পাকিস্তানে পদদলিত হয়ে ১০ দিনে নিহত ২০

আর্থিক সংকটে থাকা পাকিস্তানে গত মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যা গত ৫ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সরকারি বিতরণকেন্দ্র থেকে আটা সংগ্রহ করছেন লোকজন। গতকাল পাকিস্তানের লাহোরে।
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে দরিদ্র মানুষ। খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর সামনে মানুষের ভিড় বাড়ছে। রোজার মাস শুরু হওয়ার পর গত ১০ দিনে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে ভিড় বেড়েছে। সেখানে পিষ্ট হয়ে অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে গত শুক্রবার করাচির সিন্ধু ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মীদের পরিবারের মধ্যে জাকাত বিতরণের সময় পদদলিত হয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় আহত হন পাঁচজন।

করাচিভিত্তিক বিশ্লেষক শাহিদা উইজারাত বলেন, ‘পাকিস্তানে যেভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, আমার মনে হয় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।’

আর্থিক সংকটে থাকা পাকিস্তানে গত মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৩৭ শতাংশে, যা গত ৫ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশটির সরকার এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করে ঋণ নিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত শনিবার প্রকাশ করা দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে মার্চে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। দেশটিতে গত বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।

বছরের পর বছর ধরে চলা আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি দেশটিতে গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

বিদ্যমান ঋণ পরিশোধের জন্য দেশটির কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন প্রয়োজন। দেশটির বৈদেশিক রিজার্ভ কমে গেছে এবং রুপির দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দরিদ্র পাকিস্তানি নাগরিকদের অর্থনৈতিক মন্দার যন্ত্রণা ব্যাপক বেড়ে গেছে। পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২২ কোটি।

অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে জরুরি ঋণসহায়তা (বেইল আউট) চেয়েছে ইসলামাবাদ। এই বেইল আউট পাওয়ার জন্য আইএমএফের অন্যতম শর্ত হলো, ভর্তুকি কমাতে হবে।

এবারের সংকটকে আরও গভীর বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদদের অনেকে। কারণ, এবার জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে আয়কর। এতে করে শিক্ষিত পেশাজীবীদের ওপরও বড় ধাক্কা এসেছে। তাঁদের অনেকে বলেছেন, জীবন চালাতে প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে তাঁদের।

এমন সংকটের মধ্যেই আবার শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। এই মাসে মুসলমানরা ইফতারে একটু ভালো খাবারের আয়োজন করতে চান। প্রস্তুতি নেন ঈদ উদযাপনের। তবে এবারের রমজানে পাকিস্তানিরা আরও দুর্দশায় পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মার্চ ও এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি অন্তত ৩৫ শতাংশ বাড়বে।