চীনা উদ্যোগের পাল্টা নতুন এ করিডর

আ ন ম মুনীরুজ্জামান

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দিল্লিতে সংযুক্তির নামে একটি নতুন কৌশলগত ব্যবস্থার ঘোষণা এসেছে। ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর (আইএমইসি বা আইমেক) নামের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনটি মহাদেশকে যুক্ত করা। নতুন এই উদ্যোগে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালি সই করেছে। নতুন এই মহাপরিকল্পনায় যুক্ত দেশগুলো আশা করছে, রেল ও জাহাজপথে যুক্ততার মধ্য দিয়ে পুরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে। এই উদ্যোগে স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলো চাইছে যোগাযোগব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এশিয়ার সঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চল এবং ইউরোপ সরাসরি যুক্ত হবে। 

আইমেকে প্রধানত দুটি আলাদা করিডর থাকবে। প্রথম বা পূর্ব করিডরে ভারতের সঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। উত্তর বা দ্বিতীয় করিডর দিয়ে উপসাগর থেকে সংযুক্তি ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। বৃহদায়তন এই পরিকল্পনার মাধ্যমে আইমেকে যুক্ত পক্ষগুলো তিনটি অঞ্চলের মধ্যে একটি সবুজ ও ডিজিটাল সেতুবন্ধের আশা করছে। 

আইমেক একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত বিপুল পরিবর্তন আনবে। প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে যে এই উদ্যোগের মাধ্যমে এই অঞ্চলের (এশিয়া, উপসাগর এবং ইউরোপ) মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তা ছাড়া এখানে জ্বালানির প্রবাহ বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল কমিউনিকেশন স্থাপন করা সম্ভব হবে। সামগ্রিক পরিকল্পিত অঞ্চলটিতে অবকাঠামোগত যে ঘাটতি, তা পূরণ করে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ভেতর দিয়ে যাবে। ফলে সেখানে যে ধরনের অস্থিতিশীলতা বিরাজ করে, তা এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে তার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন

সরাসরি বলা না হলেও এটা প্রতীয়মান যে আইমেক নামের নতুন উদ্যোগটি মূলত চীনের অঞ্চল ও পথের উদ্যোগের (বিআরআই) বিপরীতে একটি পাল্টা মহাপরিকল্পনা। শুরুতে আপাতত প্রকল্পটি ধারণার পর্যায়ে আছে। এর সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ আগামী দুই মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তৈরি করবে। আইমেকের মতো উদ্যোগ বাস্তবায়নের সঙ্গে বিপুল অর্থের যুক্ততা থাকে। ফলে এখানে অর্থের জোগান কীভাবে হবে, সেটা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই পরিকল্পনায় যুক্ত পক্ষগুলো এখানে অর্থের জোগান দেবে। আবার ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক বা ইআইবি থেকেও অর্থের জোগান আসতে পারে। সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক কৌশলগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি একটি বিপ্লবধর্মী পরিকল্পনা। ভবিষ্যতে আইমেকের সুদূরপ্রসারী নানাবিধ প্রভাব ও প্রতিফলন দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।