নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০ দেশ

একটি দেশে নারীদের নিরাপত্তা শুধু আইন দিয়ে নির্ধারিত হয় না। এটি নির্ভর করে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার ওপর; যেখানে আইন, সমাজ, সংস্কৃতি, প্রশাসন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা—সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর সব কটিরই উন্নয়ন প্রয়োজন হয়। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় ও নরওয়েভিত্তিক পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলো প্রতিবছর ‘নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচক’ প্রকাশ করে। সূচকে নারীদের শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দিক থেকে বিশ্বের কোন দেশের কী অবস্থান, তা তুলে ধরা হয়। ১৭৭টি দেশের ওপর তৈরি করা ২০২৩–২৪ সালের এ সূচক অনুযায়ী নারীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ১০টি দেশ সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।

ডেনমার্ক

ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরের একটি ব্যস্ত সড়ক
ছবি: রয়টার্স

শান্তিপূর্ণ সমাজ, নারীবান্ধব আইন ও ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা ডেনমার্ককে নারীর নিরাপত্তায় বিশ্বের সেরা দেশে পরিণত করেছে। এখানে নারীরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মক্ষেত্রে সমান সুযোগ পান এবং একজন নারী রাতেও নির্বিঘ্নে একা চলাচল করতে পারেন।

ডেনমার্কে নারী-পুরুষের মজুরির ব্যবধান কম এবং সরকার মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটির সুষম নীতি চালু রেখেছে। নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে ডেনমার্কের স্কোর শূন্য দশমিক ৯৩২, যা এ তালিকার সর্বোচ্চ।

সুইজারল্যান্ড

সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বিখ্যাত শপিং স্ট্রিট বাহনহফস্ট্রাস
ছবি: রয়টার্স

সুইজারল্যান্ডে নারীরা আইনগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক—সব ক্ষেত্রেই পূর্ণ সুরক্ষা পান। উচ্চ জীবনমান, সমতাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা ও বিচার বিভাগে নারীর পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার সংস্কৃতি দেশটিকে এ তালিকায় শীর্ষে রেখেছে।

সুইজারল্যান্ডের সমাজে সহনশীলতা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সূচকে দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৯২৮।

সুইডেন

সুইডেনের স্টকহোম শহরের একটি আবাসিক এলাকা
ছবি: রয়টার্স

সমাজকল্যাণ, শিক্ষা ও নারীর অধিকার রক্ষায় সুইডেন বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে দেশটির আইনি কাঠামো শক্তিশালী ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে রয়েছে কঠোর আইন।

সুইডেনে রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। নারী নিরাপত্তা সূচকে দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৯২৬।

ফিনল্যান্ড

ফিনল্যান্ডের পতাকা
ছবি: রয়টার্স

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় ফিনল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি। নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে দেশটিতে রয়েছে কঠোর সামাজিক সচেতনতা ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ।

ফিনিশ সমাজে নারী নেতৃত্বকে উৎসাহ দেওয়া হয় এবং নারীরা নিজস্ব মতপ্রকাশে স্বাধীন। নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে ফিনল্যান্ডের স্কোর শূন্য দশমিক ৯২৪।

লুক্সেমবার্গ

লুক্সেমবার্গের একটি সড়কে হাঁটছেন মানুষ
ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ছোট একটি দেশ লুক্সেমবার্গে নারীরা পাচ্ছেন উঁচুমানের স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা। এখানে নারী-পুরুষ সমতা শুধু কাগজে-কলমে নয়; বরং বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হয়।

লুক্সেমবার্গে কর্মস্থলে যৌন হয়রানির ঘটনা অত্যন্ত কম এবং পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৯২৪।

আইসল্যান্ড

আইসল্যান্ডের পতাকা
ছবি: রয়টার্স

আইসল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বে নারী-পুরুষ সমতায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। দেশটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসনব্যবস্থায় নারীরা সমান সুযোগ পান এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে রয়েছে জিরো টলারেন্স নীতি।

নারীদের নিরাপদ চলাফেরা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে আইসল্যান্ডের স্কোর দশমিক ৯২৪।

নরওয়ে

নরওয়ের পতাকা
ছবি: রয়টার্স

উন্নত কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে নরওয়ে নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও চাকরির ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য রক্ষায় পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থাও রয়েছে দেশটিতে।

নরওয়েতে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনায় বিচারব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর। নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে নরওয়ের স্কোর শূন্য দশমিক ৯২০।

অস্ট্রিয়া

অস্ট্রিয়ায় নারীরা আইনি সুরক্ষা, সমান মজুরি ও মাতৃত্বকালীন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। দেশটিতে নারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ রয়েছে।

নারীরা রাজনীতি ও প্রশাসনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন অস্ট্রিয়ায়। নারী নিরাপত্তা সূচকে অস্ট্রিয়ার স্কোর শূন্য দশমিক ৯১১।

নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডসে নারীরা সমাজের সর্বস্তরে নিরাপত্তা ও সম্মান পান। কর্মক্ষেত্রে সমতা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিশু লালনপালনে সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায়। নারী নেতৃত্ব ও আইনি সচেতনতা সেখানকার সমাজকে আরও নিরাপদ করে তুলেছে।
যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কার্যকর নীতিমালা রয়েছে। নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৯০৮।

১০

নিউজিল্যান্ড

নারী নেতৃত্ব, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় নিউজিল্যান্ডের অবস্থান প্রশংসনীয়। এখানকার সরকার পারিবারিক সহিংসতা রোধে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু রেখেছে।
নারী অধিকার নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা থাকায় নিউজিল্যান্ডে নারীরা স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করতে পারেন। নারী শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকে দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ৯০৪।