শাহবাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি, সামনে এখন যেসব চ্যালেঞ্জ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ (বাঁয়ে)ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় অভিনন্দন মি. শেহবাজ।’

গতকাল সোমবার পাকিস্তানের ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন শাহবাজ শরিফ। তিনি পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট। তাঁকে প্রেসিডেন্ট হাউসে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি শপথবাক্য পাঠ করান। তিনি দেশটির ২৪তম প্রধানমন্ত্রী হলেন।

জাতীয় পরিষদের ভোটাভুটিতে শাহবাজ ২০১ ভোট পেয়েছেন। আর পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ওমর আইয়ুব পান ৯২ ভোট। পাকিস্তানের সংবিধানে বলা আছে, প্রধানমন্ত্রী হতে হলে কোনো প্রার্থীকে পার্লামেন্টের ৩৩৬ সদস্যের মধ্যে ১৬৯ জনের ভোট পেতে হবে।

সংরক্ষিত আসন বণ্টনের পর পার্লামেন্টে পিএমএল-এনের মোট আসন এখন ১০৬। অন্যদিকে পিপিপির ৬৭, মুত্তাহিদা কাওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানের (এমকিউএম-পি) আসন দাঁড়িয়েছে ২০-এ। তবে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলকে (এসআইসি) পার্লামেন্টের সংরক্ষিত কোনো আসন দেওয়া হয়নি।

শাহবাজই দেশটির একমাত্র রাজনীতিক, যিনি পরপর দুই মেয়াদে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন। এর আগে সংক্ষিপ্ত শাসনামলে দায়িত্বশীল সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। এমনকি এবারের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যেও দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তাঁর নাম সবার সামনে এসেছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২২ সালের আগস্টে পাকিস্তানের সরকারপ্রধান হন শাহবাজ। ওই সময় তিনি জোট সরকারের নেতৃত্ব দেন। এর আগে পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন শাহবাজ।

এরই মধ্যে শাহবাজ শরিফকে চীনের পাশাপাশি অভিনন্দন জানিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন, পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডোনাল্ড ব্লোম প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির কাছে শপথ গ্রহণ করছেন শাহবাজ শরিফ। গতকাল ইসলামাবাদে
ছবি: রয়টার্স

সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ

জিও নিউজের খবরে বলা হয়, শাহবাজ দীর্ঘদিন ধরেই একজন দক্ষ প্রশাসক হিসেবে পরিচিত। আগের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় মোটাদাগে তাঁর দুটি সাফল্য ছিল। এক. একটি ভঙ্গুর রাজনৈতিক জোটের সরকারকে টিকিয়ে রাখা। দুই. ২০২৩ সালের শেষ ভাগে এসে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থ ছাড়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো।

এখনো অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান। দেশটিতে এখনো মূল্যস্ফীতি আকাশছোঁয়া—৩০ শতাংশের আশপাশে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ—২ শতাংশের কাছাকাছি নেমেছে। স্বল্প মেয়াদে আইএমএফের অর্থ ছাড় করা এবং দেশের অর্থনীতির গতি ফেরাতে সংস্থাটির সঙ্গে নতুন চুক্তি করা এখন শাহবাজের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ ছাড়া আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা পিআইএসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া এবং বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেওয়া অন্যতম। এসব উদ্যোগ পাকিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট কমানোর চাবিকাঠি হতে পারে।

পাকিস্তানের শরিফ ভাইদের সঙ্গে সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন রাজপরিবার ও কাতারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এসব সম্পর্ক বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ টেনে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী তিন দেশ—ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে অম্লমধুর কূটনৈতিক সম্পর্ক গতিশীল করার উদ্যোগ নিতে হবে।