শাহবাজের প্রতিদ্বন্দ্বী পিটিআইয়ের ওমর

জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী পদে ভোট আজ। ৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট পদে জারদারির বিরুদ্ধে পিটিআই-সমর্থিত এসআইসির প্রার্থী মাহমুদ খান।

শাহবাজ শরিফ ও ওমর আইয়ুব

পাকিস্তানে গত ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পর এবার জাতীয় পরিষদের নেতা বা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে (এসআইসি) যোগ দিয়ে ওই দল থেকেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য প্রার্থী দিয়েছেন। তাঁদের প্রার্থী পিটিআই নেতা ওমর আইয়ুব। প্রধানমন্ত্রী পদে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে যাচ্ছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) প্রার্থী শাহবাজ শরিফের। আজ শনিবার দুই দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়। জাতীয় পরিষদের সচিবালয় থেকে আজই দুজনের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী পদে ভোট হওয়ার কথা। জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা গোপন ব্যালটে ভোটের মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করবেন।

এর আগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদ সচিবালয় ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য সময় নির্ধারণ করেন। শনিবার বেলা দুইটার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়। সংবিধানে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী হতে হলে কোনো প্রার্থীকে ৩৩৬ পার্লামেন্ট সদস্যের মধ্যে ১৬৯ জনের ভোট পেতে হবে। যদি প্রধানমন্ত্রী পদে দুইয়ের অধিক প্রার্থী থাকেন এবং কোনো প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা (১৬৯ ভোট) পেতে ব্যর্থ হন; তবে আবারও ভোট নেওয়া হবে। প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুজন পরবর্তী দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যিনি ৫১ শতাংশ ভোট পাবেন, তিনি পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। আল-জাজিরার এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি আসন সংরক্ষিত। নারীদের ৬০টি ও সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি। তবে সংরক্ষিত আসনের সদস্য নির্বাচন ছাড়াই আজ প্রধানমন্ত্রী পদে ভোট হচ্ছে।

ইতিমধ্যে পিএমএল-এনের প্রার্থী শাহবাজ শরিফকে সমর্থন দিয়েছে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), ইস্তেকাম-ই-পাকিস্তান পার্টি ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এর অর্থ, তাঁর আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ অনেকটাই সুগম। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী হতে যত আসন দরকার, ওমর আইয়ুবের ততটি আসন নেই। তবে প্রশ্ন উঠছে সংরক্ষিত আসন ভাগাভাগি নিয়ে। এ বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি।

এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বিরোধীদের আনা অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয় ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। পরে শাহবাজের নেতৃত্বে বিরোধীরা জোট সরকার গঠন করে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আগে দেশটির নির্বাচন কমিশন পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে দলটিকে বাতিল ঘোষণা করে। দলটির প্রার্থীরা তাঁদের দলের নির্বাচনী প্রতীক ব্যাট নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। ফলে দলটির নেতারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। এ নির্বাচনে কোনো দল সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তবে সবচেয়ে বেশি আসন পান পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পায় পিএমএল-এন। তৃতীয় স্থান পায় পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এমএল-এন ও পিপিপি জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে সংরক্ষিত আসন পেতে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সঙ্গে জোট করার সিদ্ধান্ত নেয় পিটিআই। স্বতন্ত্র ৯২ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৮৯ জন সুন্নি ইত্তেহাদে যোগ দেন। তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাছে ১০টি সংরক্ষিত আসন চেয়েও এখনো বরাদ্দ পাননি।

৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও চারটি প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়। সাধারণ পরিষদের ২৬৪টি আসনে ভোট হয়। এতে পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯০ আসনে জয় পান। তবে ৭৯ আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পিএমএল-এন আর ৫৪টি আসন পেয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা পিপিপি ক্ষমতা ভাগাভাগির মাধ্যমে কেন্দ্রে ও প্রদেশগুলোয় সরকার গঠন করছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এসআইসি প্রার্থী

প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের আগেই গতকাল শুক্রবার পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা সরদার আয়াজ সাদিক দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী এসআইসি ও পিটিআই-সমর্থিত মালিক আমির দোগার পরাজিত হন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের আইনপ্রণেতারা ৯ মার্চ দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।

পিটিআই-সমর্থিত বর্তমান প্রেসিডেন্টের স্থলাভিষিক্ত হবেন নতুন প্রেসিডেন্ট। ইতিমধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন পিপিপির কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারি। তাঁকে সমর্থন দিয়েছে জোটের পিএমএল-এন। এদিকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল থেকে মনোনীত করা হয়েছে পশতুনখাওয়া মিল্লি আওয়ামী পার্টির প্রধান মাহমুদ খান আচাকজাইকে। আজ এসআইসি এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। আচাকজাই বেলুচিস্তানের কিলা আবদুল্লাহ-কাম-চমনের এনএ-২৬৬ আসন থেকে জাতীয় পরিষদের আসনে জয়ী হয়েছেন। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান তাঁর দলের আইনপ্রণেতাদের আচাকজাইয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। পিটিআই চেয়ারম্যান গহর খান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আচাকজাইয়ের মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৯ মার্চ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই পদে এখন পর্যন্ত পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ৫ মার্চ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে।

বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিপেটা

ডন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে আজ লাহোরসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে পিটিআই। লাহোরে হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়, বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিপেটা করে পুলিশ। পিটিআই নেতা-কর্মীরা জিপিও চক ঘিরেও বিক্ষোভ করেন। সেখান থেকে পুলিশ আটজনকে আটক করেছে।