ইমরানকে ঠেকাতে অনেক আয়োজন পাকিস্তানে

পাকিস্তান এ মুহূর্তে দ্বিমুখী চাপে পড়েছে। একদিকে প্রান্তিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক হতাশা। অন্যদিকে রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার উত্থান।

পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকেরা জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা নিয়ে করাচিতে বিক্ষোভ করেনফাইল ছবি: এএফপি

পাকিস্তানে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায়। কথা রয়েছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচন হবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সেখানে গভীর অনিশ্চয়তাও আছে। আদৌ নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন হবে কি না, এ নিয়ে নিশ্চিত নন দেশের কেউ। তবে যাঁরা আরও দূরে দেখতে পান, তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন—এই নির্বাচন যদি হয়ও সেটি কি পাকিস্তানের সামনে থাকা সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান দিতে পারবে? যদি না পারে, তাহলে বিকল্প কী?

নির্বাচন হবে, নির্বাচন হবে না

নিয়ম অনুযায়ী পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল নভেম্বরে। কিন্তু নানান অজুহাতে সেটি পিছিয়ে তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। পাকিস্তানের নাগরিকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এই নির্বাচনের জন্য। গত দুই দফায় জাতীয় পরিষদ পাঁচ বছর করে দুটি মেয়াদ ভালোভাবেই শেষ করেছে। মানুষ নির্বাচনী এই সংস্কৃতি থেকে অতীতের সামরিক শাসনের দিনগুলোতে আর ফেরত যেতে চাইছে না। কিন্তু নির্বাচনী সংস্কৃতির ওপর সামরিক ছায়া একদম সরে গেছে, এমনও নয়।

নির্বাচন বিলম্বের শঙ্কা যে কারণে

পাকিস্তানের রাজনীতি ইমরান খানকে কেন্দ্র করে এখন দুই ভাগ হয়ে আছে। ইমরানবিরোধী শিবির প্রথম থেকে চেষ্টা করছে নির্বাচন পেছাতে। ১২ আগস্ট বিগত জাতীয় পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই দিন মেয়াদ শেষ হলে ৮ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন করতে হতো। সেটি পেছাতে মাত্র দুদিন আগে ১০ আগস্ট পরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। নিয়ম রয়েছে, মেয়াদের আগে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হলে ‘৯০ দিনের ভেতর’ নির্বাচন করতে হবে।

১২ আগস্ট ভাঙা হলে ৬০ দিনের ভেতর নির্বাচন করতে হতো। তবে রাষ্ট্রে ‘প্রভাবশালী মহল’ চাইলে অনেক অজুহাত তৈরি করা যায়। ফলে ৯০ দিনের ভেতরও নির্ধারিত সেই নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনী ‘আসন সমন্বয়ের’ নামে সেটি আরও পিছিয়ে ফেব্রুয়ারিতে আনা হয়। এখনো বহু মহল চাইছে, নির্বাচন আরও পেছানো বা একেবারেই স্থগিত করে দেওয়া হোক। এ রকম চাওয়ার কারণ কারাবন্দি ইমরান খানের জনপ্রিয়তা। গ্রেপ্তারের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনতার সহানুভূতি বেড়ে যাচ্ছে।

ইমরানবিরোধীদের হিসাব হলো, এ মুহূর্তে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাঁদের পক্ষে ভোট ইমরানের দলের চেয়ে অনেক কম পড়বে। এ রকম শঙ্কার শিকার সেনা–নেতৃত্বও। ফলে নির্বাচন নিয়ে ‘ডিপ স্টেট’ বেশ টানাপোড়েনে আছে। নির্বাচন পেছানোর বড় ধরনের কোনো অজুহাতও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নিজেদের মনোভাব আড়াল করে উচ্চ আদালতকে ব্যবহার করে পেছানোর কাজটি করার এখনো সুযোগ আছে প্রশাসনের হাতে।

আরও পড়ুন

বিশেষ করে টিটিপির (তেহেরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান) সশস্ত্র তৎপরতাকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে দেশের এমন কিছু এলাকায় নির্বাচন স্থগিত করা হতে পারে, যেসব জায়গায় পিটিআই (পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ)-এর একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ রকম তালিকায় আছে খাইবার পাখতুনখাওয়া। একই রকম অজুহাতে বালুচিস্তানেও নির্বাচন বন্ধ রাখা সম্ভব।

নির্বাচন বন্ধের শঙ্কা বাড়ার আরেক কারণÑ অর্থ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনকে সম্পদস্বল্পতার কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্বাচনী খরচ দিতে বিলম্ব করছে। এ ঘটনা আদালতে তুলে ধরেও নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে ছাড় চাইতে পারে। তবে আবারও নির্বাচন পেছানো হলে বা পুরোই স্থগিত হলে জন–অসন্তোষ তৈরির শঙ্কাও আছে।

আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালী মিত্ররাও চায় না পাকিস্তানে নির্বাচন বাধাপ্রাপ্ত হোক। এর মধে৵ ইসরায়েলকে স্বীকৃতির জন্য তীব্র পশ্চিমা চাপের কথাও সমাজজীবনে গুঞ্জন হিসেবে আছে। এ সপ্তাহেই সেনাপ্রধান জেনারেল মুনীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেলেন। তাঁর সফর সব ধরনের গুজবকে বাড়তি ইন্ধন জুগিয়েছে। নির্বাচন হবে কি হবে না,Ñএই সফরের পর তার ইঙ্গিত পাওয়া যাবে বলে অনেকের অনুমান।

পিটিআই বনাম বাকি সবাই

পাকিস্তানে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ১৭৫। তবে ইমরানের দল পিটিআই ছাড়া এ মুহূর্তে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল দুটো: শরীফ বংশের মুসলিম লিগ এবং ভুট্টো বংশের পিপলস পার্টি (পিপিপি)। শেষের দুই দল নির্বাচন চাইছে। তবে তারা নীরবে এ–ও চাইছে, নির্বাচনকালে পিটিআইকে যেন কোণঠাসা রাখা হয় অথবা ‘ডিপস্টেট’ যেন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে।

সেনাবাহিনীর জন্য মুশকিল হলো, রাজনীতি ও নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে করতে তাদের ইমেজে অতিরিক্ত দাগ পড়ে গেছে। কিন্তু এবারও ‘জরুরি অবস্থা’য় আছে তারা। অতীতের নোংরা কাজটি এবারও জোরেশোরে করতে হতে পারে। আগে তাদের লক্ষ্য থাকত কাউকে জিতিয়ে আনা। এবার করতে হবে উল্টো কাজ।

এরই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইমরান খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০। এর মধে৵ ‘তোষাখানা মামলা’ নামে পরিচিত এক অভিযোগে সাজা হলেও সেটা উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে গেছে। ‘সাইফার ফাঁস’ শিরোনামে আরেক মোকদ্দমায় দ্রুত অভিযোগ গঠন করা হচ্ছে। শেষের মামলায় ইমরানের বিচার চলছে কারাগারের ভেতর। এই মামলায় ইমরানের সাজা নিশ্চিত করতে দেশটির ‘অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট’ নতুন করে সংশোধন করা হয়েছে।

ইমরানের এ রকম বিচারপ্রক্রিয়া দেশটিতে আইয়ুব খান আমলের ‘রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র মামলা’র স্মৃতি মনে করিয়ে দিচ্ছে। যে মামলায় ফয়েজ আহমেদ ফয়েজসহ আসামিদের পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন বাংলার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে সামনে রেখে ইমরানকে মোকাবিলা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সহানুভূতি নিয়ে যতটা ভাবছে, সমাজের ভেতরে উদীয়মান ওই দুই সমস্যা নিয়ে ততটা ভাবছে না। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সামনে রেখে সশস্ত্র বাহিনী পরিস্থিতিকে প্রতিনিয়ত এত বেশি প্রভাবিত করছে যে দেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে রাজনীতিবিদেরা বিচ্ছিন্নতায় ভুগছেন এবং অনেকখানি হাল ছেড়ে বসে আছেন।

এসব মামলা-মোকদ্দমার পরের অধ্যায় হিসেবে নির্বাচনে পিটিআইকে তাদের এতদিনের প্রতীক ‘ক্রিকেট ব্যাট’ও না দেওয়া হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে পিটিআই বলছে তারা ‘ব্যাট’ না পেলেও ‘খেলা’য় নামবে।

এমনকি তাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হয়েও লড়তে প্রস্তুত আছেন। বোঝা যাচ্ছে, ইমরান অনুসারীরা কাউকে ওয়াকওভার দিতে অনিচ্ছুক। তাঁদের এ রকম দৃঢ়তায় বিরোধী পক্ষ অস্বস্তিতে আছে। এই ‘বিরোধী’দের সহায়তা করতে গিয়ে প্রশাসন নানানভাবে পিটিআইকে হেনস্তা করার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতার মুখে ইমরানের অনুপস্থিতিতে দলটি নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যারিস্টার গওহর আলী খানকে নির্বাচিত করলেও কমিশন সেটি মানতে চাইছে না।

পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনো দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এত নজরদারি করতে অতীতে দেখা যায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনগুলোর ‘স্বাধীনতা’র ভালো একটা নমুনা মিলছে এখনকার পাকিস্তানে।

আরও পড়ুন

তবে ব্যাপক সুবিধাজনক অবস্থাতেও পিটিআইয়ের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষ খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী নয়। নিজেরা আগের মতো একজোট অবস্থায়ও নেই। ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারাগারে নেওয়া পর্যন্ত মুসলিম লিগ ও পিপিপির মহব্বত থাকলেও এখন আস্তে আস্তে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। এর কারণ পরবর্তী ক্ষমতায় কে যাবে সে বিষয়ে একমত হতে না পারা। উভয়ে জাতীয়ভাবে পরবর্তী সরকার গড়তে আগ্রহী।

পাঞ্জাবকেন্দ্রিক দল হিসেবে মুসলিম লিগ যদিও জেনারেলদের সহানুভূতি বেশি আশা করছে, কিন্তু পিপিপিও হাল ছাড়তে চাইছে না। ফলে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ‘ভুট্টো’ ও ‘শরীফ’দের মধ্যে নীরব প্রতিদ্বন্দ্বিতার আলামত স্পষ্ট হচ্ছে।

উভয়ে তারা পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে ঐতিহ্য আছে, মধ্যপ্রাচ্যের এমন দু-তিনটি দেশের সহানুভূতি আদায়েও সচেষ্ট। কিন্তু দেশের ভেতরে মধ্যবিত্ত তরুণ সমাজে ইমরান এখনো জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারায় বিদেশিরাও কোনো দিকে ঝুঁকে পড়ার বেলায় সতর্ক।

সেনাবাহিনীর ইচ্ছার সামনে বাধা ইমরান

ইমরান খানকে ক্ষমতায় আনা এবং ক্ষমতাচ্যুত করার প্রক্রিয়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সুনাম যথেষ্ট ঘা খেয়েছে। প্রথম অধ্যায়ের তুলনায় দ্বিতীয় অধ্যায় ছিল বেশি আত্মঘাতী। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এ ক্ষেত্রে ‘মিশন’ সম্পন্ন করতে পারেনি তারা। ইমরানকে কারাগারে রাখা গেলেও এবং তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সহযোগীদের পিটিআই ছাড়তে বাধ্য করা হলেও দলটির জনপ্রিয়তায় ধস নামানো যায়নি। ফলে সেনাবাহিনী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মুশকিলে আছে। ইমরানের ফিরে আসা না ঠেকিয়ে জেনারেলদের সামনে বিকল্প নেই।

জনমানসে ধারণা হলো, বর্তমান সেনাপ্রধান শরীফ বংশের কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চাইছেন। তারই অংশ হিসেবে নওয়াজ শরিফকে স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে আসতে দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর সবুজ সংকেত ছাড়া তাঁর এই ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। কিন্তু জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয়তায় বড় শরিফের অবস্থান ইমরানের অনেক নিচে। ভুট্টোদের অভিভাবক জারদারির অবস্থান আরও নিচে। করুণ ব্যাপার সেনাবাহিনীকে এই দুজন থেকেই কাউকে মেনে নিতে হবে।

অথচ সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ ছিল। এই দুজনকে ‘শিক্ষা’ দিতেই তখন ‘ডিপ স্টেট’ ইমরান খানকে নানানভাবে ‘উৎসাহ’ জুগিয়েছে। কিন্তু এখন ইমরানকে যেকোনো উপায়ে নির্বাচনে কোণঠাসা রাখা তাদের জন্য মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে গেছে।

সে কারণেই যে ইমরানের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির বিরুদ্ধেও নানান ‘অভিযোগ’ উঠছে, তা বোঝা কঠিন নয়। শিগগির বুশরা গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে মনে হচ্ছে। পিটিআইয়ের প্রথম সারির নেতাদের মধ্যে শাহ মাহমুদ কোরেশি ছাড়া প্রায় সবাইকে দল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।

