ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার পক্ষে প্রস্তাব পাস

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার একটি প্রস্তাব সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে পাস হয়। আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরেছবি: রয়টার্স

জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের দাবিদার হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে পুনর্বিবেচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার সাধারণ পরিষদে এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৩টি সদস্যদেশ রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। আর বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ ৯টি দেশ। ভোটদানে বিরত ছিল ২৫টি দেশ।

সাধারণ পরিষদের এই ভোটের মধ্য দিয়ে অবশ্য জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ পাবে না ফিলিস্তিন। তবে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘে যুক্ত করার পক্ষে এটি একটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা থাকবে। এর আগে গত মাসে নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির একটি প্রস্তাব উঠলে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে তা খারিজ হয়ে যায়।

২০১২ সাল থেকে জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক (সদস্য নয়) হিসেবে মর্যাদা পাচ্ছে ফিলিস্তিন। জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রথমে সংস্থাটির ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হতে হয়। এর পর সেটি সাধারণ পরিষদে পাস হবে। এই প্রস্তাব আবার নিরাপত্তা পরিষদে তোলা হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে সেটি আবার আটকে যেতে পারে।

ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাবে ভোটাভুটির আগে সাধারণ পরিষদে বক্তব্য দেন ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর। আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে
ছবি: রয়টার্স

সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটির সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ছিলেন আল-জাজিরার সাংবাদিক গ্যাব্রিয়েল এলিজোন্ডো। তাঁর মতে, প্রস্তাবের পক্ষে বিপুল ভোট পড়ার ঘটনাটা খুবই উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, ‘যেমনটি আমরা শুনছিলাম, ফিলিস্তিনের পক্ষে ১২০ থেকে ১৩০টির মধ্যে ভোট পড়তে পারে। সর্বোচ্চ তা ১৪০ হতে পারে। তবে ১৪৩টি ভোট পড়াটা একেবারে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।’

ভোটের পর ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, প্রস্তাব পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে এটা দেখা গেছে যে বিশ্ব ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও অধিকারের পক্ষে রয়েছে। একই সঙ্গে তারা ইসরায়েলের দখলদারির বিপক্ষে রয়েছে। অপর দিকে এই ভোটের নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান। তিনি বলেন, জাতিসংঘ এখন ‘একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে’ স্বাগত জানাচ্ছে।

সাধারণ পরিষদে এই ভোটের মাধ্যমে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ না পেলেও অতিরিক্ত কিছু সুবিধা ভোগ করবে ফিলিস্তিন। যেমন চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পরিষদের অধিবেশন কক্ষে অন্য সদস্যদের সঙ্গে আসন পাবে তারা। তবে কোনো প্রস্তাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে না।

ফিলিস্তিনের গাজায় প্রায় সাত মাস ধরে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় ৩৪ হাজার ৯৪৩ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদের জন্য সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি তুলেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।

ভোটের আগে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর সাধারণ পরিষদের সদস্যদেশগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘প্রস্তাবে হ্যাঁ বলাটাই হবে সঠিক কাজ। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে এই অন্ধকার সময়ে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শান্তির পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আগামী বছরগুলোয় আপনি ও আপনার দেশ গর্ব বোধ করবেন।’