তেহরানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ

ইরানের রাজধানী তেহরানের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার রাতে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে জড়ো হন আতঙ্কিত লোকজন
ছবি: এএফপি

ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার রাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা দেশটির নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে থাকা কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর থেকে দেশটিতে নারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের ১৫০টির বেশি শহরে সমাবেশ হয়েছে।

ইরানের রাজধানী তেহরানের শরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে গাড়ি পার্কিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশকে নিরাপত্তাকর্মীদের হামলা থেকে বাঁচতে মাটিতে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে নিরাপত্তাকর্মীদের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।

মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়ানো বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। আমিনির শেষকৃত্য চলাকালে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইরানে বেশ কয়েক বছর এমন অস্থিতিশীলতা দেখা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে শরিফ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দৌড়ে পালাতে দেখা গেছে। কিছুটা দূর থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তাকর্মীরা মোটরসাইকেলে এসে একটি গাড়িতে গুলি করছেন। ওই গাড়িতে থাকা একজন পুরো ঘটনার ভিডিও করছিলেন।

ইরান ইন্টারন্যাশনালের খবর বলছে, নিরাপত্তাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসস্থলেও হামলা চালিয়েছেন। তাঁদের আবাসস্থল লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে।

গত দুই রাত তেহরান ও অন্যান্য শহরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বেড়েছে। নরওয়েভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস বলছে, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ইরানে ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন।

ইরানের সরকার বলছে, বহির্বিশ্বের শত্রুরা এ ধরনের বিক্ষোভে উসকানি দিচ্ছে। দেশটির সরকার বিক্ষোভকারীদের কঠোরভাবে দমন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল দায়ী: খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি গতকাল সোমবার দেশটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে কুর্দি মাসা আমিনির মৃত্যুর পর সৃষ্ট বিক্ষোভের তিন সপ্তাহ পর তিনি এ বিষয়ে প্রথম মন্তব্য করলেন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলছি, এই দাঙ্গা এবং নিরাপত্তাহীনতা যুক্তরাষ্ট্র এবং দখলদার মিথ্যা ইহুদি শাসকের কূটচাল। এ ছাড়া বিদেশে থাকা কিছু ইরানি দেশদ্রোহীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পালিত এজেন্ট এতে যুক্ত রয়েছে।’

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আরও বলেন, ‘তরুণীর মৃত্যু আমাদের সবার হৃদয়ে আঘাত করেছে। কিন্তু এটা স্বাভাবিক নয় যে কিছু মানুষ তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই সড়ককে বিপজ্জনক করে তুলবে, কোরআন শরিফ পোড়াবে, পর্দানশিন নারীদের হিজাব তুলে দেবে, গাড়ি ও মসজিদে আগুন দেবে।’

সামরিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় খামেনি বলেন, পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। তাদের দুর্বল করা মানে অপরাধীদের শক্তিশালী করা। যারা পুলিশকে আক্রমণ করে, তারা অপরাধী, ঠগ ও অপরাধীদের সামনে মানুষকে নিরীহ করে তোলে।

শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, দেশের শত্রুদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। ইরানজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলার তৃতীয় সপ্তাহে গত রোববার এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন তিনি। পুলিশি হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের জন্য ‘বিদেশি শত্রু’দের দায়ী করে আসছে ইরান সরকার।

গতকাল ইরানি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘যে সময়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র আঞ্চলিক ও বৈশ্বিকভাবে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার পথে অর্থনৈতিক জটিলতাগুলো কাটিয়ে উঠছে, তখন শত্রুরা দেশটিকে একঘরে করে দেওয়ার খেলায় মেতেছে। তবে তাদের এ ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।’

গত শুক্রবার ইরান বলেছে, বিক্ষোভে ভূমিকা থাকায় তারা ৯ জন ইউরোপীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে জার্মানি, পোল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং আরও কয়েকটি দেশের নাগরিক আছেন। তাঁদের আটকের ঘটনায় ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।