পাকিস্তানে মসজিদে হামলাকারী ছিলেন পুলিশের পোশাকে, নিহতের সংখ্যা কমল

পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরে একটি মসজিদে আজ সোমবার জোহরের নামাজের সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের পেশোয়ারে আঞ্চলিক পুলিশ সদর দপ্তরের ভেতরে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ছিলেন পুলিশের পোশাকে। তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল। আজ বৃহস্পতিবার পুলিশপ্রধান এ তথ্য জানান।

গত ৩০ জানুয়ারি জোহরের নামাজের সময় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় মসজিদটি মুসল্লিতে পূর্ণ ছিল। বিস্ফোরণে মসজিদ ভবনের একাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বশেষ তথ্যমতে এ ঘটনায় ৮৪ জন নিহত হয়েছেন।

খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর প্রধান মোয়াজ্জাম জাহ আনসারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দায়িত্বে থাকা লোকজন তাঁকে (হামলাকারী) তল্লাশি করেননি; কারণ, তিনি পুলিশের পোশাকে ছিলেন...এটি নিরাপত্তাজনিত একটি ত্রুটি।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সিসিটিভি টিভির ফুটেজ দেখে হামলাকারী কে, সে সম্পর্কে পুলিশ ‘মোটামুটি ধারণা’ পেয়েছে। হামলাকারীর একা হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল না উল্লেখ করে আনসারি বলেন, তাঁর পেছনে একটি বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে।

পেশোয়ার শহরটি আফগানিস্তান সীমান্তসংলগ্ন। এটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের রাজধানী। শহরের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয় পুলিশ লাইনসকে। পুলিশের এ আঞ্চলিক সদর দপ্তরে গোয়েন্দা বিভাগ, কাউন্টার টেররিজম ব্যুরো এবং এর পাশে প্রাদেশিক সরকারের সচিবালয়ের অবস্থান। এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এত বড় ধরনের হামলা কীভাবে ঘটল, কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত করছে।

গতকাল বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেছেন, কম্পাউন্ডের ভেতরে থাকা লোকজন হামলার ঘটনায় সমন্বয় করতে সহায়তা করেছিল কি না, তা–ও তদন্ত করে দেখছে কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহার এবং তালেবান কাবুল দখল করার পর থেকে জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। পাশাপাশি ইসলামাবাদ তাদের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত ৩১ জানুয়ারি পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছিল, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এ হামলার দায় স্বীকার করে। তবে আজ এএফপি তার খবরে জানিয়েছে, টিটিপিএ হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। তারা দাবি করেছে, তারা প্রার্থনালয়ে আর হামলা করে না। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এ হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনটির কোনো অঙ্গসংগঠন জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নিহতের সংখ্যা কমল

পেশোয়ারে এ হামলার ঘটনায় ১০১ জন নিহত হয়েছে বলা হচ্ছিল। তবে আজ পুলিশ কর্মকর্তারা এ সংখ্যা সংশোধন করেছেন। জানিয়েছেন নিহতের সংখ্যা ৮৪।

পেশোয়ার সিটি পুলিশের প্রধান মুহাম্মদ ইজাজ খান এএফপিকে বলেন, ‘হতাহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে কয়েকবার নাম নিবন্ধন করায় এ বিভ্রান্তি দেখা দেয় এবং ভুল পরিসংখ্যান বেরিয়ে আসে। এখন উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। আমরাও সঠিক হিসাব পেয়েছি। এ ঘটনায় ৮৪ জন শহীদ হয়েছেন।’ এই ৮৪ জনের মধ্যে পুলিশের ৮৩ জন সদস্য আর ১ জন হলেন সাধারণ নারী। তিনি এই কম্পাউন্ডে কাজ করতেন। এখনো গুরুতর আহত অবস্থায় অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।