পাকিস্তানে এ বছর হিমবাহ গলেছে তিন গুণ বেশি

পাকিস্তানে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্যা দেখা দিয়েছে
ছবি: এএফপি

মেরু অঞ্চলের বাইরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হিমবাহের অবস্থান পাকিস্তানে। তবে জলবায়ু উষ্ণ হতে থাকায় এসব হিমবাহ হঠাৎ গলে পানি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে।

সিএনএন ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের প্রধান আবহাওয়াবিদ সরদার সরফরাজ সতর্ক করে বলেছেন, শুধু চলতি বছরই বিভিন্ন হ্রদে হিমবাহ গলার পরিমাণ অন্য সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেশি হয়েছে। এসব হ্রদের হিমবাহ দ্রুত গলে পানি লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়লে বন্যা পরিস্থিতি বিপর্যয়কর হতে পারে।

পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা মাক্সার টেকনোলজির স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি এসব ছবি প্রকাশ করেছে। গত ৩০ আগস্ট স্যাটেলাইটে এসব ছবি ধারণ করা হয়।

স্যাটেলাইট চিত্রে পাকিস্তানের গুদপুরের বন্যা পরিস্থিতি
ছবি: এএফপি

আবহাওয়াবিদ সরদার সরফরাজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা গিলগিত-বালতিস্তানে ২০২২ সালে এমন ১৬টি ঘটনা ঘটেছে। অথচ অতীতে বছরে এমন পাঁচ–ছয়টি ঘটনা দেখা যেত। রয়টার্সকে সরফরাজ বলেন, ‘উষ্ণতা বাড়ার কারণে হিমবাহ গলতে থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এর জন্য মূলত জলবায়ু পরিবর্তনই দায়ী।’

জলবায়ু সংকট বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে স্পষ্ট ও দৃশ্যমান চিহ্নগুলোর একটি হলো হিমবাহ গলে যাওয়া। তবে পাকিস্তানের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সঙ্গে হিমবাহ গলে যাওয়া সম্পর্ক কতটুকু, সে ব্যাপারে এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি। তবে সরফরাজ মনে করেন, যত দিন বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের হার না কমানো যাবে, তত দিন পর্যন্ত হিমবাহগুলো দ্রুতগতিতে গলতে থাকবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বে জলবায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্যাসগুলো যে পরিমাণে নির্গত হয়ে থাকে, তার ১ শতাংশেরও কম উৎপন্ন করে পাকিস্তান। তবে গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী, এটি জলবায়ু সংকট ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর তালিকায় অষ্টম অবস্থানে আছে।

কয়েক মাস ধরে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। দেশটির উত্তর পার্বত্য অঞ্চলে রেকর্ড মাত্রায় হিমবাহ গলতে দেখা গেছে। এতে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে বন্যা দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যার কারণে কমপক্ষে ১ হাজার ১৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গুদপুরে বন্যা পরিস্থিতির আগে ও পরের স্যাটেলাইট চিত্র
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বন্যাকে ‘নজিরবিহীন জলবায়ু বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। দেশটিতে গড় বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু আগস্টেই ১৫ দশমিক ৪ ইঞ্চি বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, পাকিস্তানের জন্য অবিলম্বে প্রায় ১৬০ ডলার সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পানিবন্দী অবস্থায় বসবাসকারীদের কারণে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

নতুন বন্যার শঙ্কা

বৃহস্পতিবার সিন্ধু নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিন্ধুর প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র মুর্তজা ওয়াহাব রয়টার্সকে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চল থেকে বন্যার পানি আসতে থাকায় আমরা উচ্চ সতর্কতার মধ্যে আছি। আগামী কয়েক দিনে প্রদেশে বন্যার পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ তিন মাসে পাকিস্তানে ৩০ বছর ধরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, এ বছরের ওই সময়ে তার প্রায় ১৯০ শতাংশ বেশি বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে। চলতি বছর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩৯০ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সিন্ধু প্রদেশের ওপর। ৫ কোটি জনসংখ্যার এ প্রদেশে ৩০ বছরের গড় বৃষ্টির তুলনায় ৪৬৬ শতাংশ বেশি রেকর্ড হয়েছে।