পাকিস্তানে লাখ লাখ মানুষের ওপর নজরদারি করছে দেশটির সরকার। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ফোনে আঁড়ি পাতার একধরনের প্রযুক্তি। এ ছাড়া চীনের তৈরি প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এটি চীনের বাইরে জনগণের ওপর নজরদারির সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তান সরকারের নজরদারি নেটওয়ার্ক ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পশ্চিমা ও চীনা প্রযুক্তি। এটি ভিন্নমত ও বাক্স্বাধীনতা দমনে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
পাকিস্তানে গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ কঠোর করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর দ্বন্দ্বের সময় থেকে এটি বেড়েছে। সে বছরই অনাস্থা ভোটে পদচ্যুত হন ইমরান। তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ইমরানের দলের বহু নেতা–কর্মীও বন্দী রয়েছেন।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘লফুল ইন্টারসেপ্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (এলআইএমএস) ব্যবহারের মাধ্যমে একসঙ্গে অন্তত ৪০ লাখ মুঠোফোনে নজরদারি করতে পারে। এ ছাড়া ‘ডব্লিউএমএস ২.০’ নামে পরিচিত চীনের তৈরি প্রযুক্তি (ফায়ারওয়াল) ব্যবহার করে একসঙ্গে ২০ লাখের বেশি সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বাধা (ব্লক) দেওয়া যেতে পারে।
দুটি প্রযুক্তি একসঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। এলআইএমএসের মাধ্যমে গোয়েন্দারা ফোনকল নজরদারি করতে পারেন। এ সময়ে ডব্লিউএমএস ২.০ ব্যবহার করে দেশজুড়ে ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ধীরগতির করে দিতে পারেন বা ব্লক করে দিতে পারেন তাঁরা। পাকিস্তানের চারটি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকেও এলআইএমএসের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবির ব্যক্তিগত ফোনকল ইন্টারনেটে ফাঁস হওয়ার পর ২০২৪ সালে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে একটি মামলা করেছিলেন তিনি। ওই মামলার সূত্র ধরেই প্রতিবেদনটি করেছে অ্যামনেস্টি। আদালতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মুঠোফোনে নজরদারি অভিযোগ অস্বীকার করেছিল। এমন প্রযুক্তি তাদের কাছে থাকার তথ্যও অস্বীকার করা হয়।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন নিয়ে পাকিস্তানের প্রযুক্তি, স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয় এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কাছে মন্তব্য চেয়েছিল রয়টার্স। তবে এ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হয়নি তারা।