আলোচনায় ইউক্রেন-ফিলিস্তিন

  • ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘একতরফা স্বীকৃতি’ মেনে না নেওয়ার ঘোষণা ইসরায়েলের।

  • পরবর্তী ৪০ বছর পূর্ব এশিয়া হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ভবিষ্যৎ।

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে কথা বলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল। গতকাল জার্মানির মিউনিখেছবি : এএফপি

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষ দিন ছিল গতকাল রোববার। এই আয়োজন ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আয়োজন ঘিরে জার্মানির মিউনিখে জড়ো হন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারকেরা। সম্মেলনে এবার আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের টেকসই সমাধান এবং ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়টি। এ ছাড়া রাশিয়ার কারাবন্দী বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির আকস্মিক মৃত্যুর বিষয়টিও এতে স্থান পায়।

সম্মেলনের সমাপনী দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের বক্তব্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়টি স্থান পায়। তিনি মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যে ভূমিকা রাখতে চাইলে ইইউকে আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বোরেল বলেন, ‘প্রশ্ন হলো দুই রাষ্ট্র সমাধান সমর্থনের মতো রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার সুযোগ ইউরোপের আছে কি না। আমি মনে করি, সেটা আছে। কিন্তু এ জন্য আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

ইইউ পররাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা যদি ভূরাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে চাই, আমাদের আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যেভাবে ইইউর একটি দেশের ভিন্ন অবস্থান ছাড়া আমরা ইউক্রেনের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। কিন্তু এই (ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত) ইস্যুতে বিক্ষিপ্ত অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। ইইউর অনেক সদস্য এ ক্ষেত্রে নিজেদের মতো করে ভূমিকা রাখতে চায়।’

বোরেল বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি সুস্পষ্ট সম্ভাবনা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসবে না। আর ইসরায়েলের নিরাপত্তা শুধু সামরিক উপায়ে নিশ্চিত করা যাবে না।

‘নতুন ঘোষণা’ পেশ নেতানিয়াহুর

মিউনিখ সম্মেলনে যখন নেতারা মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন, তখন গতকাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ‘একতরফা স্বীকৃতি’ মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে একতরফাভাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা সম্পর্কে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শোনা মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে আজ আমি এই বিষয়ে সরকারের অনুমোদনের জন্য একটি ঘোষণামূলক সিদ্ধান্ত পেশ করছি।’

এই ঘোষণার মধ্যে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে ইসরায়েল; কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই পক্ষগুলোর মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমেই কেবল এ ধরনের সমাধান অর্জিত হতে পারে; ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একতরফা স্বীকৃতির বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে ইসরায়েল।

এর আগে গতকাল মিউনিখ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ জোর দিয়ে বলেন, গাজায় অবিলম্বে যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো যুদ্ধবিরতি।

সম্মেলনে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, ‘ইসরায়েলের তৈরি জঞ্জাল পরিষ্কারের দায় আমাদের নেওয়া উচিত নয়। ফিলিস্তিনিরা রাষ্ট্রের অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ শান্তি পেতে পারি না।’

নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার বলেন, মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বিষয়ে তাঁর একটি পর্যবেক্ষণ হলো, ইসরায়েল আন্তর্জাতিকভাবে অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ইউক্রেনে ‘শান্তি প্রক্রিয়া’

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিউনিখ সম্মেলনে ইউক্রেন যুদ্ধ বিশেষ গুরুত্ব পায়। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ দেশটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা সম্মেলনের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ অবসানে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই বৈঠক হয় বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা

মিউনিখ সম্মেলনের আগে ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে হইচই শুরু হয়। তিনি বলেছিলেন, ইউরোপের দেশগুলো নিজেরা পর্যাপ্ত ব্যয় না করলে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

সম্মেলনে রিপাবলিকান সিনেটর জে ডি ভান্সের মুখেও একই কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ওহাইও থেকে নির্বাচিত এই সিনেটর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ব এশিয়ার ওপর জোর দিতে হবে। পরবর্তী ৪০ বছরের জন্য এটাই হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ভবিষ্যৎ। এ বিষয়ে ইউরোপকে সচেতন হতে হবে।