পিটিআইকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে সেনাবাহিনী: ইমরান

পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফকে (পিটিআই) ধ্বংস করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন। ইমরান খান বলেছেন, দেশটির সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি তাঁর দলটিকে ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে তাঁকেও সামরিক আদালতে বিচার করে কারাগারে দেওয়া হতে পারে, এ বিষয়ে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই।

এর আগেও ইমরান খান তাঁর দলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে গতকাল শনিবার রাতে লাহোরে তাঁর বাসায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরি সেনাবাহিনীর ওপর দোষ চাপিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ইমরান বলেন, এটা সম্পূর্ণ সেনাবাহিনী করেছে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

পাকিস্তানে বিভিন্ন জরিপে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে থাকা নেতা ইমরান খান এক বছর ধরে বিক্ষোভ করে আসছেন। গত মাসে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ও সেনা স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটার পর থেকে সেনাবাহিনী সরাসরি সামনে আসে। ওই হামলার জন্য পিটিআই সমর্থকদের দায়ী করা হয়। ২২ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, তাঁকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে গ্রেপ্তারের পর ভুয়া অভিযান চালানো হয়।

কর্তৃপক্ষ ইমরান খানের দলের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু করে। সন্দেহভাজন হিসেবে তারা বেশ কয়েকজনকে সামরিক আদালতে বিচারের জন্য তুলে নেয়। ইমরান খান বলেন, ‘আমাকে কারাগারে নেওয়ার জন্য এটাই তাদের কাছে একমাত্র পথ ছিল।’ তিনি অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনী তাঁর আগামী নভেম্বরে দেশটির সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে চায়। তিনি বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ১৫০টি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা যেকোনো আদালতে বাতিল হয়ে যাবে। তাই তাঁদের একমাত্র আশা, সামরিক আদালতে নিয়ে তাঁকে কারাবন্দী করে রাখা। বর্তমানে জামিনে থাকা ইমরান বলেন, ‘সামরিক আদালত আমার জন্য, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।’

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের সামরিক আদালতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না। এতে স্বচ্ছতার ঘাটতি, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি ও ন্যায্যবিচার ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ইমরান খান অভিযোগ করেন, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই তাঁর দলের নেতা–কর্মীদের দমন–পীড়নে যুক্ত। তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের ডেকে নিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে আইএসআই।

ইমরান বলেন, তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বর্তমান সংকট দূর করার বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের কোনো সাড়া পাননি। তিনি জানেন না, বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির কেন তাঁকে সরিয়ে দিতে চাইছেন।

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধান হওয়ার আগে আসিম মুনির আইএসআই প্রধান ছিলেন। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ওই পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিলেন ইমরান। গত বছর ইমরান খান আস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন। তবে তিনি এর পেছনে সাবেক সেনাপ্রধানের হাত থাকার অভিযোগ আনেন। সেনাবাহিনী তা অস্বীকার করে।

আসিম মুনিরকে আইএসআই পদ থেকে সরানোর কোনো কারণ জানায়নি ইমরানের তৎকালীন প্রশাসন। ইমরান খান স্বীকার করেন, তিনিই তাঁকে সরে যেতে বলেছিলেন। সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, ‘মুনিরকে সরে যেতে বলার কারণে তাঁর ক্ষোভ থাকতে পারে। কিন্তু আমি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কীভাবে গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালিত হচ্ছিল, তা নিয়ে ইস্যু ছিল।’

আসিম মুনিরকে পরবর্তী সময়ে দেশটির সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। ইমরান খান বলেন, মুনির এখন যেহেতু সেনাপ্রধান হয়েছেন, তাঁর আগের ক্ষোভ থাকা উচিত নয়।

ইমরান খান আরও বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা দেখে তিনি ধন্দে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে ৫০ বছর ধরে চেনেন সবাই। আমি দেশের সব পুরস্কার জিতেছি। সবচেয়ে পরিচিত পাকিস্তানি হিসেবেও আমাকেই চেনেন সবাই। কিন্তু হঠাৎ আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হচ্ছে যেন আমি ভিনগ্রহের কেউ, এ দেশের শত্রু।’

ইমরানের খবর প্রচার বন্ধ

দ্য ইন্টারসেপ্ট ডটকম জানায়, পাকিস্তানি গণমাধ্যম থেকে হঠাৎ ইমরান খানের খবর উধাও হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও দেশটির অধিকাংশ গণমাধ্যমজুড়ে ইমরান খানের নানা বিষয় নিয়ে খবর প্রকাশিত হতো।

কিন্তু দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেশটির গণমাধ্যমমালিকদের ইসলামাবাদে গোপন এক বৈঠকে ডাকা হয়। সেখানে তাঁদের দেশটির রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট নিয়ে খবর প্রচারে নিষেধ করা হয়। সেখানে সরাসরি ইমরান খানের কোনো খবর প্রকাশ না করতে বার্তা দেওয়া হয়।

ওই বৈঠকের পর থেকে দেশের শীর্ষ সম্পাদক ও বার্তা সংস্থাগুলো সাংবাদিকদের ইমরান খানের খবর প্রকাশে নিষেধ করে দেয়। পাকিস্তানের সাংবাদিকেরা নাম প্রকাশ না করে এ তথ্য দিয়েছেন।