ক্রিকেট নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। অনেক ক্রিকেট–নির্ভর সিনেমাও এখানে হিট হয়েছে। হিন্দি আউয়াল নাম্বারকে সেই তালিকায় রাখা যায়। ১৯৯০ সালে ইমরান খানকে এই ছবিতে চেয়েছিলেন দেবানন্দ। ইমরান রাজি হননি। পরে আমির খান আউয়াল নাম্বার ছবিতে অভিনয় করে প্রচুর খ্যাতি পান।
ইমরান দেবানন্দকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিকেটের ‘আউয়াল’ (প্রথম বা প্রধান) হবেন বলে। সব অর্থে সেটি হয়েছিলেন তিনি, আউয়াল নাম্বার মুক্তি পাওয়ার দুই বছরের মাথায় দেশের বিশ্বকাপ জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে। অদম্য চরিত্রের ইমরান রাজনীতিতেও আসেন ‘আউয়াল’ হওয়ার বাসনায়। এখনো জনপ্রিয় তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা ‘জনপ্রিয়তা’র চেয়েও বেশি কিছু চায়। সরকারের মেয়াদপূর্তির আগেই ক্ষমতাচ্যুত হতে হয় ইমরানকে। প্রতিপক্ষের সংখ্যাও ক্রমে বাড়িয়ে চলেছেন তিনি। তাঁর তীব্র আক্রোশ ও আক্রমণে দেশটির প্রভাবশালী অনেকে বিব্রত, বিরক্ত। ভূরাজনীতিতেও জটিল এক অবস্থায় টেনে নিয়েছেন নিজেকে। প্রশ্ন উঠেছে এতসব টানাপোড়েন পেরিয়ে ইমরান কি আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন? তাঁকে কি আসতে দেওয়া হবে?
ইমরান জনপ্রিয়; কিন্তু ক্ষমতায় ফিরতে সেটি যথেষ্ট নয়
মাত্র আট মাস কেন্দ্রীয় ‘ক্ষমতা’র বাইরে ইমরান ও তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। এখনো একটি প্রদেশে ক্ষমতায় আছে তারা। সবচেয়ে গুরুত্ববহ পাঞ্জাব প্রদেশে তাদের সমর্থনের জোরেই সরকার টিকে আছে। কিন্তু ইমরান দ্রুত প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরতে মরিয়া। আগাম নির্বাচন চাইছেন। যদিও আগামী আগস্ট পর্যন্ত পার্লামেন্টের মেয়াদ আছে।
ইমরানের আগাম নির্বাচন চাওয়ার কারণ আছে। তাঁর ডাকে বিপুল সমর্থক রাস্তায় নামেন। গত জুলাইয়ে পাঞ্জাবের কিছু উপনির্বাচনে পিটিআই আশাতীত ভালো করেছে। কিন্তু উপনির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচনের ফারাক অনেক। জাতীয় নির্বাচনে ইমরানের বিজয়ী প্রত্যাবর্তন নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে তাঁর পূর্বাপর বিবেচনাহীন নানান কর্মসূচি ও কথায়।
ইমরান ক্ষমতা হারানোর পেছনে সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতনদের দায়ী করছেন। কয়েকজন জেনারেলের নাম ধরে দাবি করেছেন, তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পেছনে তাঁরা দায়ী। এসব অভিযোগে প্রভাবশালী ওই সংস্থায় ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
ইমরানের এসব অভিযোগ পিটিআই সমর্থকদের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে ইন্ধন জুগিয়েছে। কিন্তু সেসবের পক্ষে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করেননি তিনি। তাঁর সর্বশেষ স্ববিরোধিতা দেখা গেছে জাতীয় ও প্রাদেশিক প্রতিনিধিসভা থেকে পদত্যাগের ঘোষণায়। আগাম নির্বাচনের জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহের মাঝেই এ রকম ঘোষণা দিয়ে বসেন তিনি। পদত্যাগ রাজনীতিতে তাঁর দলের প্রভাব কমিয়ে ফেলতে পারে। পদত্যাগের জন্য দলের সবাই প্রস্তুত কি না, সে প্রশ্নও আছে।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে ইমরান পার্লামেন্টারি ব্যবস্থাকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলছেন। অথচ এই ব্যবস্থাকে বদলাতে তিনি ক্ষমতায় থাকার সময় কিছু করেছেন বলে নজির নেই। তাঁর বহুল আলোচিত ‘হাকিকি আজাদি’ (পরিপূর্ণ মুক্তি) লংমার্চও ব্যবহারিক লক্ষ্য হাসিল করতে পারেনি। জনপ্রিয়তার ঘাটতি নিয়েও শাহবাজ শরীফ ও বিলওয়াল ভুট্টোদের জোট ক্ষমতায় টিকে আছে।
