সাংবাদিক শিরিন হত্যায় এফবিআইয়ের তদন্ত চাইছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা

ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও আল–জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহের নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ওঠে
ছবি: রয়টার্স

আল-জাজিরার সাংবাদিক ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক শিরিন আবু আকলেহকে হত্যার ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) মাধ্যমে তদন্ত দাবি করছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। কংগ্রেসম্যান আন্দ্রে কারসন আল-জাজিরাকে বলেন, সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় মার্কিন তদন্ত চেয়ে লেখা চিঠি ‘ব্যাপক’ সমর্থন পাচ্ছে।

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিমধ্যে এফবিআইয়ের মাধ্যমে তদন্ত চেয়ে ওই চিঠিতে ৫৫ জনের বেশি স্বাক্ষর করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে বরাবার এই চিঠি লেখা হয়েছে।

১১ মে দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর একটি অভিযানের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন সাংবাদিক শিরিন (৫১)। এ সময় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তিনি নিহত হন বলে জানান ঘটনাস্থলে থাকা তাঁর সহকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। সাংবাদিক শিরিনের নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ওঠে।

এই কংগ্রেসনাল চিঠির নেতৃত্ব দিচ্ছেন কারসন। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমরা এই মহান সাংবাদিককে হারিয়ে শোক পালন করে যাচ্ছি। তিনি দায়িত্ব পালনকালে মর্মান্তিকভাবে খুন হয়েছেন। আমরা এর জবাব চাই।’

এই কংগ্রেসম্যান আরও বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে এই জবাব হবে সঠিক। সেটা হবে স্বচ্ছ এবং সময়মতো।’

এই সপ্তাহের শুরুর দিকে দ্য ইন্টারসেপ্ট প্রথম এই চিঠিটি প্রকাশ করে। এতে আল-জাজিরার সাংবাদিককে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা তদন্তে মার্কিন সরকারকে সরাসরি যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

আরও পড়ুন

এতে বলা হয়, ‘ওই অঞ্চলের ভঙ্গুর পরিস্থিতি এবং শিরিনের মৃত্যু ঘিরে পরস্পরবিরোধী তথ্য আসায় শিরিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত শুরু করতে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘মার্কিন নাগরিক হিসেবে শিরিন সুরক্ষা পেয়ে থাকেন এমন আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টিও নিশ্চিত হতে আমরা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বিদেশে বসবাসরত মার্কিন নাগরিকেরা যেসব সুরক্ষা পেয়ে থাকেন, একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে শিরিনও সেসব সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।’

কারসন বলেন, সমর্থন পেতে এখনো ক্যাপিটল হিলে চিঠিটি বিতরণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫৫ জনের বেশি আইনপ্রণেতার স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যা ‘ব্যাপক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যে বন্দুকের গুলিতে শিরিন নিহত হয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সম্ভবত সেটি শনাক্ত করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে তারা। তবে বলেছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বুলেটটি হস্তান্তর না করলে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবে না।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা তাদের নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। আস্থাহীনতার অতীত অভিজ্ঞতার কারণে তারা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে বুলেট হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

তবে শিরিন হত্যাকাণ্ড তদন্তের পরিকল্পনা ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর নেই বলে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরায়েলের সামরিক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, ইসরায়েলের সেনাদের সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে কোনো তদন্ত হলে ইসরায়েলি সমাজের ভেতরে তা বিরোধিতা সৃষ্টি করবে।