মার্শাল আর্টসে কীভাবে পাকিস্তানের নারীদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠলেন আনিতা
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় দুর্গম একটি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন আনিতা করিম। বড় তিন ভাইয়ের সঙ্গে মুষ্টিযুদ্ধ, কুস্তি খেলে লড়াইয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। এ অভিজ্ঞতাই তাঁকে মিক্সড মার্শাল আর্টসের (এমএমএ) জগতে নাম লেখানোর জন্য প্রস্তুত করে তোলে। আনিতা এখন দেশটির নামকরা এমএমএ যোদ্ধা।
থাই কিকবক্সিং, জাপানি জুডো ও রেসলিংয়ের মতো খেলাগুলোর একটি মিশ্রিত রূপ এমএমএ।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে আনিতা বলেন, ‘যে গ্রাম থেকে আমি এসেছি, সেখানকার লোকেরা নারী যোদ্ধাদের সমর্থন দেন। তবে আমি যখন এমএমএ শুরু করি, তখন এ বিষয়ে কোনো জানাশোনা ছিল না তাঁদের।’
২৮ বছর বয়সী আনিতা জানান, তাঁর গ্রামের বাসিন্দারা একসময় এমএমএকে পুরুষদের খেলা মনে করত। তারা ভাবত, নারীরা এটা পারবেন না।
৮ বছর আগে এমএমএ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান আনিতা। তিনি ওয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আন্তর্জাতিক এমএমএ আসরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রথম পাকিস্তানি নারী তিনি।
২৮ বছর বয়সী আনিতা জানান, তাঁর গ্রামের বাসিন্দারা একসময় এমএমএকে পুরুষদের খেলা মনে করতেন। তাঁরা ভাবতেন, নারীরা এটা পারবেন না।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে নিজস্ব ব্যায়ামাগারে প্রশিক্ষণ দেন আনিতা। সেখানে তিনি এএফপির সাংবাদিককে বলেন, এখন নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক মন্তব্য ও সমালোচনা বন্ধ হয়েছে।
রক্ষণশীল পাকিস্তানে নারীদের খেলাধুলায় তেমন একটা অংশ নিতে দেখা যায় না। প্রায়ই পরিবার থেকে তাঁদের খেলাধুলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। তবে আনিতা করিমের এলাকা গিলগিট-বালটিস্তানে নারীদের ওপর বিধিনিষেধ অনেকটা কম। আর তা নারীদের জন্য খেলায় অংশ নেওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
গত অক্টোবরে ওই অঞ্চল থেকে মালিহা আলী ও মানিশা আলী নামের দুই বোন ইন্দোনেশিয়ায় তায়কোয়ান্দ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সোনা ও ব্রোঞ্জ পদক জেতেন।
পরিবারের মালিকানাধীন ব্যায়ামাগারে দাঁড়িয়ে আনিতার ৩৩ বছর বয়সী ভাই উলুমি বলেন, ‘আমরা জানতাম, ও এটা করতে পারবে এবং যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে ওর প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি ছিল না।’
যে গ্রাম থেকে আমি এসেছি, সেখানকার লোকেরা নারী যোদ্ধাদের সমর্থন দেন। তবে আমি যখন এমএমএ শুরু করি, তখন এ বিষয়ে কোনো জানাশোনা ছিল না তাঁদের।
আঞ্চলিক সরকারের তথ্য অনুযায়ী, আনিতা করিম পাকিস্তানে একটি এমএমএ নারী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ওই দলের পাঁচ সদস্য গিলগিট-বালটিস্তান থেকে আসা।
নিজ জন্মশহরে আনিতা মূলত তায়কোয়ান্দো ও জাপানি কুস্তিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ইসলামাবাদে মাধ্যমিক স্কুলে পড়তে গিয়ে এমএমএর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে।
আনিতা জানান, শুরুতে কাছের অনেক মানুষের কটু কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু এখন তাঁরা বোঝেন। এলাকার মানুষ তাঁকে নিয়ে এখন গর্ববোধ করেন।
আঞ্চলিক সরকারের ক্রীড়াবিষয়ক প্রধান শাহ মুহাম্মদ বলেন, ‘যেভাবে তিনি (আনিতা) গিলগিট-বালটিস্তান ও পাকিস্তানের নাম উজ্জ্বল করেছেন, তা শিক্ষণীয়।’
বর্তমানে আনিতা করিম পুরস্কার হিসেবে পাওয়া অর্থ, সামান্য সরকারি অনুদান ও ইসলামাবাদের ব্যায়ামাগারে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আসা আয়-উপার্জনে চলেন।
যখন বিদেশে প্রতিযোগিতা শেষ করে দেশে ফেরেন, তখন বিমানবন্দরে আনিতাকে স্বাগত জানাতে ছোটখাটো ভিড় জমে। নতুন নারী যোদ্ধাদের কাছে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁরাও তাঁর মতো হতে চান। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তানে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে মাত্র একজন নারী চাকরি করেন।
আনিতা করিমের চেয়ে বয়সে কয়েক বছরের ছোট বুশরা আহমেদ। তিনি আনিতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বুশরা বলেন, ‘আনিতা আমাদের জন্য আদর্শ।’
জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, পাকিস্তানে ৮০ শতাংশের বেশি নারী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেশের নারীদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলা ও আত্মরক্ষার কৌশল শেখাতে চান আনিতা।
সম্প্রতি আনিতা ইসলামাবাদের এক বাজারে হয়রানি করার সময় এক ব্যক্তিকে সমুচিত জবাব দিয়েছিলেন। তাতে ওই ব্যক্তিকে রক্তমাখা মুখ নিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে হয়েছে।