দেশে দেশে ভিন্নধর্মী বড়দিন

সুইডেনে বড়দিন উপলক্ষে বানানো হয় ৪২ ফুটের বেশি উঁচু খড়ের ছাগল। একে ঘিরে নববর্ষ পর্যন্ত উৎসব করেন সুইডিশরাফাইল ছবি: এএফপি

আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বজুড়ে নানা আনন্দ-আয়োজনে বড়দিন উদ্‌যাপন করা হয়। সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি। চোখধাঁধানো আতশবাজি ও আলোকসজ্জায় পূর্ণতা পায় উৎসব।

তবে এবার উৎসবের ছোঁয়া নেই যিশুর জন্মস্থান ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথলেহেম শহরে। এর কারণ, ফিলিস্তিনের গাজায় আড়াই মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও ব্যাপক প্রাণহানি। প্রতিবছর বড়দিনে বেথলেহেমের সড়ক বর্ণিল আলোতে সাজানো হয়।

এবার বেথলেহেমের সবখানে সুনসান নীরবতা। জ্বালানো হয়নি রঙিন বাতি। হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বাজারে ভিড় নেই। ইউএস নিউজের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা গত নভেম্বরে জানিয়ে দিয়েছেন, এবারের বড়দিনে বেথলেহেমে আনন্দ-উৎসব হবে না। প্রকাশ্যে উৎসব করতে মানা করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনিদের জন্য এবারের বড়দিন আনন্দের বার্তা নিয়ে না এলেও বিশ্বের নানা প্রান্তে আনন্দ-আয়োজনের কমতি নেই। বড়দিনে ব্যতিক্রমী কিছু ঐতিহ্য, আয়োজনও চোখে পড়ে। সুইডেনে বিশালাকারের একটি খড়ের ছাগল বানানো হয়। ৪২ ফুটের বেশি উঁচু, ২৩ ফুট চওড়া আর সাড়ে তিন টনের বেশি ওজনের ছাগলটি ঘিরে নববর্ষ পর্যন্ত উৎসব করেন সুইডিশরা। ১৯৬৬ সালে চালু হওয়ার পর সুইডেনে এটা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে।

বড়দিনে রঙিন বাতি দিয়ে চারপাশ সাজানো অত্যাবশ্যকীয় একটি অনুষঙ্গ। তবে ফিলিপাইনের সান ফার্নান্দো শহরে লণ্ঠন উৎসব হয়। যিশুর জন্মের সময় বেথলেহেমের আকাশে দেখা যাওয়া জ্বলজ্বলে তারার প্রতীক ধরা হয় একেকটি লণ্ঠনকে। শহরটির রাতের আকাশ আলোকিত করে একসঙ্গে জ্বলে ওঠে হাজারো লণ্ঠন, রঙিন বাতি।

আয়ারল্যান্ডের মানুষ বড়দিনের সময় রাতভর বাড়ির সামনের জানালায় বড় আকারের একটি লাল মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখেন। তাঁদের কাছে এই ঐতিহ্য ছুটির মৌসুমে উষ্ণতা ও আশ্রয়ের প্রতীক। আর অস্ট্রিয়াসহ আলপাইন অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, ক্র্যাম্পাস নামে শয়তান-সদৃশ এক প্রাণী তাঁদের উৎসবে যোগ দেবে। এর আগে শিশুদের ভালো-খারাপ কাজের তালিকা করতে বলা হয়। বিশ্বাস করা হয়, ভালো কাজের জন্য শিশুদের মিষ্টি, আপেল ও বাদাম দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। আর খারাপ কাজ করলে শিশুদের জন্য শাস্তির খড়্গ নিয়ে হাজির হবে ক্র্যাম্পাস।

খাওয়াদাওয়া ছাড়া কি আর কোনো উৎসব জমে! ব্যতিক্রম নয় বড়দিন। কেক-পিঠার মতো প্রচলিত খাবারের বাইরে এই দিন সকালে ফিনল্যান্ডের মানুষ চাল, দুধ, দারুচিনি, মাখন দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ‘পোরিজ’ আর পুডিং খান।

অন্যদিকে বার্বাডোজের মানুষের খাবার টেবিলে সেদ্ধ করা (বেকড) মাংস থাকতেই হবে। এই মাংস আনারস দিয়ে সাজানো হয়। সঙ্গে থাকে রাম কেক ও ‘জুগ জুগ’ নামে ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। মটরশুঁটি, কর্ন ফ্লাওয়ার আর লবণ দেওয়া মাংস দিয়ে এটা বানানো হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ এ দিনে মাংসের পদ এবং কাস্টার্ডের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী মালভা পুডিং খান।

আইসল্যান্ডে বড়দিনের উৎসব শুরু হয় ১৩ দিন আগে। প্রতি রাতে শিশুরা জানালায় জুতা ঝুলিয়ে রেখে ঘুমাতে যায়। বিশ্বাস করা হয়, সকালে উঠে ওই জুতার ভেতরে ভালো শিশুরা চকলেট আর দুষ্টু শিশুরা পচা আলু উপহার পাবে। আর বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় ডেনমার্কের প্রতিটি পরিবার ঘরের মাঝখানে ক্রিসমাস ট্রি রাখে। পরে সেটি ঘিরে তাঁরা নাচগানে মেতে ওঠেন।

ব্রাজিল ও পর্তুগালে পরিবারের সদস্যরা বড়দিনের আগের রাতে ১০টার মধ্যে একসঙ্গে খাবার খেতে জড়ো হন। এরপর মধ্যরাতে পরিবারের সদস্যরা একে অপরকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানান, উপহার দেন। প্রতিটি শহরের কেন্দ্রে আতশবাজি ফোটানো হয়।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করছে ইউক্রেন। এরপরও দেশটির মানুষকে বড়দিনের আমেজ ছুঁয়ে গেছে। রাজধানী কিয়েভে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। যদিও ইউক্রেনের সংখ্যাগরিষ্ঠ অথোডক্স খ্রিষ্টানরা ধর্মীয় রীতি মেনে প্রতিবছর ৭ জানুয়ারি বড়দিন উদ্‌যাপন করেন। বড়দিনে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সড়কে মিছিল করেন ইউক্রেনবাসী। গম, মধু আর বাদামের তৈরি বিশেষ একটি খাবার এদিন পাতে তুলে নেন তাঁরা।

যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেনে শুরু হয়েছে বড়দিনের আয়োজন। ২০ ডিসেম্বর, িকয়েভে
রয়টার্স

মেক্সিকোয় বড়দিনের উৎসব শুরু হয়ে যায় ডিসেম্বরের শুরুতেই। রঙিন পোশাক পরে সড়কে নেচে-গেয়ে, মিছিল করে উৎসবের এই দিন উদ্‌যাপন করেন দেশটির মানুষ।

দেশে দেশে ঐতিহ্য ও উৎসবের ধরন যেমনই হোক না কেন, বড়দিনে আনন্দে মেতে উঠবে যিশুভক্তরা। ধর্মীয় রীতি মেনে মানবকল্যাণে প্রার্থনা করা, এরপর নেচে-গেয়ে, মিছিল করে আনন্দ সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া আর জম্পেশ খাওয়াদাওয়া—এসবই উৎসবের দিনটিকে করে তোলে বিশেষ।

তথ্যসূত্র: ইউএস নিউজ ও কান্ট্রিলিভিং.কম