সরকার গঠনে অচলাবস্থার দায় পিএমএল-এনের: বিলাওয়াল

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারিফাইল ছবি: এএফপি

পাকিস্তানে সরকার গঠন প্রশ্নে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে সর্বশেষ দুই দফার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এ অচলাবস্থার জন্য পিএমএল-এনকে দুষছেন পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি। এদিকে নির্বাচনে কারচুপি ঘিরে দেশটিতে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। দাবি উঠেছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগেরও।

নতুন সরকার গঠন নিয়ে গতকাল সোমবারের পিএমএল-এন ও পিপিপির পঞ্চম দফা বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এরপর আজ মঙ্গলবার আবারও দুই পক্ষ বৈঠকে বসলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে।

৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ৯২ আসনে জয়ী হন। এ ছাড়া নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন ৭৯ ও বিলাওয়ালের পিপিপি ৫৪ আসনে জয়ী হয়। বাকি আসনগুলোতে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়।

যদি অন্য কেউ নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেন, তাহলে অগ্রগতি হতে পারে। যদি তারা অবস্থান পরিবর্তনে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে আমি সামনে অচলাবস্থা দেখছি।
বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি, চেয়ারম্যান, পাকিস্তান পিপলস পার্টি

নির্বাচনে কোনো দলই সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। সরকার গঠনের জন্য ১৩৪ আসন দরকার। জল্পনা শুরু হয়েছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে সাংবিধানিক সময়সীমা পর্যন্ত দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিএমএল-এন ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা পিপিপির মধ্যে আলোচনা ও দর-কষাকষি চলতে থাকতে পারে।

দুই দলের সূত্র ডনকে বলছে, পিপিপির কারণে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা দীর্ঘায়িত হতে পারে। সরকারে যোগ দিতে নিজ দলের ভেতর থেকেসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে পিপিপি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে।

‘অবস্থান না পাল্টালে অচলাবস্থা’

তবে সরকার গঠনে সিদ্ধান্তহীনতার জন্য পরোক্ষভাবে পিএমএল-এনকে দায়ী করেছেন পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল। তিনি বলেছেন, যদি কেউ তাদের অবস্থান পাল্টাতে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে সরকার গঠনে সামনে অচলাবস্থা দেখছেন তিনি।

আজ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের পিপিপি চেয়ারম্যান বলেন, পিপিপি ও তিনি নিজেদের অবস্থানে অনড়। কোনোভাবেই এই অবস্থান থেকে সরবেন না বলেও জোর দিয়ে বলেছেন সাবেক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বিলাওয়াল বলেন, ‘যদি অন্য কেউ নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেন, তাহলে অগ্রগতি হতে পারে। যদি তারা অবস্থান পরিবর্তনে প্রস্তুত না থাকে, তাহলে আমি সামনে অচলাবস্থা দেখছি।’

আরও পড়ুন

পিপিপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি যদি পিএমএল-এনকে সমর্থন করতে চাই, তাহলে আমাকে সেটা আমার শর্তে মেনে করতে হবে, তাদের শর্তে নয়। আন্তরিকতার অভাবেই বিলম্ব হচ্ছে। যত দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে, ততই স্থিতিশীলতা ও আগামী সরকারের জন্য তা ভালো হবে।’

অবশ্য এর আগে পিপিপির নেতা কামার জামান কায়রা একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেছেন, জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতে এখনো ৮ থেকে ৯ দিন বাকি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হবে ২ বা ৩ মার্চ। সুতরাং যুক্তসংগত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে এখনো দুই পক্ষের কাছে যথেষ্ট সময় রয়েছে।

বিক্ষোভ জোরালো হচ্ছে

এদিকে নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে পাকিস্তানে বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। আজ দেশটিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। সিন্ধু প্রদেশে বিক্ষোভ করেছে গণতান্ত্রিক মহাজোট, পিটিআই, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও অন্যান্য দল। খাইবার পাখতুনখাওয়ায় বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টি।

এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজার অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেছেন পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলী খান। আদিয়ালা কারাগারের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘কারাগারে খান সাহেবের (ইমরান খান) সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করছে পিটিআই। আর এক দিনও তাঁর এই পদে থাকার অধিকার নেই।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন জামায়াত-ই-ইসলামের সিনেটর মুশতাক আহমেদও। নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।