ইরান–উপসাগরীয় দেশের সম্পর্কে সংকটের শঙ্কা

ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
ছবি: রয়টার্স

ইরানে শুক্রবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের স্পষ্ট সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন অতিরক্ষণশীল বিচারপতি ইব্রাহিম রাইসি। এই নির্বাচনে তাঁকে সমর্থন দিয়েছিলেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। রক্ষণশীল রাজনীতিবিদদেরও সমর্থন পেয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থী এবং বিদায়ী মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, রাইসির বিজয় উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের উন্নয়নকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অতিরক্ষণশীল বিচারপতি রাইসির জয়ের মধ্য দিয়ে ইরানে কট্টর পন্থার উত্থান ঘটতে চলেছে বলেই তাঁদের ধারণা। তবে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তেহরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সংলাপ থেকে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো নিজেদের দূরে সরিয়ে না–ও রাখতে পারে। অবশ্য তেহরানের সঙ্গে এমন সংলাপ হবে অধিকতর কঠিন। খবর রয়টার্সের।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাইসির বিজয়ে শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান ও সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সুসম্পর্কের ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্ভর করতে পারে বিশ্বশক্তিগুলোর সঙ্গে ২০১৫ সালে তেহরানের সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার অগ্রগতির ওপর।

উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল খালেক আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইরান এখন এক পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে যে তারা আরও কট্টর ও রক্ষণশীল অবস্থানের দিকে ঝুঁকছে। রাইসির বিজয় উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের উন্নয়নকে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আরব উপসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি ক্রমে বেশি জটিল ও অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে কট্টর পন্থার দিকে ইরানের মোড় নেওয়ার মতো অবস্থা এখন মোটেই নেই।’

রাইসি জেতার পর দ্রুত তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। তাঁর জয়ে উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে মাত্র যে দুটি দেশ এখনো কোনো মন্তব্য করেনি, সেগুলো হলো সৌদি আরব ও বাহরাইন। রাইসি এসব উপসাগরীয় দেশের পশ্চিমা মিত্রদের একজন ঘোর সমালোচক। সেই সঙ্গে আয়াতুল্লাহ খামেনির পছন্দের পাত্র তিনি।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাইসি একই সঙ্গে ইরানের বিচারপতি ও একজন ধর্মীয় নেতা। দেশটির শীর্ষস্থানীয় যে কয়েকজন ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্র একতরফা নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বর্তমানে আয়াতুল্লাহ খামেনির পর ইরানের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তাও তিনি। মধ্যপন্থী রুহানি সরকারের অধীন ঐতিহাসিক ওই পরমাণু চুক্তি নিয়ে ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে অন্যান্য পক্ষের আলোচনা চলছে। দীর্ঘদিনের শত্রু ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবও সম্পর্ক উন্নয়নে গত এপ্রিল থেকে তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চালাচ্ছে। এমনই এক মুহূর্তে আগামী আগস্টে রুহানির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন রাইসি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান গালফ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ সগির বলেন, ভিয়েনা আলোচনা সফল ও যুক্তরাষ্ট্র–ইরান সম্পর্ক ভালো হলে গোটা উপসাগরীয় অঞ্চলের পরিস্থিতিরই উন্নতি ঘটবে।

জেনেভা সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির বিশ্লেষক জ্যঁ–মার্ক রিকলি বলেন, পরমাণু আলোচনার পুনরুজ্জীবন ও ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর থেকে মার্কিন অবরোধ প্রত্যাহার হলে তা রাইসিকে শক্তিশালী করবে। পাশাপাশি ইরানের অর্থনৈতিক সংকটও হ্রাস পাবে।

পরিশেষে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইরান বা উপসাগরীয় কোনো আরব দেশ এখন ২০১৯ সালে শুরু হওয়া উত্তেজনায় ফিরতে চায় না। ওই সময় আরব উপসাগরে তেলবাহী জাহাজ এবং সৌদির তেল স্থাপনায় হামলা হয়। পরের বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ মদতে ইরাক সফররত ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়।