মজাদার স্বাদ, সুন্দর রং ও ঘ্রাণ আর পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল খেতে কে না ভালোবাসে। কিন্তু আপনি জানেন কি, কোনো কোনো ফল স্বাদ, রং, ঘ্রাণ বা পুষ্টিগুণের জন্য নয় বরং সেটির অস্বাভাবিক দামের কারণে বিশ্বজুড়ে পরিচিত। পাঠকদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ ফল নিয়ে আজকের এ আয়োজন।
এ ধরনের একেকটি মেলনের দাম প্রায় ২৫ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ লাখ টাকার বেশি। জাপানের হোক্কাইদোর ইউব্যারি অঞ্চলের উর্বর মাটিতে এই মেলন জন্মে। এ কারণে এই মেলনকে ‘ইউব্যারি কিং’ নামেও ডাকা হয়। দারুণ মিষ্টি আর চমৎকার ঘ্রাণের পাশাপাশি এই মেলন খুবই রসাল। জাপানে ইউব্যারি মেলনকে বিলাসিতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। সে দেশে ধনীরা এ মেলন উপহার হিসেবে পাঠান। গ্রিনহাউসে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এই মেলনের চাষ হয়।
এই আঙুরের একটি থোকার দাম প্রায় ৮ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ লাখ ২১ হাজার টাকার বেশি। রুবি রোমান আঙুর চাষ হয় জাপানের ইশিকাওয়া অঞ্চলে (প্রিফেকচার)। বড় আকৃতি, গাঢ় লাল রং এবং কড়া মিষ্টি, এ আঙুরের বড় বৈশিষ্ট্য। রুবি রোমান নাম ও মান নিশ্চিত করতে প্রতিটি আঙুরের থোকা খুব ভালোভাবে যাচাই করা হয়। সাধারণ বাজারে এ আঙুর পাওয়া যায় না। কিনতে হলে যেতে হবে দামি পণ্য পাওয়া যায় এমন বাজারে। অথবা সেগুলো নিলামে বিক্রি হয়।
ডেনসুকে প্রজাতির একটি তরমুজের দাম প্রায় ছয় হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ লাখ ২৯ হাজার টাকার বেশি। এটিও জাপানের হোক্কাইদো অঞ্চলে চাষ হয়। ডেনসুকে তরমুজের বাইরের আবরণ ঘন কালো রঙের এবং ভেতরটা গাঢ় লাল রঙের। তরমুজ কড়া মিষ্টি ও রসাল। সাধারণ তরমুজের চেয়ে অধিক সুঘ্রাণ ও স্বাদযুক্ত। এ তরমুজ খুব একটা পাওয়া যায় না। এ কারণেও তরমুজটির দাম বেশি।
তীব্র ঘ্রাণযুক্ত ফল ডুরিয়ান। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ডুরিয়ানকে ফলের রাজা বলা হয়। ডুরিয়ানের নানা জাত রয়েছে, যার একটি বিজেম। এই জাতটি বেশ বিরল। অন্যান্য জাতের ডুরিয়ান থেকে এর স্বাদও বেশ খানিকটা আলাদা। মাখনের মতো নরম এই ডুরিয়ানের স্বাদ অতটা কটু নয়, পুষ্টিতে ভরপর ও সুন্দর গন্ধ। থাইল্যান্ডের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই কেবল বিজেম ডুরিয়ান জন্মে, পাওয়া যায় শুধু নির্দিষ্ট সময়ে। একটি বিজেম ডুরিয়ান প্রায় আড়াই হাজার ডলারে বিক্রি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন লাখ টাকার বেশি। ফলটির এত দাম হওয়ার অন্যতম একটি কারণ এটি বিরল।
ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের দ্য লস্ট গার্ডেন অব হেলিগানে চাষ হওয়া একেকটি আনারসের দাম দেড় হাজার ডলারের বেশি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার বেশি। রানি ভিক্টোরিয়ার আমলে যেভাবে কাচের তৈরি ঘরে চাষাবাদ হতো, এই আনারস সেই পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয়। কাচের ঘরে খুবই যত্নসহকারে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এই আনারসের চাষ হয়, চাষাবাদ পদ্ধতিও অনন্য। এ কারণেই এটি বিরল ও দামি ফল।
চীনের জিনজিয়ান প্রদেশে উৎপন্ন হয় হামি মেলন। একেকটি হামি মেলনের দাম ২০০ থেকে ৩০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪ হাজার থেকে ৩৬ হাজার টাকা। দারুণ মিষ্টি স্বাদের পাশাপাশি এটি রসাল এবং খেতে কচকচে। বিশেষ পরিবেশে ফলটির চাষ করা হয় যেন এর মিষ্টি স্বাদ ও আকার ঠিক থাকে। বিলাসপণ্য বা উপহার হিসেবেই সাধারণ হামি মেলন বিক্রি হয়।
এটি জাপানের বিশেষ একধরনের আম। আম পাকলে সাধারণত হলুদ হয়। কিন্তু তাইইয়া নো তামাগো আম পাকলে পুরো গা লালচে কমলা রং নেয়। এটির আকৃতিও ঠিক আমের মতো নয়, বরং খানিকটা ডিমের মতো। একেকটি আম ১০০ থেকে ২০০ ডলারে বিক্রি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা। খেতে খুবই মিষ্টি ও রসাল। জাপানের কাগোশিমা অঞ্চলে গ্রিনহাউসের ভেতর নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় এই আম উৎপাদন করা হয়।
কমলাজাতীয় একেকটি সাইট্রাস ‘ডেকোপন’ ফল বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। দারুণ সুগন্ধযুক্ত এ ফলটির ভেতরে বীজ নেই। এটি শিরানুই বা সুমো সাইট্রাস নামেও পরিচিত। ফলটি কিইয়োমি এবং শিরানুই কমলার একটি সংকর জাত। অন্যান্য জাতের কমলার চেয়ে এটি আকারে বড় ও মিষ্টি। বলা হয়, এটি খুব সম্ভবত সবচেয়ে সুগন্ধযুক্ত সাইট্রাস ফল।
একটি সেকাই ইচি আপেলের দাম প্রায় ২১ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। অন্যান্য আপেলের চেয়ে এটি দেখতে বড়, সুন্দর রং এবং খেতে মিষ্টি। জাপানের আওমোরি অঞ্চলে এই আপেলের ফলন হয়। ক্রেতা আকর্ষণের জন্য প্রতিটি আপেল হাতে পলিশ করা হয়। স্বাদ ও মান নিশ্চিত করতে আপেলবাগান অত্যন্ত যত্নে রাখা হয়। ফল পাড়ার সময়ও খুবই সাবধানতা অবলম্বন করা হয়।
একেকটি ফুইউ পারসিমনসের দাম ১০ থেকে ২০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। এটি জাপানে খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। এটি খেতে মিষ্টি। মধুর ঘ্রাণের মতো ঘ্রাণ যুক্ত ও দারুণ স্বাদের। এ ফল খুবই যত্নের সঙ্গে বড় করা হয় এবং যখন একদম পেকে টসটসে হয়, কেবল তখনই সতর্কতার সঙ্গে এটি গাছ থেকে পাড়া হয়।