকুমারী লতিফা আল মাখতুমও ছিলেন। তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মেদ বিন রশিদ আল মাখতুমের মেয়ে। নিজ দেশ ও পরিবার ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় তাঁর ওপর নজরদারি হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরিবারের ‘নির্যাতনের’ মুখে ২০১৮ সালের মার্চে নৌকায় করে সাগর পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন লতিফা। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে তিনি ধরা পড়ে যান। তাঁকে আটক করে নিয়ে যান আমিরাতের সেনারা। ওই ঘটনা সারা বিশ্বে আলোচনার জন্ম দেয়।

ভারতীয় নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’–এর এক প্রতিবেদনে আজ বুধবার বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মার্চে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন রাজকুমারী লতিফা। ওই সময় লতিফা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ফোনে নজরদারি করেছিল আমিরাতের কর্তৃপক্ষ। পেগাসাস ব্যবহার করে আড়ি পাতার জন্য টার্গেট করা হয়েছে—ফাঁস হওয়া এমন ৫০ হাজার ফোন নম্বরের তালিকায় লতিফার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনের নম্বর রয়েছে।

আরও পড়ুন

২০০২ সালে প্রথমবার দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন লতিফা। যেতে চেয়েছিলেন লন্ডনে। তাঁর বড় বোন শামসার কাছে। ওই সময় লতিফার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। তবে পালানোর ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ধরে এনে কারাগারে ভরা হয় তাঁকে। তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন লতিফা। তাঁর অভিযোগ, বন্দী থাকা অবস্থায় তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন

এরপর অনেকগুলো বছর পেরিয়ে যায়। ২০১৭ সালে এসে আবারও পালানোর পরিকল্পনা করেন লতিফা। সহায়তা করেন লতিফার ব্যায়ামের প্রশিক্ষক ও বন্ধু তিন্না জাউহিয়াইনেন। পরের বছরই তাঁরা পরিকল্পনা অনুযায়ী পালিয়ে যান। এর আগে লতিফা ৪০ মিনিটের একটি ভিডিও করেন। তাতে নিজের কষ্টের গল্প বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছিলেন তিনি। পালানোর আগে দুবাইয়ের একটি ক্যাফের ওয়াশরুমে নিজেদের ফোন ফেলে দেন লতিয়া ও তিন্না। মূলত সেটা থেকেই তাঁদের পালানোর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

আরও পড়ুন

স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে আইফোন ও অ্যানড্রয়েড ফোনের সব মেসেজ, ছবি, ই-মেইল, কল রেকর্ড বের করা যায়। এই স্পাইওয়্যার ফোন ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই মাইক্রোফোন চালু করে দিতেও সক্ষম।
পেগাসাস ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতার ঘটনা ফাঁস হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছেন অধিকারকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, এমনকি কোনো কোনো দেশে ক্ষমতাসীন পরিবারের সদস্যদের ওপরও আড়ি পাতা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এনএসওর গ্রাহকেরা এসব ব্যক্তির স্মার্টফোনে আড়ি পেতেছে।

প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক সংবাদ সংস্থা ফরবিডেন স্টোরিজ এবং লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রথম এ তথ্য পায়। পরে তারা বিষয়টি গার্ডিয়ান, দ্য ওয়্যারসহ বিশ্বের ১৭টি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করে। এসব সংবাদমাধ্যম একযোগে এ–সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে শুরু করেছে।