এ রকম সবকিছু মিলে যে বার্তা তৈরি হয়েছে, তার তাৎপর্য বুঝতে পেরে সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদদের মুসলিম লিগে যোগ দেওয়ার হিড়িক দেখা যাচ্ছে সম্প্রতি। তবে নওয়াজ ও মুসলিম লিগের জন্য একটা অশুভ লক্ষণ হলো তাদের দুর্গ পাঞ্জাবে তেহেরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি) দলটির জনপ্রিয়তা বেশ বেড়ে আছে। শরিফদের এখন এই দলের সঙ্গে গোপনে আপস করতে হবে।

কুলীন সমাজের এ রকম আপসগুলো জমে জমেই পাকিস্তানে বহুল কথিত ‘উগ্রপন্থা’র প্রকৃত সংকটটি তৈরি হয়েছে। নির্বাচনী ঢামাডোলের মধে৵ এবার এই সংকট নিয়েও প্রশাসন বেশ নাজেহাল অবস্থায় আছে।

মতামত জরিপ যা বলছে

গত কয়েক মাসে যেসব মতামত জরিপ হয়েছে, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্ষেত্রে পিটিআই এগিয়ে। তবে এসব জরিপে এমন কিছু বার্তা আছে, যা পৃথকভাবে মনোযোগ পেতে পারে। ‘গ্যালপ পাকিস্তান’–এর গত জুনের জরিপে ৭৭ ভাগ নাগরিক বলেছেন, দেশ যেভাবে চলছে, তাতে অসন্তুষ্ট তাঁরা।

এই জরিপে দল হিসেবে পিটিআই ৫৯ শতাংশ মতামত প্রদানকারীর পছন্দ ছিল। ইমরান খানের রেটিং ছিল ৬০ ভাগ। এ রকম মতামতের মধে৵ই পাকিস্তানের সমাজের আরেকটা চিত্র হলো—মাঠপর্যায়ে টিটিপি ও টিএলপির মতো দলগুলোর সাংগঠনিক প্রভাব বাড়ছে।

গত কয়েক বছর ফ্রান্স, সুইডেন ইত্যাদি দেশে ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের ক্ষুব্ধ করার মতো প্রতিটি ঘটনায় বড় বড় প্রতিবাদী আয়োজনের ভেতর দিয়ে বেরলভি তরিকার লাব্বাইক পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে নিজেদের বেশ শক্তিশালী করে নিয়েছে। কোনো বিষয়ে এসব সংগঠন রাস্তায় নামলে বেসামরিক প্রশাসন এখন আর রুখতে পারে না। সশস্ত্র টিটিপিকে থামানো সেনাবাহিনীর পক্ষেও অসাধ্য হয়ে গেছে। এ দলগুলোর অনেক কর্মী-সমর্থক বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায়ও আস্থাশীল নয়। টিএলপির সাদ রিজভি ইমরানের পরই দেশের দ্বিতীয় জনপ্রিয় নেতা।

এই চিত্রের পাশাপাশি পাকিস্তানের আরেকটি ছবি আছে যা মতামত জরিপেও বিস্তারিত আসে না। সিন্ধু, গিলগিট–বালতিস্থান, বালুচিস্তান, আজাদ কাশ্মীরসহ দেশটির প্রান্তিক অনেক অঞ্চল চলতি রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে হতাশ। কারণ, লাহোর ও ইসলামাবাদের সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রার ব্যবধান ব্যাপক। পশতু, বালুচ ও সিন্ধিদের নিচুতলায় জাতিগত বঞ্চনাবোধ তীব্র।

এভাবে পাকিস্তান এমুহূর্তে দ্বিমুখী চাপে পড়েছে। একদিকে প্রান্তিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক হতাশা। অন্যদিকে রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থার উত্থান। ঠিক এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হলেও কি এসব সমস্যা মিটবে? সেনা প্রভাবিত বেসামরিক সরকার কি কোনো সংস্কার করতে সক্ষম?

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে সামনে রেখে ইমরানকে মোকাবিলা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সহানুভূতি নিয়ে যতটা ভাবছে, সমাজের ভেতরে উদীয়মান ওই দুই সমস্যা নিয়ে ততটা ভাবছে না। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সামনে রেখে সশস্ত্র বাহিনী পরিস্থিতিকে প্রতিনিয়ত এত বেশি প্রভাবিত করছে যে দেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে রাজনীতিবিদেরা বিচ্ছিন্নতায় ভুগছেন এবং অনেকখানি হাল ছেড়ে বসে আছেন।

  • আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক। ই–মেইল: [email protected]