পাকিস্তানে ‘গৃহযুদ্ধের’ ভুয়া খবর ভারতে

সম্প্রতি করাচিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিরোধীরা
ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের করাচি শহরে গৃহযুদ্ধ শুরুর ভুয়া খবর চলতি সপ্তাহে ভারতের বেশ কিছু সাইট ও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনের পর করাচিতে গৃহযুদ্ধ-সংক্রান্ত ওই ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে।

পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এক শীর্ষ বিরোধী নেতাকে গ্রেপ্তারে বাধ্য করার জন্য প্রাদেশিক পুলিশপ্রধানকে অপহরণ করেছে সেনারা।

এ খবরটিই লুফে নেয় ভারতের বিভিন্ন সাইট। ভারতীয় সাইটগুলোতে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলা হয়, করাচিতে পুলিশ ও সেনারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সংঘর্ষে করাচি পুলিশের অনেক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। সড়কে ট্যাংক দেখা গেছে।

টুইটারে একটি ভুয়া ভিডিও ঘুরতে থাকে। যাতে কথিত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যায়।

কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো কিছুই সত্যি নয়।

কয়েক দিন আগে করাচিতে গ্যাস লিক থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে
ছবি: রয়টার্স

করাচিতে এক রাজনীতিবিদের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় অনেক পুলিশ ও বিরোধী দলের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হলেও সেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের চিরশত্রু।

তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচারণায় (প্রপাগান্ডা) যুক্ত থাকতে দেখা গেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর দুই দেশ একাধিকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।

গত বছর ফেসবুক পাকিস্তান সেনাবাহিনীসংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্ক ও ভারতপন্থী ভুয়া ওয়েবসাইট ও থিঙ্কট্যাংকের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়। এগুলো ইউরোপে সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করতে কাজ করত।

এবার ভারতের বেশ কিছু খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম পর্যন্ত ভুয়া খবর প্রচার করল।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পদত্যাগ দাবিতে দিন কয়েক আগে করাচিতে বড় ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বিরোধীরা। এই বিক্ষোভ সমাবেশে সরকারবিরোধী হাজারো নেতা-কর্মী-সমর্থক অংশ নেন।

এই বিক্ষোভ সমাবেশে স্লোগান দেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জামাতা সাফদার আওয়ান। পরদিন তিনি গ্রেপ্তার হন। এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় করাচিতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাফদার আওয়ানকে গ্রেপ্তারের পর সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তদন্তের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে পরিস্থিতি শান্ত হতে থাকে।

কিন্তু গত মঙ্গলবার রাতে অপরিচিত একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে করাচিতে পুলিশ ও সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের ভুয়া তথ্য টুইট করা হয়। এই টুইটার অ্যাকাউন্টটি কে চালায়, তা বের করতে পারেনি বিবিসি। প্রথম টুইটের আধঘণ্টা পর ওই অ্যাকাউন্ট থেকে আরও একটি টুইট করা হয়।

এতে বলা হয়, করাচিতে পুলিশ ও সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি চলছে। মূলত তারপরই করাচিতে ‘গৃহযুদ্ধের’ ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ে।

এর মধ্যে করাচিতে গ্যাসের লিক থেকে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ‘গৃহযুদ্ধের’ গুঞ্জন আরও বাড়িয়ে দেয়। এরপরই ভারতের বিভিন্ন ব্যক্তির ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট ও সংবাদমাধ্যমের সাইট এই ঘটনাকে প্রচারের জন্য লুফে নেয়।