ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব না তুলেই অধিবেশন মুলতবি

ইমরান খান
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন না করেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার আসাদ কায়সার। জাতীয় পরিষদের সদ্যপ্রয়াত সদস্য খায়াল জামানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ শুক্রবার অধিবেশন শুরুর পরপরই তা মুলতবি করা হয়। খবর ডনের।
আজ পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রয়াত জাতীয় পরিষদ সদস্য খায়াল জামান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রফিক তারারের জন্য দোয়া করা হয়। এরপর স্পিকার আসাদ কায়সার বলেন, জাতীয় পরিষদের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে পার্লামেন্টের রীতি অনুযায়ী অধিবেশন মুলতবি করতে হয়। আগামী সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেল চারটা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন তিনি।

ইমরানের বিরুদ্ধে ৮ মার্চ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানায় তারা। পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, লিখিত আবেদন জমা পড়ার ১৪ দিনের মধ্যে স্পিকারকে আলোচনার জন্য অধিবেশন ডাকতে হবে। সে অনুযায়ী, ২২ মার্চের মধ্যে অধিবেশন আয়োজন করার কথা ছিল। তবে ২২ মার্চ থেকে জাতীয় পরিষদে ওআইসির দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি। এমন অবস্থায় আজ অধিবেশন ডাকেন স্পিকার।

আজকের অধিবেশনে ক্ষমতাসীন দল পিটিআই-এর নেতা শাহ মাহমুদ কোরেশি, শিরিন মাজারি, আসাদ উমর ও আলি মুহাম্মদ খান অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা শেহবাজ শরিফ, পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলি জারদারিসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ বিরোধীদলীয় নেতাকেও অধিবেশনে অংশ নিতে দেখা যায়।
অধিবেশনের আগে বিরোধী দলগুলোর নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠকও করেছেন। পিপিপির বরাতে ডন জানিয়েছে, বৈঠকে আইনপ্রণেতাদের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় পরিষদ সচিবালয় থেকে আজকের অধিবেশনের জন্য ১৫ দফার আলোচ্যসূচি দেওয়া হয়। এ সূচিতে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের বিষয়টিও উল্লেখ করা ছিল।

তবে আলোচ্যসূচিতে থাকার পরও আজকের অধিবেশনে আদৌ আলোচনার জন্য অনাস্থা প্রস্তাবটি উত্থাপন হবে কি না, তা নিয়ে আগে থেকেই সংশয় ছিল। ধারণা করা হচ্ছিল, জাতীয় পরিষদ সদস্য খায়াল জামানের মৃত্যুর পর আয়োজিত অধিবেশনের প্রথম দিনটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলবে না। সংসদীয় বিধি অনুযায়ী, পরিষদের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে প্রথম দিনের অধিবেশনটি বিদেহী আত্মার শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায়।

গুঞ্জন ছিল, জাতীয় পরিষদ স্পিকার ৩০ অথবা ৩১ মার্চ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করতে পারেন। অবশ্য তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী ডনকে বলেছিলেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা নেই।

অধিবেশন শুরুর আগে জাতীয় পরিষদের বিরোধীদলীয় নেতা শেহবাজ শরিফ বলেন, আজকের অধিবেশনেই যেন অনাস্থা প্রস্তাব তোলা হয়, সে চেষ্টা চালাবে বিরোধী জোটগুলো। তবে প্রস্তাব উত্থাপিত না হলে তারা তাদের নিজেদের মধ্য আলোচনা করবে।

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, ৩৪২ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় পরিষদে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজন ১৭২ ভোটের। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও কয়েকজন মন্ত্রী অভিযোগ করেছেন অনাস্থা ভোটকে সামনে রেখে বিরোধী দলগুলো বাণিজ্য শুরু করেছে। অর্থের বিনিময়ে ইমরানের নিজ দল পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতাদের কিনে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।