ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভূস্বর্গ পেহেলগামে একদল সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলিতে ২৬ পর্যটক নিহতের ঘটনার পর ‘সিন্ধু পানিচুক্তি’ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ আলী মুর্তজাকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তিনি লেখেন, ভারত ওই চুক্তি স্থগিত করছে এবং ‘অবিলম্বে তা কার্যকর’ হবে।
পাকিস্তান তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করতে পারে না। এটি যুদ্ধের শামিল। পাকিস্তানও ঘোষণা দিয়েছে তারা সিমলা চুক্তি বাতিল করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ভারতের একতরফা এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশটির সাবেক সিনেটর ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মুশাহিদ হুসেইন সৈয়দ। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, পেহেলগাম ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরে ভারত সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের চেষ্টা করছে, যেন পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়।
মুশাহিদ বলেন, সিন্ধু পানিচুক্তি ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি দ্বিপক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি। মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার যদি পাকিস্তানের পানি বন্ধ করে, তবে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে।
এদিকে বুধবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া পোস্টে পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেখারি লেখেন, বেপরোয়াভাবে ভারতের সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত পানিযুদ্ধের শামিল। এটি একটি কাপুরুষোচিত, অবৈধ পদক্ষেপ।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আশঙ্কা করে আসছে ভৌগোলিকভাবে ভারতের অবস্থান উজানে হওয়ায় দেশটি পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে, যা পাকিস্তানের কৃষি খাতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এই চুক্তি স্থগিতের ফলে পাকিস্তানের বিশেষ করে পাঞ্জাবের কৃষি, নদী, ফসল, অর্থনীতি এবং দুই দেশের সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রীতিমতো আলোচনার ঝড় বইছে।
সিন্ধু পানিচুক্তির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
সিন্ধু নদের উৎপত্তি তিব্বতে। সেখান থেকে প্রবাহিত হয়ে জম্মু ও কাশ্মীর দিয়ে পাকিস্তানে ঢুকেছে। ১৯৬০ সালে বিবদমান দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পানির ন্যায্য বণ্টন নিয়ে এক ঐতিহাসিক চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন বিশ্বব্যাংক সেই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিল। ইতিহাসে সেই চুক্তি সিন্ধু নদের পানিচুক্তি নামে খ্যাত। সেই চুক্তিতে সই করেছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান।
‘ভারতের একতরফা ও আগ্রাসী পদক্ষেপ ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের সম্ভাব্য উন্নয়নের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা ও চরম জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন।
সিন্ধু এশিয়া মহাদেশের অন্যতম দীর্ঘ নদ। এটি এ অঞ্চলের অত্যন্ত সংবেদনশীল সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ভেতর রয়েছে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মীরের বিভাজনরেখা।
ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তিনটি বড় যুদ্ধ হয়েছিল ১৯৬৫, ১৯৭১ এবং ১৯৯৯ সালে। তারপরেও যুদ্ধের কারণে পানিচুক্তি স্থগিত বা বাতিল হয়নি। তবে এবার সেই চুক্তি ভারতের পক্ষ থেকে স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হলো।
কী ছিল সিন্ধু পানিচুক্তিতে?