জেনারেল মুনিরের ফিরে আসা
পাকিস্তানে ক্ষমতার চৌহদ্দিতে থাকতে প্রভাবশালী সামরিক আমলাতন্ত্রের সঙ্গে রাজনীতিবিদের স্বাস্থ্যকর বোঝাপড়া দরকার হয়। ইমরানের সেটি ছিল। এখন সেখানে ঘাটতি পড়েছে। তাঁর জন্য এটা বেশ করুণ দৃশ্য হয়েছে যে জেনারেল আসিম মুনিরকে তিনি ২০১৯ সালের জুনে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর ডিজির পদ থেকে সরিয়েছিলেন, সেই ব্যক্তি এখন সেনাপ্রধান হলেন।
জেনারেল মুনির একসময় রিয়াদে ডিফেন্স অ্যাটাশে ছিলেন। পাকিস্তানে নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ সৌদ বংশের সঙ্গে আসিম মুনিরের ভালো সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনাও ইমরানের জন্য মাইনাস পয়েন্ট হলো। তবে নতুন সেনাপ্রধান সশস্ত্র বাহিনীকে হয়তো কিছুটা সময় হলেও রাজনীতি-নিরপেক্ষ রাখতে চাইবেন।
পাকিস্তানের ইতিহাসে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে রাজনীতিবিদদের চাপে থাকার দৃষ্টান্ত বিপুল। এর প্রথম ব্যতিক্রম ঘটে জুলফিকার আলী ভুট্টোর আমলে, ১৯৭৩-৭৪ সালে। দ্বিতীয়বার সেটি ঘটল ২০২২ সালে ইমরানের মাধ্যমে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘খান সাহেব’ গত ৮-১০ মাস ব্যাপক চাপে ফেলেছিলেন। জনগণ রাজনীতিবিদদের এ রকম সাহস ও স্পষ্টবাদিতা পছন্দ করে। তবে ইমরানের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে তাঁর মতদ্বৈততা একমাত্র কারণ নয়, একটা উপাদান মাত্র। এ–ও ভুলে যাওয়ার অবকাশ নেই, ইমরান নিজেও সামরিক আমলাতন্ত্রের ‘বাছাই’ ছিলেন। ফলে তাঁর আজকের ক্ষোভ যতটা সত্য, ততটা শক্ত নয় তাঁর নৈতিক অতীত। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এটা অবশ্যই এমন এক চূড়ান্ত মুহূর্ত, যখন ভুলগুলো থেকে শেখার সময় হাজির হয়েছে। রাজনীতিতে তাদের হস্তক্ষেপের পুরোনো অভ্যাস দেশটির সর্বনাশ করেছে। বেলুচিস্তান থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত সবাই জেনারেলদের এ রকম ভূমিকায় বিক্ষুব্ধ। আসিম মুনির জনতার এই ক্ষোভ কমাতে সফল হবেন কি না, সেটি দেখতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
‘শ্রীলঙ্কার ভূত’ পাকিস্তানে
রাজনীতি ও সামরিক ফ্রন্টের পাশাপাশি অর্থনীতিও পাকিস্তানে এ মুহূর্তে বড় এক উদ্বেগের জায়গা। ইমরানকে মোকাবিলায় শরীফ ও ভুট্টোরা এত ব্যস্ত যে অর্থনীতি অগ্রাধিকার তালিকায় আসতে পারছে না। অথচ এ বছরই দুঃসহ এক বন্যা গেল দেশটিতে। তারপরও কুলীন গোষ্ঠী লাভবান হয়, এমন খাতগুলো পেরিয়ে প্রান্তিক অঞ্চলে জাতীয় সম্পদের বণ্টন ও পুনর্বণ্টন সম্ভব নয় দেশটির চলতি রাজনৈতিক কাঠামোতে। বন্যা ও খাদ্যশস্যের উচ্চ দামের কারণে নতুন করে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ২ দশমিক ৫ ভাগ বাড়বে বলে এ বছরের অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে। একই সংস্থার হিসাবে, স্বাধীনতার প্রায় ৭৫ বছর পরও দেশটিতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ দরিদ্র। মূল্যস্ফীতি এ বছরের জুলাইয়ে ২৪ শতাংশ অতিক্রম করেছিল।
দেশটির বৈদেশিক দেনাও হুহু করে বাড়ছে। আগামী তিন বছরে ৭৩ বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে হবে। হাতে আছে মাত্র ৮ বিলিয়নের মতো (৪ ডিসেম্বর, ট্রিবিউন পাকিস্তান)। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ক্রেডিট রেটিংও (ঋণমানে অবস্থান) কমাচ্ছে। ফলে দেশটির আন্তর্জাতিক সহানুভূতি দরকার।
ঠান্ডাযুদ্ধের সঙ্গে দেশের স্বার্থ সমন্বয়ের চ্যালেঞ্জ
দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পাকিস্তান। সেখানকার গত কয়েক মাসের ঘটনাবলিতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-রাশিয়া এবং বিশেষভাবে ভারতের বাড়তি মনোযোগ ছিল। ইমরানের প্রধানমন্ত্রিত্বের শেষ দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভয়াবহ রকমের তিক্ত হয়ে ওঠে। ভুল সময়ে রাশিয়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন তীব্র ঠান্ডাযুদ্ধের মধে৵ পাকিস্তানের এখনকার সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে উভয়কে সন্তুষ্ট রাখতে। এ প্রশ্নে শরিফ ও ভুট্টোদের সরকারে জেনারেল মুনিরের দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়বে প্রবলভাবে। চীনের দিক থেকে পাকিস্তানের উদ্বেগ হলো তার নাগরিকদের ওপর হামলা বাড়ছে। কেবল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরে এসব হামলা সীমিত নেই আর। করাচিতেও হামলা হচ্ছে।
পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক পরিসরের চলতি ঘটনাবলিতে ভারতের প্রচারমাধ্যমের প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করার মতো। ইমরানের বিদায় এবং জেনারেল ফয়েজ হামিদ সেনাপ্রধান না হওয়ার খবর তারা স্বস্তিদায়ক ভাষায় প্রকাশ করেছে। কিন্তু জেনারেল মুনিরের ‘কোরআনে হাফেজ’ যোগ্যতার কথা বারবার লিখে পাঠকের মনোযোগ টানার চেষ্টা চলছে। ভারতের প্রচারমাধ্যম এই তথ্যেও জোর দিচ্ছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ‘জঙ্গি হামলা’র সময় পাকিস্তানে আইএসআইর ডিজি ছিলেন জেনারেল মুনির। এসবের মাধ্যমে ভারতের ভেতর মুনিরকে খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে রাখার একটা প্রচেষ্টা থাকতে পারে।
ভারতে আগামী বছর নির্বাচন। এ রকম সময়ে দেশটির বড় জনগোষ্ঠীকে ভোটবাক্সে এক জায়গায় টানতে পাকিস্তানকেন্দ্রিক উত্তেজনা বেশ কাজে দেয়। জেনারেল মুনিরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সেটি ঠেকানো। গত অক্টোবরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেও রেখেছেন ‘ভারতের দিক থেকে নিজের পূর্ণতার জন্য’ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তান ফিরে পাওয়ার দরকার আছে। এরপর এক মাস না পেরোতেই ২২ নভেম্বর ভারতীয় জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী ঘোষণা দিলেন, ‘পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু কাশ্মীর ফিরিয়ে আনাসহ ভারত সরকারের দেওয়া যেকোনো নির্দেশ কার্যকর করতে প্রস্তুত ভারতীয় সেনাবাহিনী।’
ভারতে নির্বাচনকালে এসব উত্তেজক কথা হয়তো বাড়বে। জেনারেল মুনির দায়িত্ব নিয়ে এক সপ্তাহের কম সময়ে কাশ্মীর সীমান্ত সফরে গিয়ে তার জবাব দিলেন। ৩ ডিসেম্বর সেখানে তাঁর বক্তব্য ছিল ‘যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হলে আমরা মাতৃভূমির প্রতি ইঞ্চি জমি রক্ষা করব, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত।’
ইমরানের কূটনৈতিক হঠকারিতা
বর্তমান অস্বস্তিকর সময়টির জন্য পাকিস্তান কাকে দোষারোপ করবে, এ নিয়ে দেশটিতে তুমুল বিতর্ক আছে। শরিফদের দুর্নীতি অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলেছিল।
ইমরান ক্ষমতায় এসে সে জায়গা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করেন। সফল হয়েছিলেন সামান্য। লোকরঞ্জনবাদের মোহে অনেক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। রপ্তানি আয় বেড়েছে বলে দাবি করলেও রুপির দর পড়ে যাওয়ার কারণেই অঙ্কটা বড় দেখাচ্ছিল কেবল। পাকিস্তানে যে রপ্তানির চেয়ে আমদানি দ্বিগুণ, সেটি কমাতে পারেনি তাঁর সরকার। সব সময় তিনি ভরসা করেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান এবং আইএসআইর সহযোগিতার ওপর। তাঁর বাছাই ডিজি জেনারেল ফয়েজই ইমরানের চোখ-কান-হাত হিসেবে কাজ করছিলেন চারদিকে। তাতে মূল সেনাবাহিনীতে অনেকের আত্মসম্মানে লাগে। ইমরান শেষ পর্যন্ত আইএসআইর সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রক্ষা করতে পারেননি। ফয়েজকেও বিতর্কিত করেছেন। অন্যদিকে আফগানিস্তানে তালেবানকে শর্তহীন সহযোগিতা দিতে গিয়ে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করেছেন। পাকিস্তানের রপ্তানির প্রায় ২০ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। অথচ ইউক্রেন যুদ্ধ লাগতেই ইমরান গেলেন রাশিয়া। এসব কারণেই হয়তো বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানকে নিয়ে অসুখী। এই অসুখী সম্পর্কে বাড়তি চাপ পড়তে পারে ‘টিটিপি’ নামে পরিচিত তেহরিক-ই-তালেবান সংগঠনের সশস্ত্রতা শুরু হলে। মে মাস থেকে তাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চলছিল। এখন আর সেটি নেই। এর অপর মানে, দেশে বাড়তি জীবনহানি এবং আফগান ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়া। টিটিপির সক্রিয়তা খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল করবে।
প্রশ্ন উঠেছে, টিটিপি ঠিক এই সময়ে যুদ্ধবিরতি থেকে সরলো কেন? ইমরান ও জেনারেল ফয়েজ হামিদের সাম্প্রতিক হতাশা সঙ্গে টিটিপির এই ঘোষণার কোনো যোগসূত্র আছে কি না?
সন্ত্রাসী ঘটনা বাড়ছে
ইমরান ক্ষমতায় থাকাকালে টিটিপির সঙ্গে দর–কষাকষিতে রাষ্ট্রের হয়ে নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল ফয়েজ। যুদ্ধ ও যুদ্ধবিরতির মধে৵ গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত টিটিপির হাতে বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় ১০৫ জওয়ান মারা গেছেন।
২০২১ সালের আগস্টে কাবুলে নতুন শক্তি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পাকিস্তানে চোরাগোপ্তা হামলায় মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের মতে এ সংখ্যা চার শ অতিক্রম করেছে (ডন, ২৬ নভেম্বর)। টিটিপিকে নিয়ে নতুন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির কী করবেন, সেটি এ মুহূর্তে এই অঞ্চলে বড় নিরাপত্তা ইস্যু। সামরিক অভিযান চালিয়ে এদের নির্মূল করা অসম্ভব।
আবার তাদের দাবি মতো মাথা নোয়ানোও সহজ নয়। সেটি ক্ষমতাসীন শরিফ ও ভুট্টোদের রাজনীতির বিপক্ষে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রেরও পছন্দ নয় টিটিপিকে ছাড় দেওয়া। পাকিস্তানে টিটিপির বিকাশ দেশটিতে আফগান প্রভাব বাড়াবে। টিটিপির বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযান আফগান সরকারের একাংশকে ক্ষুব্ধ করবে। অথচ আফগান সরকারকে কোনো শত্রুপক্ষের বন্ধু হতে দিতে চায় না পাকিস্তান।
তবে চারপাশের এসব কিছুর মধে৵ ইমরানের দিকেই আরও কিছুদিন পাকিস্তানে সবার মনোযোগ থাকবে। মেঠো লোকরঞ্জনে তিনি দেশটির যেকোনো রাজনীতিবিদের চেয়ে এগিয়ে। একসময় তিনি পাকিস্তানকে ‘রিয়াসাত-ই-মদিনা’ বানানোর কথা বলে ভোট নিয়েছেন। এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ‘হাকিকি আজাদি’র। যদিও বলছেন না, ঠিক কীভাবে সেটি করবেন।
ইমরানের অজানা নয়, তাঁর দেশের সংকটের কারণ ব্রিটিশদের তৈরি রাষ্ট্রকাঠামো, আমলাতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্র। ক্ষমতায় থাকার সময় এসবে তিনি কোনো সংস্কার করেননি।
তাঁর বিরোধীরাও সেই সংস্কারে আগ্রহী নয়। সামরিক আমলাতন্ত্র এই ব্যবস্থার বড় এক সুবিধাভোগী। তারাও চাইবে বর্তমান ‘ব্যবস্থা’ থাকুক। সুতরাং দেশটিতে হাকিকি আজাদির আপাতত সম্ভাবনা কম। বরং সামরিক অভ্যুত্থান এড়িয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে পারলেই রাজনীতিবিদেরা ‘আউয়াল নাম্বার’ হতে পারেন।
আলতাফ পারভেজ: দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক