সংকট কাটিয়ে ওঠার পথে পাকিস্তান

করাচিতে মানি এক্সচেঞ্জ স্টলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এক কিশোর । ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ছবি: রয়টার্স

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে থাকা, রুপির রেকর্ড দরপতন, আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান জ্বালানিসংকটে টালমাটাল অর্থনীতি নিয়ে বিপাকে রয়েছে পাকিস্তান। সঙ্গে রয়েছে রাজনীতি ও সরকার নিয়েও অনিশ্চয়তা। সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে দ্রুত ঋণছাড়ের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রত্যাশা পাকিস্তান সরকারের। ইতিমধ্যে পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতিপত্র দিয়েছে আইএমএফ। এ খবরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশটির মুদ্রার দাম। এতে চলমান রিজার্ভ-সংকট কাটিয়ে ওঠার পথে দেশটি। খবর জিও নিউজের

গত জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে আইএমএফ জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সমন্বিত ৬০০ কোটি ডলারের ঋণসুবিধা নিয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতা হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ১১৭ কোটি ডলার ছাড়ের পথ সুগম হয়। নির্বাহী পর্যায়ের সমঝোতার পর এই অর্থ ছাড় করা হবে।

কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতার পর পাকিস্তান সরকারকে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) দিয়েছে আইএমএফ। এর অর্থ হলো, পাকিস্তানকে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সম্মত রয়েছে সংস্থাটি। ২৯ আগস্ট আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকের পর বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে। ৬০০ কোটি ডলারের ঋণ পেতে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

গত এপ্রিলে ইমরান খানকে হটিয়ে পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) নেতৃত্বে জোট সরকার গঠন করা হয়। নতুন সরকার জ্বালানির ওপর ভর্তুকি কমানোর মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। এরপরই ঋণ পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এখন আইএমএফের দেওয়া এলওআইতে যৌথভাবে সই করবেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতা ইসমাইল ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (এসবিপি) ভারপ্রাপ্ত গভর্নর মুর্তজা সায়েদ।

অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী মিফতা ইসমাইল বলেন, পাকিস্তান সফলভাবে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি এড়াতে পেরেছে।

আইএমএফের সদরদপ্তরের ভবনের গায়ে লোগো। ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র, ২০১৮
ছবি: রয়টার্স

আইএমএফের চিঠি পাওয়ার খবরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পাকিস্তানি রুপির দাম। গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানের আন্তব্যাংক বাজারে ১ ডলার বিক্রি হয়েছে ২১৫ দশমিক ৫০ রুপিতে। আগের দিন প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছিল ২১৮ দশমিক ৮৮ রুপিতে। এ নিয়ে টানা ৯ কার্যদিবস ধরে রুপির চাঙাভাব বজায় রয়েছে। এসবিপির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ জুলাই ২৩২ দশমিক ৯৩ রুপিতে বিক্রি হয়েছিল ১ ডলার। পাকিস্তানের ইতিহাসে ডলারের বিপরীতে এটাই রুপির সর্বোচ্চ দরপতন। অথচ গত ৯ দিনেই রুপির দাম ৯ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

এসবিপির ভারপ্রাপ্ত গভর্নর মুর্তজা সায়েদও অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেন, আইএমএফ ও বন্ধুদেশগুলোর অর্থসহায়তায় পাকিস্তান দ্রুত রিজার্ভ-সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। অন্যদিকে অনেক বিশ্লেষকের মতে, খেলাপি হওয়া থেকে পাকিস্তানকে বাঁচাতে আইএমএফের ঋণ প্রয়োজন। তা না হলে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসা ও রেকর্ড মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে যেতে পারে।

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা খাকান নাজিব বলেন, ‘রিজার্ভের পড়তি ভাব ও ব্যালেন্স অব পেমেন্টের এই সংকট মোকাবিলায় আইএমএফের ঋণ সবচেয়ে ভালো নোঙর হিসেবে কাজ করবে। আশা করছি, আগস্টের শেষে আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক কোনো ঘোষণা আসবে।’