পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হতে পারে ইমরান খানের দল

ইমরান খান
ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

‘রাষ্ট্রের ওপর হামলা’ করায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নিষিদ্ধ করার চিন্তাভাবনা করছে দেশটির সরকার। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বুধবার এ কথা বলেছেন। এমন সিদ্ধান্ত ইমরান খানের সমর্থকদের ক্ষুব্ধ করতে পারে এবং সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব আরও বাড়াতে পারে।

বেসামরিক রাজনীতিবিদ ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েক দশকের পুরোনো দ্বন্দ্বের সর্বশেষ কলহে জড়িয়ে পড়লেন সাবেক এই ক্রিকেট তারকা। পাকিস্তানের ইতিহাসে সামরিক বাহিনী দেশটি সরাসরি শাসন করেছে কিংবা সরকারগুলোকে নেপথ্যে থেকে পরিচালনা করেছে।

পিটিআই নিষিদ্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে।
খাজা আসিফ, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

এই মুখোমুখি অবস্থানের ফলে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ইমরান খানের সমর্থকেরা। এতে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশটির স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, পাকিস্তান কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সাংবাদিকদের বলেন, ইমরান খানের পিটিআই ‘রাষ্ট্রের মূল ভিত্তিতে’ আক্রমণ করেছে, যা সহ্য করা হবে না। তিনি বলেন, ‘পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।’ খাজা আসিফ আরও বলেন, দলটি নিষিদ্ধে সরকারি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে হবে।

খাজা আসিফ মূলত ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভের প্রতি ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেছেন। ৯ মে তাঁকে গ্রেপ্তারের পর দলের সমর্থকেরা সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরসহ সামরিক স্থাপনা ও সরকারি ভবনগুলোতে হামলা চালান।

তবে সরকারের এই চিন্তাভাবনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ইমরান খান বা পিটিআই মুখপাত্রের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন

সামরিক বাহিনীর প্রচ্ছন্ন সমর্থন নিয়ে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। যদিও উভয়ে ওই সময় তা অস্বীকার করেছিলেন। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগে তিনি হস্তক্ষেপের চেষ্টা করলে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরে। পরে গত বছরের এপ্রিলে পার্লামেন্টে বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান।

এরপর থেকে আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান। এ দাবিতে দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ করে আসছেন। তবে তাঁকে সরিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়া শাহবাজ শরিফ চলতি বছরের নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন।

ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, তাঁকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দিতেই এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।

আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় ৯ মে ইমরান খানকে আদালত চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায়ও হামলা করেন।

আরও পড়ুন

‘ভরসা’ সুপ্রিম কোর্ট

অবশ্য পিটিআইয়ের সিনেটর আলী জাফর বলেছেন, যদি পিটিআইকে নিষিদ্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেয়, তাহলে সুপ্রিম কোর্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেবেন। অধিকাংশ মামলায় ইমরান খানের আইনজীবী হিসেবে তিনি আদালতে লড়ছেন বলেও জিও নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়।

বুধবার সুপ্রিম কোর্টের বাইরে সাংবাদিকদের আলী জাফর বলেন, ভাঙচুর ‘ব্যক্তি সম্পর্কিত কাজ’। এর ওপর ভিত্তি করে কোনো দলকে নিষিদ্ধ করা যায় না। তিনি বলেন, ‘অতীতে জামায়াত-ই-ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট এর আগেকার আদেশে নজির হিসেবে দেখিয়েছেন, সরকার কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে না।’

পিটিআই সিনেটর আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, সহিংস পথ অবলম্বন করে এবং ঘৃণা উসকে দেয় এমন দলের বিচারে পৃথক আইন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি পিটিআইকে নিষিদ্ধ করা হয়, আমি বিশ্বাস করি এক দিনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেবেন।