পাকিস্তানে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না, রাজনীতিকদের সেনাপ্রধানের বার্তা

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া
ফাইল ছবি

পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো গত রোববার এক সম্মেলনে জড়ো হয়েছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) ডাকে। সেই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সরকারকে হটাতে জোট গঠন করে আন্দোলনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেই সম্মেলনের আগে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেন বিরোধী দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে। সেখানে সরকারে মন্ত্রীপর্যায়ের নেতারাও ছিলেন। সেই বৈঠকে বিরোধী নেতাদের সুস্পষ্ট বার্তা দেন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। তিনি বলেন, দেশে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। একই বৈঠকে বলা হয়, রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে যেন সেনাবাহিনীকে টেনে আনা না হয়। খবর ডনের।

বিরোধী নেতাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ওই বৈঠকে ছিলেন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া, ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফায়িজ হামিদ। বিরোধী নেতাদের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানের বিরোধী দল মুসলিম লিগের (এন) নেতা ও দেশটির পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরিফ, পিপিপির প্রধান বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি, জামায়াতে ইসলামীর আমির সিরাজুল হকসহ বিভিন্ন বিরোধী দলের ১৫ জন নেতা। ১৬ সেপ্টেম্বর ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী শেখ রশিদ ডনকে ওই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি নিজেও ওই রৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। রশিদ জানান, গিলগিট-বালতিস্তানের (সাবেক নর্দান এরিয়া) সাংবিধানিক মর্যাদার পরিবর্তনের বিষয় আলোচনার জন্য সভা ডাকা হয়। কিন্তু বিরোধী নেতারা এ সভায় রাজনীতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়টি তোলেন।

শেখ রশিদ বলেন, সেনাপ্রধান পরিষ্কারভাবে জানান, সেনাবাহিনী কোনোভাবেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের কোনো প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তারা নেই। নির্বাচিত কোনো সরকার সহযোগিতা চাইলেই তখন তারা সাড়া দেন মাত্র। আর সেটা তারা সব সরকারের সময়ই করেন।

সেনাবাহিনী দেশটির রাজনীতিতে তাদের না জড়ানোর বিষয়ে আগেভাগে বলে দিলেও বিরোধী দলগুলোর নেতারা কিন্তু তা মানেননি। বরং পিপিপির আয়োজিত বিরোধী দলগুলোর রোববারের সম্মেলনে তারা সেনাবাহিনীর নাম না নিয়ে অভিযোগ করেন, বিশেষ শক্তি ইমরান খানকে সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এখন লন্ডনে থাকা পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মুসলিম লিগ নেতা নওয়াজ শরিফ সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেন। নওয়াজ সরাসরি সেনাবাহিনীর সমালোচন করে বলেন, ‘তারা হলো পাকিস্তান রাষ্ট্রের ওপরে থাকা রাষ্ট্র।’

বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনের পর ২৬ দফা দাবি তুলো ধরা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘কর্তৃত্ববাদী শক্তির রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বন্ধ ’ এবং ‘ভবিষ্যতের নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কোনো ধরনের ভূমিকা’ না রাখা।

বিরোধীরা ইমরান খানের সরকারকে হটাতে তিন পর্যায়ের আন্দোলন কর্মসূচিও ঘোষণা করে। এর মধ্যে আছে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানী অভিমুখে লং মার্চ।

পাকিস্তানের রাজনীতি নওয়াজের মুসলিম লিগ এবং বিলাওয়ালের পিপিপি প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু রাজনীতির ঘটনা প্রবাহে এক সময়ের চরম প্রতিপক্ষ এখন এক কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। এই দুই দলের এককাট্টা হওয়া পাকিস্তানের রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকেরা।