বিশ্বকে আরও বাসযোগ্য করতে ভূমিকা রাখছে যেসব রোবট

এআই ফর গুড গ্লোবাল সামিটে একটি রোবটের সঙ্গে কথা বলছেন আইটিইউর মহাসচিব ডোরিন বোগড্যান-মার্টিনসহ অন্যরা। জেনেভা, সুইজারল্যান্ড
ছবি: ইউএন নিউজ

স্বাস্থ্যসেবা থেকে রক সংগীত—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার হচ্ছে না। নতুন এই প্রযুক্তির বিকাশ খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন নতুন দুয়ার। জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) উদ্যোগে দুই দিনের আয়োজনে দেখা গেল এআইয়ের হরেক ‘চমক’।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আইটিইউর সদর দপ্তরে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছিল দুই দিনের ‘এআই ফর গুড গ্লোবাল সামিট ২০২৩’।

আইটিইউ বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে। কেননা, যন্ত্র-সহায়তার যে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ সামনে অপেক্ষা করছে, তা সরকার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের নেতারা বোঝেন। তাই তাঁরা একে অভিন্ন মানবতার কল্যাণে পরিচালিত করার পরিকল্পনা প্রণয়নের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন।

আইটিইউর মহাসচিব ডোরিন বগড্যান-মার্টিন বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘এআইকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের যেমন দায়িত্বশীল ভবিষ্যৎ গড়তে হবে, তেমনি সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমাদের যুক্ত হতে হবে।’

সামাজিক কল্যাণে রোবট

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) পূরণে রোবট ভূমিকা রাখতে পারে। আইটিইউর আয়োজনে উদ্ভাবনী সক্ষমতা আছে, এমন ৫১টি রোবট তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি হিউম্যানোয়েড রোবট, অর্থাৎ যেগুলো অনেকটা মানুষের মতো দেখতে এবং মানুষের মতো আচরণ করতে সক্ষম। আশা করা হচ্ছে, এসব রোবট মানুষের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।
আইটিইউ বলছে, ‘গ্রেস’-এর মতো রোবট যেমন মানুষের স্বাস্থ্যসেবাসহ ভালো রাখতে সহায়তা করতে পারে, তেমনি উন্নত মানের শিক্ষাসেবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে বৈষম্য কমানো, বর্জ্য কমানো, টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তাসহ বৃহত্তর সামাজিক কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারে রোবট।

রোবট সোফিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘের ডেপুটি মহাসচিব আমিনা মোহাম্মদ
ছবি: ইউএন নিউজ

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির হিউম্যানোয়েড রোবট ‘গ্রেস’ মানুষের আবেগ বুঝতে পারে, সে অনুযায়ী সহমর্মিতা (এমপ্যাথি) দেখাতে পারে এবং এক শর বেশি ভাষা বুঝতে পারে।

হংকংভিত্তিক কোম্পানি হ্যানসন রোবোটিকস ও অন্যতম বিকেন্দ্রীকৃত এআই মার্কেটপ্লেস সিংগুলারিটিনেট যৌথভাবে বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্যসেবায় (নার্সিং) সহায়তা দেওয়া এই ‘গ্রেস’রোবট নির্মাণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল, বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবায় সহায়তা দেবে রোবটটি। তবে এটির স্বাস্থ্যসেবার বিস্তৃতি এখন বেড়েছে বলে জানাচ্ছে আইটিইউ।

সোফিয়া ও আমেকার কথা

‘সোফিয়া’ই প্রথম রোবট, যে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) উদ্ভাবনবিষয়ক দূত হিসেবে কাজ করছে। এটি নির্মাণ করেছে হ্যানসন রোবোটিকস। আইটিইউর মতে, এআইয়ের ভবিষ্যতের স্বপ্নের বাস্তবরূপ সোফিয়া।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ার্ড আর্টস নির্মাণ করেছে ‘আমেকা’ নামের একটি রোবট। এই রোবটে এআই এবং এবি (আর্টিফিশিয়াল বডি বা কৃত্রিম শরীর) ব্যবহৃত হয়েছে।

এ রকম আরও নানা ধরনের রোবট তৈরি হচ্ছে, যেগুলো মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে।

টেকসই উন্নয়নে এআই

কিছু রোবট এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো বৃহত্তর অর্থে সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করতে সক্ষম। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিসহ অন্যান্য বিপর্যয় মোকাবিলায় এগুলো ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে মানুষের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতেও কিছু রোবট কাজ করছে। খাদ্যের অপচয় ঠেকিয়ে একধরনের ভারসাম্য তৈরিতে ভূমিকা রাখছে সেগুলো।

বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার কাজে রোবট মানুষের অন্যতম সহযোগী হতে পারে বলে মনে করে আইটিইউ।

সূত্র: ইউএন নিউজ

আরও পড়ুন