ইমরানকে সরাতে তারবার্তার তথ্য সত্য হলে এটি ‘অপরাধ’: শাহবাজ শরিফ

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যুক্তরাষ্ট্র ষড়যন্ত্র করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। ফাঁস হওয়া একটি কূটনৈতিক তারবার্তায় বিষয়টি জানা যায়। এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, কথিত ওই তারবার্তা সত্যি হলে তা হবে ‘গর্হিত অপরাধ’।

তারবার্তার বরাতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্ট। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন।

কথিত সেই তারবার্তা গত বছর ইসলামাবাদে পাঠান ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ। এতে একটি বৈঠকের বিবরণ রয়েছে। আসাদ মজিদের সঙ্গে সেই বৈঠক হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের।

সেই তারবার্তা অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ইমরান খানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আপত্তি জানিয়েছিল।

তবে তারবার্তার তথ্য সঠিক কি না, এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি ডন। এ ছাড়া এই তারবার্তার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন করলে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তানে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নিয়েছে—এমন কোনো কথা ওই প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।

ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, তারবার্তার নথিটি তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বেনামি সূত্র থেকে পেয়েছে। ওই সূত্র তাদের জানিয়েছে, ইমরান খান বা তাঁর দলের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকের ধারণা, ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দল পিটিআই তারবার্তাটি ফাঁস করেছে।

ফাঁস হওয়া এই তারবার্তা নিয়ে শুক্রবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম উই নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে প্রশ্ন করা হয়, ইমরান খান তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করার ক্ষেত্রে বিদেশি ষড়যন্ত্রের যে দাবি করছে ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন কি সেটা প্রমাণ করে?

শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘আপনার প্রশ্নের উত্তর হলো এই কথিত তারবার্তা ফাঁস নিয়ে আমার নেতৃত্বে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির দুটি বৈঠক হয়েছে। এক বৈঠকে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রসচিব আসাদ মজিদ স্পষ্ট বলেন ডোনাল্ড লুর সঙ্গে বৈঠকে ষড়যন্ত্র নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

পাকিস্তানের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ও অন্য বাহিনীর প্রধানেরাও নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি। শাহবাজ আরও বলেন, মাজিদও বলেছেন, কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের প্রশ্নই ওঠে না।

শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘ইমরান নিয়াজি বলেছিলেন রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর সরকারের সম্পর্ক ভালো হচ্ছিল। এ কারণে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু আমার সরকার রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনেছে। আল্লাহ না করুন, যদি এই সরকার মার্কিন ষড়যন্ত্ররে কারণে ক্ষমতায় এসে থাকে, তাহলে এটি আমাদের জন্য লজ্জার।’

২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি ওই গোপন বার্তা সম্পর্কে জানতেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করেছিল। পরে অবশ্য ইমরান খান সেই অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে আসেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি ভালো সম্পর্ক চান। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ষড়যন্ত্র করতে পারেনি।

এ প্রসঙ্গে শাহবাজ শরিফ বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী কি দেশের বিরুদ্ধে এতটা বিদ্বেষ ছড়াতে পারেন? তিনি বলেন, আর যদি তারবার্তার তথ্য সত্য হয়, তাহলে এটি বড় অপরাধ।

আরও পড়ুন