১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের করাচিতে সিন্ধু পানিচুক্তি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বিশ্বের অন্যতম স্থিতিশীল আন্তসীমান্ত পানি চুক্তি হিসেবে পরিচিত। সিন্ধু পানিচুক্তি দুই দেশের মধ্যে তত্ত্বগতভাবে পানিবণ্টন ঠিক করে থাকে। তবে বরাবরই এ চুক্তি ছিল বিরোধপূর্ণ।
এই চুক্তি সিন্ধু নদের অববাহিকার ছয়টি নদী দুই দেশের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে তিনটি পূর্বাঞ্চলীয় নদীর নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছিল। এগুলো হলো ইরাবতী, বিপাশা ও শতদ্রু। অন্যদিকে পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছিল পশ্চিমাঞ্চলীয় তিনটি নদ–নদী অর্থাৎ সিন্ধু, ঝিলম এবং চেনাবের নিয়ন্ত্রণ। বলা হয় পশ্চিম অংশের এ তিনটি নদ–নদীর মাধ্যমে পাকিস্তানে মোট পানির প্রায় ৮০ ভাগ সরবরাহ করে।
চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান পায় ৭০ ভাগ পানি আর ভারত পায় ৩০ ভাগ পানি। ভারত পূর্বাঞ্চলীয় নদীগুলোর জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও সীমিত সেচের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। তবে এগুলোর প্রবাহ সংরক্ষণ বা পরিবর্তন করে নিম্নগামী এলাকায় পানি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। এই বিধিনিষেধগুলো খুবই স্পষ্ট ও কার্যকর, যা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। পাকিস্তানের জন্য এই কাঠামো কেবল পানি নয়; বরং সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ার জন্য নিশ্চয়তা দেয়।
সিন্ধু পানি চুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রদান করে। চুক্তির পর একটি স্থায়ী ‘সিন্ধু কমিশন’ তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান থেকে একজন করে কমিশনার নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাদের কাজ ছিল তথ্য বিনিময়, নতুন প্রকল্প পর্যালোচনা এবং নিয়মিতভাবে দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করা।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু ও অন্যান্য নদীর পানি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। প্রযুক্তিগত প্রশ্ন প্রথমে কমিশনে পাঠানো হয়। যদি সমাধান না হয়, তাহলে একজন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়। আইনি বিরোধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে পাঠানো যেতে পারে, যেখানে বিশ্বব্যাংক উভয় ফোরামে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে।
ভারত চুক্তি স্থগিত করতে পারে। পানিচুক্তি স্থগিত করা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল নয়। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে, তবে যুদ্ধ ঘোষণা নয়। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ভারত মানেনি এরকম আজ পর্যন্ত হয়নি
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
ড. নাসির মেহমুদ ইসলামাবাদভিত্তিক একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সাবেক ভিজিটিং প্রফেসর। তিনি প্রথম আলোকে দেওয়া (লিখিত) সাক্ষাৎকারে জানান, ‘ভারতের একতরফা ও আগ্রাসী পদক্ষেপ ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের সম্ভাব্য উন্নয়নের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা ও চরম জাতীয়তাবাদের প্রতিফলন।
নাসির মেহমুদের মতে, আগামী নির্বাচনে বিজেপির অবস্থান মজবুত করার এটি কৌশলমাত্র। এমন অবিবেচক সিদ্ধান্তের প্রথম শিকার হচ্ছে দুই দেশের কূটনীতি। তাই সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে আবারও কেন্দ্রে এসেছে পানিবণ্টন, কাশ্মীর ইস্যু ও সামরিক উত্তেজনার মতো বিষয়গুলো। পাকিস্তান একে ‘পানি আগ্রাসন’ হিসেবে অভিহিত করেছে, যা দেশটির পানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য এক বিরাট হুমকি। অর্থনৈতিক শ্বাসরোধের প্রেক্ষাপটে পানি সুরক্ষা নিয়ে যেকোনো হুমকি পাকিস্তানের অনানুষ্ঠানিক পরমাণু নীতির গুরুত্বপূর্ণ সীমারেখাকে ছুঁয়ে দেয়।
ড. নাসির মেহমুদ বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের অন্যতম শিকার, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাই সন্ত্রাস মোকাবিলায় একতরফা নয়, সম্মিলিত উদ্যোগ ও সংলাপ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংলাপের সহায়ক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করতে ভারতের তরফ থেকে নেওয়া এই সিদ্ধান্তটা সত্যিই অমানবিক। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক থামানো যায়; কিন্তু নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, অথবা নদীর সঙ্গে নদীর সম্পর্ক থামানো যায় না।
এদিকে ভারতের দিল্লিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্তনদী সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন কাউন্সিল ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের পরিচালক ড. নিত্যানন্দ। প্রথম আলোকে টেলিফোনে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান। ড. নিত্যানন্দ বলেন, ভারত আসলে উত্তেজনার বশে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। অতীতে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ১৯৬৫, ১৯৭১ (বাংলাদেশ–পাকিস্তান যুদ্ধ নামে বেশি পরিচিত) এবং ১৯৯৯ সালে (কারগিল) যুদ্ধ হয়। সেই সময়েও কিন্তু দুই দেশের কোন দেশ বিশেষ করে ভারত সিন্ধু নদের পানিচুক্তি বাতিল বা স্থগিতের ঘোষণা দেয়নি। এবারও হয়তো পানিচুক্তি স্থগিতের ঘোষণা কার্যকর না–ও হতে পারে।
ড. নিত্য নন্দ জানান, সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে কিছু ক্ষতি তো হবেই। তবে এখন যুগ পাল্টেছে। আগের মতো এককভাবে নদীর পানি দিয়েই সেচ বা কৃষিকাজ করা হয় না। এখন গ্রাউন্ড ওয়াটার দিয়েও সেচের কাজ হয়। ভারত উজানের দেশ। তাই দেশটি যদি চুক্তি স্থগিত করে পাকিস্তানের জন্য পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে বর্ষা মৌসুমে ভারতের পাঞ্জাবের অংশে পলি জমে যাবে। ফলে বৃষ্টিতে ভারতের ওই এলাকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রাকৃতিক কারণেই সম্পূর্ণ পানি আটকে দেওয়া সম্ভব নয় বিশেষত বর্ষাকালে। সমস্ত পানি আটকে দিয়ে সেই পানি কোথাও রাখা বা অন্যপথে চালিত করা সম্ভব নয়। তবে খরার সময় সেটা সম্ভব হতে পারে।
এদিকে পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের সাবেক সেচমন্ত্রী (২০১৮–২২) মহসিন লেঘারি টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথম আলোকে জানান, ভারত একতরফাভাবে এই পানিচুক্তি স্থগিত করতেই পারে না। এটা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি জানান, দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সাল থেকে সিন্ধু নদের পানি চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চুক্তি করতে ভারত ও পাকিস্তানের সময় লেগেছিল ১২ বছর। বিশ্বব্যাংক ১৯৫১ সাল থেকে চেষ্টা করে ৯ বছরের মাথায় সফল হয়। অর্থাৎ ১৯৬০ সালে সংস্থাটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই চুক্তি করাতে পেরেছিল। সুতরাং ৬৫ বছরের পুরোনো এই পানি চুক্তি ভারত এককভাবে বাতিল বা স্থগিত কোনোটাই করতেই পারে না।
মহসিন লেঘারি জানান, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কৃষিব্যবস্থা পুরো্পুরি সিন্ধু ও শাখা নদ–নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল। সেখানে বেশ কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় সিন্ধু নদ ও এর শাখা নদ–নদীগুলোর পানি দিয়ে। সুতরাং ভারত যদি একতরফাভাবে এই চুক্তি স্থগিত করে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে পাকিস্তানে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
মহসিন লেঘারি জানান, পাকিস্তানের কৃষির বেশির ভাগ ফসল আসে পাঞ্জাব রাজ্য থেকে। আর পাঞ্জাবের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কৃষির কাজে সেচের পানির জোগান আসে সিন্ধু ও অন্যান্য শাখা নদী থেকে। চুক্তি স্থগিত করে ভারত পানি বন্ধ করে দিলে দীর্ঘমেয়াদে পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে। আবার বর্ষা মৌসুমে ভারত পানি ছেড়ে দিলে অতি বন্যাও দেখা দিতে পারে।
পাকিস্তান এখন কী করবে
ড. নিত্য নন্দ মনে করেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তান সংক্ষুব্ধ হয়ে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের দ্বারস্থ (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) হতে পারে। সে সুযোগ অবারিত। সে ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কোর্টে মামলা বা নালিশ করতে হবে। তখন হেগ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেবে সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বিষয়ে ভারতের মনোভাবের বিষয়টির সুরাহা করতে। ড. নিত্য নন্দ বলেন, ভারত চুক্তি স্থগিত করতে পারে। পানিচুক্তি স্থগিত করা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল নয়। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে পারে, তবে যুদ্ধ ঘোষণা নয়। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ভারত মানেনি এরকম আজ পর্যন্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও পাঞ্জাবের সাবেক সেচমন্ত্রী মহসিন লেঘারি প্রথম আলোকে জানান, পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদী দেশটির জীবন, জীবিকা এবং প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই এই নদীগুলোর বিকল্প নেই। সিন্ধু পানিচুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাকিস্তানে খরা বাড়বে, মরুভূমি হবে, কৃষি ও সেচ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষক বেকার হয়ে যাবে। কর্মসংস্থানের জন্য সমাজে অস্থিরতা ও হাহাকার বাড়বে। সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হবে।
মহসিন লেঘারির মতে, পাকিস্তানের অবশ্যই আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে যাওয়া উচিত। কারণ, ৬৫ বছরের পুরোনো চুক্তি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক হঠকারী সিদ্ধান্তে ভেস্তে যেতে পারে না।
মহসিন লেঘারি বলেন, সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করতে ভারতের তরফ থেকে নেওয়া এই সিদ্ধান্তটা সত্যিই অমানবিক। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক থামানো যায়; কিন্তু নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, অথবা নদীর সঙ্গে নদীর সম্পর্ক থামানো যায় না।