দুর্গতদের খাবারের জন্য হাহাকার

খাবারের জন্য রেস্তোরাঁগুলোর বিশাল সারি তৈরি হয়েছে। মানুষকে বিনা মূল্যে খাবার দিচ্ছে অনেক রেস্তোরাঁ। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন সহায়তা নেই।

তুরস্কের একটি রেস্তোরাঁয় তৈরি খাবার ভূমিকম্প দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। গতকাল দেশটির কাহরামানমারাস শহরেছবি: রয়টার্স

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক এলাকায় তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে। এই পরিস্থিতিতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্বজনহারা–গৃহহারা মানুষ। খাবারের জন্য হাহাকার চলছে। একটু গরম খাবারের আশায় রেস্তোরাঁগুলোর সামনে ভিড় করছে মানুষ। ক্রমশ সে সারি আরও দীর্ঘ হচ্ছে।

তুরস্কের গাজিয়ানেতেপ খাবারের রাজধানী হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত ছিল। কিন্তু গত সোমবারের ভূমিকম্পের পর এ শহরের চিত্র বদলে গেছে। এখানে কমপক্ষে দুই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ঝুঁকি বিবেচনায় হাজারো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তীব্র শীতের মধ্যে অনেকের আশ্রয় এখন খোলা জায়গায় খাটানো তাঁবু। এ পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষের পাশে খাদ্যসহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই।

ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি হারানো আজদে গানেস খাবার দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য গাজিয়ানতেপের রেস্তোরাঁগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, ‘খাবারের জন্য রেস্তোরাঁগুলোর বিশাল সারি তৈরি হয়েছে। মানুষকে বিনা মূল্য খাবার দিচ্ছে অনেক রেস্তোরাঁ। সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সহায়তা নেই।’

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের পর রেস্তোরাঁগুলোর পাশাপাশি হাজারো মানুষ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। যে যেভাবে পারছেন, সহায়তা করছেন। কেউ কেউ নিজের গরু পর্যন্ত বিক্রি করে সহায়তা করছেন।

ভূমিকম্পে ঘর ভেঙে গেছে আহমেদ হাজ হোসেনের। খাবারের সন্ধানে থালা হাতে বেরিয়েছেন তিনি। গত শনিবার সিরিয়ার জান্দারিস শহরে
ছবি: রয়টার্স

গাজিয়ানতেপের ইমাম কাগদাস রেস্তোরাঁ মাংসের স্টু ও বাকলাভা মিষ্টির জন্য পরিচিত। তারা এখন দৈনিক চার হাজার মানুষকে বিনা মূল্যে খাওয়াচ্ছে। রেস্তোরাঁর মালিকের ছেলে বুরহান কাগদাস বলেন, যেসব খাবার সহজে প্রস্তুত করা যায় এবং পরিবেশন সহজ সেগুলো তৈরি করছেন তাঁরা। এসব খাবার মূলত ঠান্ডার বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে পাস্তা ও সকালে বিশেষ স্যুপ। বুরহান বলেন, ‘প্রতিদিন রেস্তোরাঁয় চার থেকে পাঁচ ধরনের খাবার তৈরি হচ্ছে। আমাদের খাবার ফুরিয়ে গেলে অন্য রেস্তোরাঁ ও ব্যবসায়ীরা সাহায্য করছেন। তারা জানে আমরা দুর্গত মানুষকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছি।’

ইমাম কাগদাস বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের প্রচলিত খাবার তৈরি করতে পারছেন না। কারণ, প্রয়োজনীয় অনেক উপকরণ এখন পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কর্মী কাজ করতেও পারছেন না। তবে তাঁরা এখন টমেটো, পেঁয়াজ, মাংস ও মসলা দিয়ে তাভা নামের খাবার তাঁরা তৈরি করছেন। বুরহান বলেন, ‘সহকর্মীরা খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। অনেকের পরিবারে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। গত সোমবার থেকে তাঁর নিজের পরিবারও গাড়ির মধ্যে ঘুমাচ্ছে।’ বুরহান বলেন, ‘আমরা যত দিন পারব মানুষকে সাহায্য করে যাব।’

কাগদাস ছাড়াও গাজিয়ানতেপের অন্য রেস্তোরাঁগুলোও মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। ফিরিনো নামের রেস্তোরাঁর সামনে দুপুরে শত শত মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। গাজিয়ানতেপের পর্যটন জেলায় মেশুর কালেয়ালতি রেস্তোরাঁটিও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন তারা তিন হাজার স্যুপ ও রুটি দিচ্ছে।

গাজিয়ানতেপের ফেস্টিভ্যাল পার্কে এখন তাঁবু খাটিয়ে গৃহহীনদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেও প্রবেশপথে বিনা মূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে। তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া ডেনিজ এরদোগলু স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে খাবারের আশায় বিভিন্ন রেস্তোরাঁর সামনে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা আমাকে রাতের খাবারের জন্য রেস্তোরাঁর সামনের সারিতে দাঁড় করিয়েছে। এখানে একটু ভালো খাবার পাওয়া যায়।’

এরদোগলুর মতো মানুষের প্রয়োজন মেটাতে মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ ট্রাকে করে জরুরি ত্রাণসহায়তা দিচ্ছে। তবে সরকারি সাহায্যের চেয়ে বেশি এগিয়ে এসেছেন সাধারণ মানুষ। কারস এলাকার ৭০ বছর বয়সী সারিগুল কাচান ১৩ হাজার লিরায় (৭৩ হাজার টাকা প্রায়) তাঁর গরু বিক্রি করে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এরজুরামের পেনশন নিয়ে চলা বাসিন্দা নাজিমে কিলিকও তাঁর গরু বিক্রি করে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় কমপক্ষে ৮ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জরুরি গরম খাবার সহায়তা দরকার। শুধু সিরিয়াতেই ৫৩ লাখের বেশি মানুষ গৃহহারা হয়েছে।