ইমরানকে ঘিরে যত বিতর্ক

বিতর্ক কখনোই পিছু ছাড়েনি তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানের। একাধিক বিয়ে থেকে সন্ত্রাসে মদদ—সব ধরনের বিতর্কেই জড়িয়েছে তাঁর নাম। ছবি: এএফপি
বিতর্ক কখনোই পিছু ছাড়েনি তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খানের। একাধিক বিয়ে থেকে সন্ত্রাসে মদদ—সব ধরনের বিতর্কেই জড়িয়েছে তাঁর নাম। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার প্রহর গুনছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে রাজনীতিতে নেমেছিলেন ইমরান। গঠন করেন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। তবে বিতর্ক কখনোই তাঁর পিছু ছাড়েনি। একাধিক বিয়ে থেকে সন্ত্রাসে মদদ—সব ধরনের বিতর্কেই জড়িয়েছে ইমরানের নাম।

পাকিস্তানে গত বুধবার অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ইমরান খানের দল পিটিআই ১১৭ আসন পেয়ে সরকার গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে। কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের প্রতিষ্ঠিত দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) পেয়েছে ৬৪টি আসন। দেশটির হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ঘিরে থাকা নানা বিতর্কের এক ফিরিস্তি দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

নারীবাদ
পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ইমরান নারীবাদীদের মোটেও পছন্দ করেন না। তিনি মনে করেন, নারীবাদের ধারণা পুরোপুরি পশ্চিমা। গত জানুয়ারিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেছিলেন, নারীবাদের কারণে ‘মায়ের ভূমিকায় নারীদের অধঃপতন ঘটে’। সমালোচকেরা বলছেন, রক্ষণশীলদের ভোট আদায় করতেই পিটিআই চেয়ারম্যানের এই নতুন রূপ!

ব্লাসফেমি আইন
পাকিস্তানের বিতর্কিত ব্লাসফেমি আইন রক্ষায় রাস্তায় নেমেছিলেন ইমরান। ব্লাসফেমি আইনে দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান আছে। বুধবারের নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে ইমরান খান বলেন, তাঁর রাজনৈতিক দল ব্লাসফেমি আইনকে সমর্থন করে এবং এই আইন রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। নিন্দুকেরা বলছেন, তাঁর দেওয়া এই বক্তব্য আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জন্য ‘হুমকিস্বরূপ’।

‘তালেবান খান’
২০১৩ সালে ইমরান বলেছিলেন, পাকিস্তানে তালেবানের কার্যালয় খোলার অনুমতি দেওয়া উচিত। এ ছাড়া যে মাদ্রাসায় তালেবানের শীর্ষ নেতা মোল্লা ওমর ও জালালউদ্দিন হাক্কানি পড়াশোনা করেছিলেন, সেই মাদ্রাসার প্রধান ব্যক্তি সামি-উল হকের সঙ্গে মিত্রতার সম্পর্ক রয়েছে পিটিআইয়ের।

নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর জঙ্গি হামলার নিন্দাজ্ঞাপনেও খুব একটা সরব ছিলেন না ইমরান খান। শুরু থেকেই তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালানোর বিষয়ে আগ্রহ জানিয়ে আসছেন এই সাবেক ক্রিকেটার। এসব কারণে তাঁর নামকরণ করা হয়, ‘তালেবান খান’।

মার্কিন ড্রোন হামলার বিরোধিতা
যুক্তরাষ্ট্রের চালানো ড্রোন হামলার বিরোধিতা করে বেশ কয়েকবার র‍্যালি করেছেন ৬৫ বছর বয়সী রাজনীতিক ইমরান। তাঁর দাবি, এসব ড্রোন হামলায় পাকিস্তানের বেসামরিক মানুষ নিহত হচ্ছে। তবে মার্কিন সরকার বরাবরই এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিমানবন্দরে মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তাদের জেরার মুখে পড়েছিলেন ইমরান। পাকিস্তানে চালানো ড্রোন হামলার বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চেয়েছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

দুর্নীতি
দুর্নীতিবিরোধী স্লোগানে আওয়াজ তুলেই রাজনীতিতে এসেছিলেন ইমরান খান। দুর্নীতিকে দেশের ‘নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি’ বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগে সেই ইমরানই অন্যান্য দলের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের পিটিআইয়ে বরণ করে নিয়েছেন! গত এপ্রিল মাসে ইমরান ঘোষণা দিয়েছিলেন, নিজ দলের ২০ জন আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য তিনি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে সুপারিশ করবেন। কারণ তাঁদের বিরুদ্ধে সিনেট নির্বাচনের সময় ভোট বিক্রির অভিযোগ ছিল।