কারাগারের বাইরে কর্মসূচি, ইমরানের দুই বোনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানফাইল ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দুই বোনসহ প্রায় ৪০০ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। দেশটির রাওয়ালপিন্ডি শহরে আদিয়ালা কারাগারের বাইরে তাঁদের অবস্থান কর্মসূচির পর এ মামলা করা হয়। এই কারাগারে দুই বছর ধরে বন্দী রয়েছেন ইমরান খান।

কারাগারে ইমরান খানের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে দাবি তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) নেতা–কর্মীদের। আদালতের আদেশ মেনে ইমরানের সঙ্গে সঙ্গে কারাগারে নিয়মিত দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁদের। এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে পিটিআই।

গতকাল বুধবার করা মামলায় তথ্য অনুযায়ী, ইমরানের দুই বোন—আলেমা খান, নোরিন নিয়াজি এবং কাসিম খান, আলিয়া হামজা, সালমান আকরাম রাজা, নাইম পানজোথা, আল্লামা রাজা নাসির আব্বাসসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, পুলিশের ওপর হামলা এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে আদিয়ালা কারাগারের বাইরে ইমরানের বোনসহ পিটিআই সমর্থকেরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি করেন। মামলায় বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা রাস্তা অবরোধ করে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়েছিলেন। তাঁরা পিটিআইয়ের অন্য কর্মীদের উসকানি দিয়েছিলেন এবং পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছিলেন। পুলিশের দিকে পাথর ও কাচের বোতলও ছুড়েছিলেন। এ মামলায় বুধবার রাতেই ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের আজ বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাওয়ালপিন্ডি আদালতে তোলার কথা ছিল।

‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ মামলা

২০২২ সালে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয় ইমরানের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয় ইমরানকে। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাবন্দী তিনি। তাঁর দলের অনেক নেতাও বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েও সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি ইমরান সমর্থিতদের।

পিটিআই সরকারের রাজনৈতিক নিশানা—এমন অভিযোগ বহু আগে থেকেই করে আসছেন দলটির নেতা–কর্মীরা। বুধবার করা নতুন মামলায় যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা–ও প্রত্যাখ্যান করেছে পিটিআই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। বিষয়টির দিকে নজর দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইমরানের দল।

এক বিবৃতিতে পিটিআইয়ের কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের কর্মসূচিতে নারী, বয়স্ক মানুষ ও অহিংস লোকজন ছিলেন। তাঁদের ওপর শারীরিকভাবে হামলা ও জলকামান থেকে পানি ছুড়েছে পুলিশ। এ ছাড়া দলের নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করাটা রাজনৈতিক নিপীড়নের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ। এর মধ্য দিয়ে সরকারের আতঙ্ক ও নৈতিক দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছে।

ইমরানের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে

আদিয়ালা কারাগারের বাইরে পিটিআই নেতা–কর্মীদের বিক্ষোভের বড় কারণ হলো, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ। গত মাসের শেষের দিকে তো গুঞ্জনই উঠেছিল, তিনি হয়তো আর বেঁচে নেই। কারণ, এর আগে প্রায় দুই মাস ধরে ইমরানকে তাঁর পরিবার বা দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে গত মাসেই কারাগারের বাইরে অবস্থান কর্মসূচি করেছিলেন খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি।

এমন ক্ষোভের মুখে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের আদেশ মেনে ২ ডিসেম্বর ইমরানের সঙ্গে বোন উজমা খানকে দেখা করতে দেয় আদিয়ালা কারাগার কর্তৃপক্ষ। প্রায় আধা ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ইমরানের শরীর ভালো আছে। তবে তাঁর ওপর মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। খুব বেশি সময় কারাকক্ষের বাইরেও থাকতে দেওয়া হয় না ইমরানকে।

আরও পড়ুন

এরপর থেকে আর ইমরানের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি স্কাই নিউজকে তাঁর দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান খান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা হয়তো কখনোই আর তাঁদের বাবাকে দেখতে পারবেন না। ইমরান খানকে একটি ‘ডেথ সেল’-এ রেখে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। কারাগারে রাখার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হয়নি।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের একজন বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ারও সতর্ক করে একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ইমরানকে এমন অবস্থায় আটক করে রাখা হয়েছে, যা ‘অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর’ আচরণের পর্যায়ে পড়তে পারে। ইমরানকে কারাবন্দী করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক নীতি ও মানদণ্ড মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন