ইমরানের ‘পুতুল সরকারের’ বিরুদ্ধে রাস্তায় বিরোধীরা

ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে বিরোধী দলগুলো
ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে চাপে রেখেছে দেশটির বিরোধী দলগুলো। ইমরান খানের বিরুদ্ধে তারা বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, ভোট কারচুপি ও সেনাবাহিনীকে সমর্থন দেওয়ার কারণেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরান খান ক্ষমতায় এসেছেন।

বিবিসির খবরে জানা যায়, আজ রোববার কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী পেশোয়ারে বিক্ষোভ করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জমায়েতের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই বিক্ষোভ হয়।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অবশ্য বলেছেন, বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলা তুলে নিতে বাধ্য করতেই এ ধরনের বিক্ষোভ চলছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী রাজনীতিতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে। ইমরান খানও নির্বাচনে তাঁর জয়ে কোনো ধরনের সহায়তার কথা অস্বীকার করেছেন। ২০২৩ সালের আগে পাকিস্তানে নির্বাচন হবে না।

১৬ অক্টোবর থেকে দ্য পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) একের পর এক বিক্ষোভ করছে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান প্রদেশে বেশির ভাগ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে প্রথমবারের মতো সমাবেশ করেছে পিডিএম।

পিডিএম পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের রাজনীতিতে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে এবার আন্দোলনে নতুন মাত্রা এসেছে।

নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের ৭৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তার দিকে আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেছেন, সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া ও সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।

সড়ক অবরোধ ও ধরপাকড় সত্ত্বেও গুজরানওয়ালা, করাচি ও কোয়েটায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। ১৯ অক্টোবর করাচিতে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নওয়াজ শরিফের জামাতা সফদর আওয়ানকে তাঁর হোটেলের কক্ষ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আওয়ানকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সরকার ও সেনাবাহিনীর জন্য ছিল বিব্রতকর। কারণ গ্রেপ্তারের সময় আওয়ান তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে হোটেলে ছিলেন।

অভিযানের কয়েক ঘণ্টা আগে এমন কথা ওঠে যে সিন্ধু প্রদেশের পুলিশপ্রধানকে তাঁর বাড়ি থেকে গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আওয়ানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাঁকে জোর করে সই করানো হয়।

এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় সিন্ধু প্রদেশের শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা বিক্ষোভ চলাকালে ছুটির জন্য আবেদন করেন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সিন্ধু প্রদেশের পুলিশপ্রধানকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা ছুটির আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। সেনাপ্রধান গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং আইএসআই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিক্ষোভ সমাবেশের কিছু ঘটনা প্রচার বা প্রকাশ না করতে পাকিস্তান সরকার গণমাধ্যমের ওপর চাপ দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ আছে, বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ লন্ডন থেকে ভিডিওতে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেই টিভি চ্যানেলগুলো লাইভ কাভারেজ বন্ধ করে দিত।

ইমরান খানের দাবি, নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন পার্টি ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ জারদারির দলের দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে সাধারণ মানুষ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, ২০১৮ সালের নির্বাচন পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় নির্বাচন ছিল।

নির্বাচন–পূর্ববর্তী জরিপে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন জনপ্রিয়তায় এগিয়ে ছিল। তবে ইমরান খানের পিটিআই সামান্য ব্যবধানে জয় পায়।

পাকিস্তানে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরোনো। ২০০৮ সালে জনরোষের মুখে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতাচ্যুত হন।